যত্রতত্র পড়ে রয়েছে আবর্জনা। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।
কথা ছিল ‘আদর্শ স্টেশন’ হওয়ার। কিন্তু পরিচ্ছন্নতার নিরিখে রেলের মার্কশিটেই ডাহা ফেল নৈহাটি জংশন স্টেশন!
সারাদিন মালগাড়ি, লোকাল, এক্সপ্রেস আর মেল ট্রেনের ভিড় সামলানো পূর্ব রেলের শিয়ালদহ মেন লাইনের এই স্টেশন নিয়ে স্বপ্নের জাল বোনা হয়েছে বিস্তর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, তখনই বঙ্কিমচন্দ্রের স্মৃতি বিজড়িত এই স্টেশনে সুরক্ষা থেকে পরিষেবা— সব কিছু ঝাঁ চকচকে করার পরিকল্পনা হয়। ১২ বগির ইএমইউ লোকাল দাঁড়ানোর জন্য ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের মধ্যে এখানেই সবচেয়ে আগে প্ল্যাটফর্ম সম্প্রসারিত হয়। যাত্রীদের জন্য আন্ডারপাস তৈরির কাজও শুরু হয়। ঝকঝকে আলো, ডিজিট্যাল ডিসপ্লে বোর্ড, কম্পিউটারাইজড টিকিট— সব ব্যবস্থাই হয়। কিন্তু কিন্তু কোনও কালেই শতাব্দী প্রাচীন এই স্টেশনের পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেওয়া হয়নি। আর তাতেই লাল কালির দাগ পড়েছে বলে রেল সূত্রের খবর। সাধারণ স্টেশনের মর্যাদা নিয়েও পাশ করতে পারেনি নৈহাটি জংশন। পরিচ্ছন্নতায় ফেল করেছে শিয়ালদহ, দমদম, ব্যান্ডেল এবং বর্ধমান স্টেশনও।
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘রেল বোর্ডের সমীক্ষার কথা আমরা জেনেছি। তবে সম্পূর্ণ রিপোর্ট হাতে এসে পৌঁছয়নি। রিপোর্ট এলেই জেনারেল ম্যানেজারের কাছে জমা দেওয়া হবে। তারপরেই ব্যবস্থা হবে।’’ রাজ্যের দুই রেল জোনের (পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব) সদর দফতরে সোমবারই সেই রিপোর্ট পেশ করার কথা।
পরিচ্ছন্নতার নিরিখে রেলের ওই সমীক্ষার কথা সংবাদমাধ্যমে আসার পরেই অবশ্য নৈহাটি স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম পরিষ্কার রাখার দিকে নজর দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। সাতসকালেই সাফাইকর্মী প্ল্যাটফর্ম সাফসুতরো করার কাজ শুরু করলেও রেল লাইন লাগোয়া নিকাশি ব্যবস্থা যে কে সেই! প্লাস্টিক-থামোর্কলের থালা, বাটি আর স্টেশন থেকে ছুড়ে ফেলা জিনিসপত্রে নর্দমা আটকে উপচে পড়ছে ময়লা জল।
যাত্রীদের অভিযোগ, এখন প্ল্যাটফর্ম সাফসুতরোর দিকে নজর দেওয়া হলেও কয়েক দিন বাদেই তা আবার আগের শোচনীয় অবস্থায় ফিরে যাবে। প্ল্যাটফর্মে পানীয় জলের কলের মুখ চুরি হয়ে যায় মাঝেমধ্যেই। যতক্ষণ স্টেশনের ট্যাঙ্কে জল থাকে, কলগুলি থেকে জল পড়ে নষ্ট হয়। শৌচাগারগুলির দেওয়ালে হলদে ছোপ পড়ে গিয়েছে। দুর্গন্ধে সেখানে দাঁড়ানোই যায় না। সুযোগ বুঝে অনেকেই সুবিধামতো জায়গায় বা রেললাইনে শৌচকর্ম সেরে ফেলেন। নজরদারির কেউ নেই। প্রতিদিন স্টেশনের যাবতীয় আবর্জনা গিয়ে পড়ে রেললাইন লাগোয়া নিকাশি নালাগুলিতেই। বর্ষার সময় নালার জল উপচে রেল লাইনে চলে আসে। বিনা টিকিটের যাত্রী ধরার অভিযানের সঙ্গে রেলের এ বার ভাবা উচিত অন্তত জংশন স্টেশনগুলিকে এমন উন্মুক্ত ও অবাধ না রাখা। তবেই কিছুটা পরিচ্ছন্ন করা সম্ভব বলে মনে করেন যাত্রীরা।
স্টেশন কর্তৃপক্ষের দাবি, যেখানে ৩০ জন সাফাইকর্মী প্রয়োজন, নিয়োগ না হওয়ায় সেখানে ৯ জনকে দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। কেউ ছুটি নিলে তো কথাই নেই। মাটিতে ধস নামায় আন্ডারপাসের কাজ বন্ধ। ধসের জেরে স্টেশন সংলগ্ন নিকাশির সমস্যা হচ্ছে।
স্বাভাবিক ভাবে জংশন স্টেশনের যে ছবিটা চোখে ভাসে, নৈহাটি আগাগোড়াই তার থেকে অন্যরকম। ঘিঞ্জি শিল্পাঞ্চলের মধ্যে এই স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের পাশেই ঘোষপাড়া রোড। ঢিল ছোড়া দূরত্বে নৈহাটি ফেরিঘাট। পাশেই বড় বাজার। স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় লেগে থাকে। অথচ, স্টেশনে ভবঘুরে, অবাঞ্ছিত লোকজন, অবৈধ হকার, ব্যবসাদারদের রমরমা। মাঝে মধ্যে রেল পুলিশ এদের হটাতে অভিযান চালায়। কিন্তু যাত্রীরা মনে করেন, স্টেশন পরিচ্ছন্ন করতে গেলে আগে বহিরাগতদের অবাধ আনাগোনা বন্ধ করা দরকার। চায়ের ভাঁড় বা ঘুগনির বাটি যে রেল লাইনে ফেলতে নেই, তা নিয়ে সচেতনতার কাজ করেন দোকানিরাই। কেউ কেউ আবার পোস্টারও সাঁটিয়ে দেন। কিন্তু ভিড় ঠেলে ডাস্টবিনে কাপ, প্লেট ফেলার থেকে রেললাইনকেই বেছে নেন অনেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy