ওঁদের কেউই বনগাঁ শহরের পুরনো বাসিন্দা নন। ভোটারও নন স্থানীয় পুরসভার। কিন্তু কর্মসূত্রে শহরে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন। কেউ বা নিয়মিত যাতায়াত করেন। শহরটাকে নানা ভাবে ভালবেসে ফেলেছেন এঁরা। শহরের সুখ-দুঃখের শরিক বলে মনে করেন নিজেদের। এলাকার জনজীবনের সঙ্গেও মিশিয়ে নিয়েছেন নিজেদের। শহরের সমস্যা, ভাল-মন্দ কিছুই তাঁদের চোখ এড়িয়ে যায় না। ঝাঁ চকচকে নতুন শহর হিসাবে নানা উন্নয়নের খতিয়ানের পাশাপাশি জনজীবনের নানা সমস্যার কথাও তুলে ধরলেন এই মানুষেরা।
বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক গোপাল পোদ্দার। প্রায় এগারো বছর আগে মহকুমা হাসপাতালে এসেছিলেন গোপালবাবু। বর্তমানে তিনি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক। বাড়ি বাগুইআটিতে। শহরের পেয়াদাপাড়ায় ভাড়া থাকেন। সপ্তাহান্তে একবার বাড়ি যান। কিন্তু কর্মসূত্রে বনগাঁর মানুষের সঙ্গে তাঁর জনসংযোগ খুবই নিবিড়। শহরটাকে চেনেন হাতের তালুর মতো। গোপালবাবুর অভিজ্ঞতায়, শহরের প্রতিটি এলাকায় ঢালাই রাস্তা বা পিচের রাস্তা তৈরি হয়েছে। প্রথম যখন এখানে এসেছিলেন, দেখতেন বেশি বৃষ্টি হলেই বিভিন্ন এলাকায় জল জমে যেত। নিকাশি ব্যবস্থা বলতে কার্যত কিছুই ছিল না। সেই তুলনায় নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। শহরের সৌন্দর্য্য বেড়েছে। স্থানীয় ত্রিকোণ পার্ক এলাকাটি রাতে নয়নাভিরাম। নতুন পুরভবন হয়েছে। পুরসভার পক্ষ থেকে শহরের মানুষের কাছে ন্যূনতম খরচে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিতে তৈরি করা হয়েছে স্বাস্থ্যদীপ। মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসা পরিকাঠামো উন্নত হয়েছে। শ্মশানে বসেছে বৈদ্যুতিক চুল্লি।
তবে এখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের মতোই গোপালবাবুও চান, যানজট সমস্যা থেকে মুক্তি। তাঁর কথায়, ‘‘দিনের বেলায় অফিস টাইমে যশোর রোডের যানজট সত্যিই সমস্যার। কী ভাবে, কত তাড়াতাড়ি যানজট সমস্যা মেটানো যায় তা নিয়ে পুরসভা ও রাজ্য চিন্তা-ভাবনা করুক।’’ পুর কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁর আরও দাবি, স্বাস্থ্যদীপে একটি সিটি স্ক্যান মেশিনের ব্যবস্থা করা।
অশোকনগরের বাসিন্দা পার্থ ঘোষ গত আঠারো বছর ধরে বনগাঁ হাইস্কুলে শিক্ষকতা করছেন। ট্রেনে করে বনগাঁ স্টেশনে নেমে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসেন। তাঁর চোখেও বনগাঁ শহরের যানজট সমস্যা ভয়াবহ বলে মনে হয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টার সময়ে বাড়ি থেকে বের হলেও তিনি স্কুলে ঠিক সময়ে পৌঁছতে পারতেন। কিন্তু বনগাঁ শহরের যানজটের কারণে তাঁকে পৌনে ৯টার মধ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়তে হয়। বেআইনি ভ্যানের দাপটও নজর এড়ায়নি পার্থবাবুর। তাঁর পরামর্শ, ‘‘দ্রুত বনগাঁ শহরে একটি উড়ালপুল তৈরি করা প্রয়োজন।’’ আরও একটি বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাঁকে। পার্থবাবুর কথায়, ‘‘বছরের নানা সময়ে স্কুল চলাকালীন বিভিন্ন কারণে উচ্চস্বরে মাইক বাজানো হয় শহরে। ক্লাস করাতে খুবই অসুবিধা হয়। পুরসভা কি এ দিকটায় নজর দিতে পারে না?’’ অশোকনগরের স্থায়ী বাসিন্দা হলেও পার্থবাবু এখন নিজেকে বেশির ভাগটা বনগাঁর মানুষ বলেই মনে করেন। পুরনো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে এখানে একটি সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র তৈরি জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
শহরের কুমুদিনী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ঝুমা ধর নাথ। তাঁর বাড়ি দত্তপুকুরে। ন’বছর ধরে তিনি এখানে শিক্ষকতা করতে আসছেন। তাঁর মনে হয়েছে, রাস্তাঘাট ভাল হয়েছে আগের থেকে। প্রচুর আলো বসেছে। তবে দু’একটা সমস্যা ঝুমাদেবীর চোখ এড়ায়নি। ওই শিক্ষিকার কথায়, ‘‘স্কুলের পাশ দিয়েই চলে গিয়েছে যশোর রোড। ওই সড়কে যানজটের কারণে ছাত্রী ও শিক্ষিকাদের স্কুলে আসতে খুবই অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়। কাছেই বাটার মোড়। সেখানেই যানজট সব থেকে বেশি হয়।’’ ঝুমাদেবী বনগাঁ স্টেশন থেকে অটো বা ভ্যানে করে স্কুলে আসেন। তাঁর মতে, ‘‘শহরের ভ্যানের দাপট আর একটু কম হলে ভাল হত।’’ তবে ভ্যান চালকেরা যাতে রোজগারহীন হয়ে না পড়েন, সেটাও দেখা জরুরি বলে মনে করেন তিনি। ছ’বছর ধরে বনগাঁ হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক সুমন চক্রবর্তী। বাড়ি দমদম ক্যান্টনমেন্টে। এখানে প্রতাপগড়ে ভাড়া থাকেন। সুমনবাবু জানালেন, অতীতে বনগাঁ শহরের অনেক সমস্যা ছিল। এখন অনেক উন্নয়ন চোখে পড়ে। সুমনবাবু বলেন, ‘‘প্রথম যখন এখানে এসেছিলাম, রাস্তাঘাট এত ভাল ছিল না। পানীয় জলের ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। শহরটা আলোয় সেজে উঠেছে।’’ তাঁর মতে, কিছু রাস্তা চওড়া করা প্রয়োজন। ট্রেন থেকে নেমে যে স্টেশন রোড ধরে শহরে প্রবেশ করতে হয়, সেটি চওড়া করা খুবই দরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy