Advertisement
E-Paper

টাকা না পেলে ঘরে তো আর হাঁড়ি চড়বে না

৮৩ বছরের বৃদ্ধ কৃষক নিজের জমিতে ধান কাটার জন্য শ্রমিক নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু টাকার অভাবে সেই শ্রমিককে দিয়ে কাজ করাতে পারলেন না কাকদ্বীপ কালীনগরের বাসিন্দা ভীমচরণ ভুঁইঞা।

শান্তশ্রী মজুমদার

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ০২:২৩
বাঁ দিক থেকে মিহির মাইতি, রামপতি দাস ও ভীমচরণ ভুঁইঞা।

বাঁ দিক থেকে মিহির মাইতি, রামপতি দাস ও ভীমচরণ ভুঁইঞা।

৮৩ বছরের বৃদ্ধ কৃষক নিজের জমিতে ধান কাটার জন্য শ্রমিক নিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু টাকার অভাবে সেই শ্রমিককে দিয়ে কাজ করাতে পারলেন না কাকদ্বীপ কালীনগরের বাসিন্দা ভীমচরণ ভুঁইঞা।

তিন দিন ধরে ঘুরে পোস্ট অফিস থেকে টাকা তুলতে পারেননি তিনি। কারণ প্রধান পোস্ট অফিস থেকে টাকা আসেনি। সে কারণে টাকা তোলা বা আমানত ভাঙানোর সুযোগ দেয়নি কাকদ্বীপ সাব পোস্ট অফিস। শুধু ওই কৃষক নন, গৃহবধূ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, এমনকী স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা রাখা গ্রাহকেরাও খালি হাতে ফিরে গিয়েছেন।

ভীমচরণবাবু বলেন, ‘‘এই শাখায় আমার দীর্ঘদিনের বই। টাকার জন্য তিন দিন ধরে ঘুরছি। শ্রমিকদের মাইনে দিতে না পারলে পাকা ধান মাঠেই পড়ে থাকবে।’’ যা অবস্থা তাতে বন্ধুদের থেকে টাকা ধার চাইতে হবে বলে তিনি জানান। তাঁরাও যদি দিতে না পারেন তা হলে সুদে টাকা ধার করে জমির ধান কাটাতে হবে।

স্বামী মদন দাস গিয়েছেন মাঝ সমুদ্রে মাছ ধরতে। হাতে টাকা নেই। গত এক সপ্তাহ ধরে তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে সংসারের হাল ধরতে হচ্ছে রামকৃষ্ণ গ্রাম পঞ্চায়েতের গৃহবধূ রামপতি দাসকে। বুধবার পর্যাপ্ত টাকা ছিল না পোস্ট অফিসে। শুক্রবারও তাঁর আসতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। শনিবারও টাকা না পেয়ে পোস্ট অফিস থেকে ফিরে যেতে হল তাঁকে। রামপতির কথায়, ‘‘ছোট মেয়েটার জ্বর। ঘরে চাল নেই। কোন দিকে যাই। ৬ হাজার টাকার কিষাণ বিকাশ পত্র কেনা ছিল। মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে। সে কারণে ভাঙাতে এসেছিলাম। আজও পেলাম না। ধার না করলে হাঁড়ি চড়বে না বাড়িতে।’’

একই অবস্থা নতুন বাজার এলাকার অশীতিপর বৃদ্ধ অতুল সামন্তের। নতুন বাজারে তাঁর হোগলাপাতার ব্যবসা। যা পুরনো নোট ছিল, তা পোস্ট অফিসে জমা করেছেন গত সপ্তাহে। কিন্তু টাকার জন্য প্রায় চারদিন হল বাজারঘাট বন্ধ। এ দিন সকালে হন্তদন্ত হয়ে এসেছিলেন কাকদ্বীপ সাব পোস্ট অফিসে। কিন্তু টাকা পেলেন না। তাঁর কথায়, ‘‘কটা দিন চালানোর মতো টাকা তো দেবে। এ ভাবে চললে তো খেতে পাব না। আমার ছেলে বেকার। একেবারে ওই ছোট ব্যবসার উপরই সংসার। কবে সমস্যা মিটবে বলতে পারছে না কেউই।’’

এ দিন সকালেই পোস্ট অফিসের দরজার গোড়ায় নোটিস দেওয়া হয়েছে, টাকার অভাব থাকায় সমস্ত রকমের টাকা তোলা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। কিন্তু যাঁরা বুধবার টাকা তুলতে পারেনি। তাঁদের কাছে মাঝখানে রবিবার নিয়ে প্রায় ৬ দিনের ধাক্কা। কারণ রবিবারও পোস্ট অফিস বন্ধ। সোমবারও ডায়মন্ড হারবার থেকে টাকা আনতে বিকেল হয়ে যাবে বলে জানান কাকদ্বীপ শাখার এক ডাককর্মী।

অক্ষয়নগরের মিহির মাইতির স্ত্রী মারা গিয়েছেন। মেয়ের সংসারে থাকেন। আশি ছুঁইছুঁই বৃদ্ধেরও মুখে একরাশ হতাশা। বলেন, ‘‘সব টাকা জমা করে দিলাম। এখন দেড় হাজার টাকা প্রয়োজন। কিন্তু বুধবার থেকে কোনও না কোনও কারণে ফিরে যেতে হয়েছে। এখন কী কবর বুঝতে পারছি না।’’

তবে টাকা না এলে কোনও ভাবেই টাকা দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন পোস্ট অফিসের ডাককর্মী। কয়েকটা টাকা তোলার জন্যও এই মানুষগুলির অপেক্ষায় রয়েছে।

Demonetisation Kakdwip Bank
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy