হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের দিতে হবে টাটকা দুধ, মাছ। শিশুদের জন্য হবে আলাদা রান্না। এ ছাড়াও, লিভার, সুগার, কিডনি সমস্যার ক্ষেত্রে থাকবে ভিন্ন ভিন্ন পথ্য। রান্না করতে হবে পরিষ্কার বাসনপত্রে।
খাতায়-কলমে এ রকমই নিয়ম রয়েছে। কিন্তু সেগুলি কি আদৌও মানা হচ্ছে? ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল ঘুরে চোখে পড়ল ভিন্ন ছবি।
ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিম্নমানের খাবার সরবরাহের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তার পরেও ছবিটা বদলায়নি বহু জায়গায়। যেমন, ক্যানিং মহকুমা হাসপাতাল।
ঘটনা ২: দুপুর প্রায় সাড়ে ১২টা। খাবারের জন্য লাইন দিয়েছেন রোগীরা। থালা এগিয়ে দিচ্ছেন। হাসপাতালের কর্মীরা প্রশ্ন করছেন, ‘‘কে খাবে? বাচ্চা না বড়?’’ এক মহিলা বললেন, ‘‘বাচ্চা’’। আগে দু’পিস মাংস পড়েছিল পাতে। বাচ্চা খাবে শুনে থালা থেকে এক পিস মাংস তুলে নিলেন ওই কর্মী। ওই মহিলা কাতর ভাবে বললেন, ‘‘একটা ছোট টুকরো দিয়ে বাচ্চা ভাত খাবে কী করে?’’ কোনও উত্তর এল না।
ঘটনা ২: রাত প্রায় ৮টা। বেডের উপরে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন এক রোগী। গজগজ করতে করতে বললেন, ‘‘সামান্য পেঁপে, কুমড়োর তরকারি আর জলের মতো ডাল দিয়ে ভাত খাওয়া যায়?’’
ঘটনা ৩: সুগারের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকা এক রোগী নার্সকে অভিযোগ করছেন, ‘‘সুগারের ডায়েট মানা হচ্ছে না। সব দিন রুটি দেওয়া হয় না। করোলার রস দেওয়া হচ্ছে না।’’ খাবারের পরিমাণ এবং গুণগত মান নিয়ে এমন অভিযোগ ভুরি ভুরি। হাসপাতালের সুপার অর্ঘ্য চৌধুরী বলেন, ‘‘অভিযোগ পাইনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’’ তবে ক্যানিঙের মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্য বলেন, ‘‘ক্যানিং হাসপাতালে রোগীদের যে খাবার দেওয়া হচ্ছে, তার গুণগত মান ঠিক নয় বলে খবর পেয়েছি। অভিযোগ খতিয়ে দেখছি।’’ বিষয়টি তাঁরও কানে গিয়েছে বলে জানিয়েছে রোগীকল্যাণ সমিতির সভাপতি পরেশরাম দাস।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, রোগী-পিছু তিন বেলা খাবারের জন্য ৪৩ টাকা ৮২ পয়সা বরাদ্দ। কিন্তু হাসপাতালে ১৬৬টি শয্যা থাকলেও প্রতি দিন প্রায় ২০০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। সে জন্য সব সময়ে নির্ধারিত খাবার তালিকা পরিমাণ দেওয়া যায় না। হাসপাতালের নার্সিং সুপার মীরা প্রধান বলেন, ‘‘ঠিকাদারকে ঠিকমতো খাবার দেওয়ার জন্য বলা হয়। আমরাও নজর রাখি।’’ সত্য ঘড়ুই নামে ওই ঠিকাদার অবশ্য জানালেন, বরাদ্দের সামান্য টাকায় রোগীকে তিন বেলা খাবার দেওয়া মুশকিল। তার উপরে কয়েক মাসের টাকাও বকেয়া পড়ে। ফলের রস, করোলার রস, শশা দেওয়া হয় না, মেনে নিলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy