আকাশে মেঘ দেখেও বছর দু’য়েকের শিশুকে নিয়ে মা-বাবা মোটরবাইকে বেরিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন মিনিট পনেরোর রাস্তায় বৃষ্টি শুরুর আগেই গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন। কিন্তু বিধি বাম। যানজটে আটকেই কেটে গেল আধঘণ্টা। শেষে বৃষ্টিতে ভিজেই পৌঁছলেন গন্তব্যে। কেবল ওই দম্পতি নন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর রেলস্টেশন মোড়ে যানজটে পড়ে নিত্য নাজেহাল হতে হচ্ছে এলাকার মানুষকে।
রোজ কাজে বেরিয়ে যানজটে নাকাল ক্ষুব্ধ অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, মোয়ায় খ্যাতি রয়েছে জয়নগরের। এরপর বোধহয় যানজটেও সেই খ্যাতি পাবে জয়নগর। সমস্যা এতটাই প্রকট যে দশ মিনিটের রাস্তা পেরোতে প্রায় ঘণ্টা পার।
মন্দিরবাজারের দক্ষিণ বিষ্ণুপুর থেকে জয়নগর হয়ে রাস্তা বারুইপুর থেকে কলকাতার দিকে চলে গিয়েছে। জয়নগর থেকে বারুইপুর পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার এবং কলকাতা পর্যন্ত প্রায় ৫৫ কিলোমিটার। প্রথম ২৫ কিলোমিটার রাস্তা মাত্র ১৫-২০ ফুট চওড়া। জয়নগর স্টেশন মোড় থেকে বিভিন্ন এলাকায় যাওয়ার জন্য মোড়ে রয়েছে কয়েক’শো অটো, ট্রেকার ও বাস। বলাবাহুল্য, তাদের কোনওটারই নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড নেই। রাস্তার উপরেই লম্বা লাইন করে দাঁড়িয়ে থাকে সমস্ত গাড়ি। ফলে অন্য গাড়ি ঠিকমতো যাতায়াত করতে পারে না। পরিণামে যানজট। জয়নগরের তৃণমূলের বিধায়ক বিশ্বনাথ দাস বলেন, ‘‘শহরকে যানজট মুক্ত করতে কয়েকদিন পরেই পুলিশ প্রশাসনকে নিয়ে সভা ডাকা হয়েছে। পাশাপাশি একটি বাইপাস রাস্তা তৈরির বিষয়েও ভাবনা-চিন্তা চলছে।’’
পুরপ্রধান সুজিত সরখেল বলেন, ‘‘যানজট নিয়ন্ত্রণে পুরসভা থেকে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত করতে না পারায় মানুষকে ভুগতে হচ্ছে। স্বল্প পরিসর রাস্তায় যত্রতত্র বেআইনি অটো-ট্রেকার, বাসের দাপাদাপিও যানজট বাড়াচ্ছে।’’ জয়নগর পুরসভা সূত্রে খবর, শহরকে যানজট মুক্ত করতে কয়েক মাস আগে সভা ডেকে সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটিতে ছিলেন পুরপ্রধান-সহ সমস্ত কাউন্সিলর, বিধায়ক, পূর্ত দফতরের আধিকারিক ও পুলিশের প্রতিনিধি। কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ওই রাস্তায় তালতলা মোড় থেকে পেট্রলপাম্প মোড় পর্যন্ত কোনও বড় লরি দাঁড়াবে না। মিত্রগঞ্জ বাজার মোড়ে সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত লরির মাল লোডিং আনলোডিং হবে না। স্টেশন মোড় থেকে বাসে যাত্রী তোলা যাবে না। সমস্ত অটো এক লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে এবং রথতলা রাস্তায় সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কোনও যান চলাচল করবে না। কমিটির সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জনগণকে জানাতে পুরসভার পক্ষ থেকে র্যালিও করা হয়। কিন্তু তাতে যে বিশেষ কোনও কাজ হয়নি নিত্য যানজটের ভোগান্তিই তার প্রমাণ।
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, যানজট এখানে বড় সমস্যা। সময়মত বাড়ি থেকে বেরিয়েও ট্রেন ধরা যায় না। যানজটের জেরে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পৌঁছতে দেরি হয়। এমনকী রোগী নিয়েও সময়ে হাসপাতালে পৌঁছনো যায় না। কুমারেশ ঘোষ, লালমোহন ভট্টাচার্য প্রমুখ বাসিন্দার কথায়, ‘‘রাস্তা সম্প্রসারণ করা না গেলে এই সমস্যা মিটবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy