জনসংযোগ: নানা প্রয়োজনে মানুষের দোরগোড়ায় হাজির হতেন মধুসূদনবাবু। সঙ্গে থাকত প্রিয় সাইকেল। ফাইল চিত্র।
১৯৬৪ সালে যখন প্রথমবার কাউন্সিলর পদের জন্য কংগ্রেসের হয়ে লড়তে নামলেন, নিজেই নিজের জন্য দেওয়াল লিখতেন। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি পরা মানুষটি এলাকা চষে বেড়াতেন ভাঙাচোরা একখানা সাইকেল নিয়ে। বিধায়ক হওয়ার পরেও বদলায়নি অভ্যাস।
সাদামাঠা জীবনাচরণের জন্য সব দলের শ্রদ্ধা-ভালবাসা কুড়িয়েছেন আজীবন। লিভার ক্যানসারে ভুগে ঊনআশি বছর বয়সে মৃত্যু হল নোয়াপাড়ার বিধায়ক মধুসূদন ঘোষের। চা-সিগারেটের নেশাও ছিল না যাঁর, তাঁর লিভার ক্যানসার ধরা পড়ায় বিস্মিত হয়েছিলেন চিকিৎসকেরাও।
১ জুলাই থেকে অসুস্থ ছিলেন মধুবাবু। জ্বর ছিল। ১৭ জুলাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটদানের পরে অসুস্থতা বাড়ায় এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই শুক্রবার ভোর ৫টা নাগাদ মারা যান। চোখ ও দেহ দানের অঙ্গীকার করে গিয়েছিলেন আগেই। বিধানসভা, নিজের এলাকায় নিয়ে যাওয়ার পরে দেহ পাঠানো হয় এসএসকেএমে।
উত্তর ব্যারাকপুরের নবাবগঞ্জে গঙ্গার কাছে গোপাল ভট্টাচার্য লেনে পলেস্তারা খসা আটপৌরে বাড়ির দশ বাই দশ ফুটের ধরে থাকতেন অকৃতদার মধুবাবু। তক্তপোষ, লেখালিখির একটা ছোট্ট টেবিল, কয়েকখানা বই— এই ছিল সঙ্গী। আর থাকতেন বোন নমিতা ঘোষ।
উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার আটবারের কাউন্সিলর মধুসূদনবাবু। চেয়ারম্যান হয়েছেন। ছিলেন বিরোধী নেতাও। জীবনের শেষ ভোটের লড়াই ছিল ২০১৬ সালে। ভোটে জিতে নোয়াপাড়ার বিধায়ক হন। প্রবীণ কংগ্রেসি হিসাবে ইন্দিরা গাঁধী, রাহুল গাঁধীও নামে চিনতেন মধুসূদনবাবুকে।
বিধানসভায় প্রয়াত বিধায়ককে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের মলয় ঘোষ বলেন, ‘‘অজাতশত্রু ছিলেন। এমন মানুষ আর হয় না।’’
সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা তড়িৎ তোপদারের কথায়, ‘‘মধুদা সত্যিকারের রাজনীতিক ছিলেন।’’
১৯৮৫ এবং ১৯৯০ সালে জোড়া পাতা চিহ্ন নিয়ে নির্দল প্রার্থী হিসেবে জিতে কাউন্সিলর হয়েছিলেন মধুবাবু। আগে-পরে কংগ্রেসের টিকিটে সব মিলিয়ে মোট আট বার জেতেন।
গত বিধানসভা নির্বাচনে যখন নোয়াপাড়ায় জিতলেন, তখন গোটা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের সব ক’টি আসনে তৃণমূলের জয় জয়কার। দু’বারের জয়ী বিধায়ক মঞ্জু বসু মধুবাবুর কাছে পরাজিত হওয়ার পরে কানাঘুষো ছিল, কংগ্রেস-সিপিএম জোট নয়, মধুবাবুর ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির কাছে হারতে হল তৃণমূল প্রার্থীকে।
তৃণমূলের পক্ষ থেকে বহুবার দলবদলের বার্তা গিয়েছে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের কাছে। মধুবাবু হেসে উত্তর দিতেন, ‘‘দল বদলে কী হবে? মানুষের জন্য কাজ করি। যে দলেই থাকি, সেটাই করে যাব।’’
‘মানুষের পাশে’ থাকার বার্তাটুকু নিজের যাবতীয় আচরণ দিয়ে আজীবন প্রমাণ রেখে গিয়েছেন মধুবাবু। ২০০৮ সালে মধুবাবু তখন উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার বিরোধী নেতা। চেয়ারম্যান সিপিএমের সমরেন্দ্রমোহন সান্যাল। এক বর্ষার দিনে মধুবাবু সাইকেল চেপে ছাতা মাথায় ঢুকছেন পুরসভায়। সমরেন্দ্রবাবু নামছেন সাদা অ্যাম্বাসাডর থেকে। মধুবাবুকে দেখে পুরপ্রধান বললেন, ‘‘আপনি তো বিরোধী নেতা। গাড়ি নেন না কেন? বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আসেন।’’ ভেজা ছাতার জল ঝাড়তে ঝাড়তে সে দিন মধুবাবুর জবাব ছিল, ‘‘মেহনতি মানুষ তো! গাড়ি চড়ার অভ্যাস নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy