Advertisement
E-Paper

সর্বক্ষণের চিকিৎসকের দাবি স্থানীয় মানুষের

হাতের কাছে হাসপাতাল। তবু তার উপরে নির্ভর করতে পারেন না মানুষজন।রেখা ব্রহ্মর কথাই ধরা যাক। ক’দিন আগে প্রসব বেদনা উঠেছিল তাঁর। গভীর রাত। খুঁজে পেতে একটি গাড়ি জোগাড় করেন পরিবারের লোকজন।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৭ ০১:৩৩
অবহেলায়: বহু মানুষের ভরসা ভাদুরিয়ার এই হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র

অবহেলায়: বহু মানুষের ভরসা ভাদুরিয়ার এই হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র

হাতের কাছে হাসপাতাল। তবু তার উপরে নির্ভর করতে পারেন না মানুষজন।

রেখা ব্রহ্মর কথাই ধরা যাক। ক’দিন আগে প্রসব বেদনা উঠেছিল তাঁর। গভীর রাত। খুঁজে পেতে একটি গাড়ি জোগাড় করেন পরিবারের লোকজন। রেখাদেবীকে নিয়ে যাওয়া হয় প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে চাঁদপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানে রোগী ভর্তির ব্যবস্থা আছে। কিন্তু মুমূর্ষু রোগীকে রাখা হয় না। রেখাদেবীকে সেখান থেকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে প্রায় কুড়ি কিলোমিটার পথ পেরিয়ে রেখাদেবীকে ভর্তি করা হয় সেখানে। সন্তান প্রসব করেন তিনি। গোটা প্রক্রিয়ায় প্রচুর টাকা বেরিয়ে যায় পরিবারটির। দুর্ভোগও কম পোহাতে হয়নি।

শুধু রেখাদেবী নন, গাইঘাটা ব্লকের শিমুলপুর পঞ্চায়েত এলাকার বহু মানুষের এমন অভিজ্ঞতা। যদিও হাতের কাছেই রয়েছে ভাদুরিয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। সেটি তৈরি হয় ১৯৭৩ সালে। গ্রামবাসীদের দাবি, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যদি অন্তত সন্তান প্রসবের ব্যবস্থাটুকু করা যেত, তা হলেই রাত-বিরেতে এত দুর্ভোগে পড়তে হতো গ্রামের বহু মানুষকে। আলপনা পাণ্ডে নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘এক সময়ে এখানে স্বাভাবিক প্রসব করানো হতো। শয্যা ছিল। বহু দিন হল সে সব উঠে গিয়েছে। আমাদের দাবি, এখানে অন্তত স্বাভাবিক প্রসবের মতো পরিকাঠামোটুকু তৈরি হোক।’’

ভাদুরিয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, চিকিৎসক, নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মী থাকার জন্য কোয়ার্টার তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তা বহু দিন ধরে তালা বন্ধ অবস্থায় পড়ে থেকে থেকে ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভিতর দেখা গেল, গরু-ছাগল চরে বেড়াচ্ছে। গ্রামের মানুষ ভিজে জামা-কাপড় শুকোতে দিয়েছেন। অভিযোগ, সীমানা পাঁচিল না থাকায় রাতে বহিরাগতেরা ভিড় জমায়। নেশার ঠেক বসে। ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানে শুধু এখন বহির্বিভাগে রোগী দেখা হয়। বাসিন্দারা জানালেন, সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টে পর্যন্ত চিকিৎসক থাকেন। তবে রোজ চিকিৎসক পাওয়া যায় না। বিকেলের পরে কোনও মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে এলাকাবাসীর ভরসা হাতুড়ে। না হলে ৭ কিলোমিটার ঠেঙিয়ে চাঁদপাড়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হয়। আর সেখানে কাজ না হলে ভরসা মহকুমা হাসপাতাল। ভাদুরিয়া হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন এলাকার দুই প্রবীণ বাসিন্দা প্রদীপ সিংহ, ধীরেন্দ্রনাথ হীরা। জানালেন, জ্বর, সর্দি-কাশি, পায়খানা, পেটে ব্যথার মতো কিছু রোগের চিকিৎসা এখানে হয়। ওষুধ দেওয়া হয়। এক মহিলা জানালেন, বাইরে থেকেও ওষুধ কিনতে হয়। এখানে সব ধরনের রোগের ওষুধ পাওয়া যায় না। সকলেরই দাবি, স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে যখন থাকার ব্যবস্থা আছে, তখন ২৪ ঘণ্টার জন্য একজন অন্তত চিকিৎসককে এখানে রাখতে হবে।

গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি ধ্যানেশ নারায়ণ গুহ বলেন, ‘‘ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঁচিল দেওয়া থেকে শুরু করে চিকিৎসা পরিকাঠামো বাড়ানোর জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হয়েছে।’’

গাইঘাটার বিএমওএইচ কৌশিক রায়ও আশার কথা শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘চলতি বছরের মধ্যেই ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দশটি শয্যা চালুর পরিকল্পনা আছে স্বাস্থ্য দফতরের। প্রসূতিদের ভর্তি করে স্বাভাবিক প্রসবও শুরু হবে।’’ তিনি জানান, পরিকাঠামো দেখতে শীঘ্রই জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একটি দল আসার কথা।

Doctors Hospital Patient
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy