Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সাগরমেলায় প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ প্রশাসনের

অনেক দিন ধরেই প্লাস্টিক ব্যাগ বন্ধের বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার দেখা গিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা ভাবে প্রচারও চালানো হয়েছে। কিন্তু তা কোনওভাবেই পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। পরিবেশ দূষণ রুখতে এ বার দক্ষিণ ২৪ পরগনায় জেলা প্রশাসন ঠিক করেছেন, গঙ্গাসাগর মেলা ‘প্লাস্টিক ফ্রি জোন’ করা হবে।

এমনই ঝকঝকে থাকবে তো মেলা প্রাঙ্গণ? ছবি: দিলীপ নস্কর।

এমনই ঝকঝকে থাকবে তো মেলা প্রাঙ্গণ? ছবি: দিলীপ নস্কর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাগর শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৬ ০১:৫৭
Share: Save:

অনেক দিন ধরেই প্লাস্টিক ব্যাগ বন্ধের বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার দেখা গিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা ভাবে প্রচারও চালানো হয়েছে। কিন্তু তা কোনওভাবেই পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। পরিবেশ দূষণ রুখতে এ বার দক্ষিণ ২৪ পরগনায় জেলা প্রশাসন ঠিক করেছেন, গঙ্গাসাগর মেলা ‘প্লাস্টিক ফ্রি জোন’ করা হবে।

দিন দশেক আগে সাগর মেলা উপলক্ষে কাকদ্বীপের একটি বাংলোয় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাশাসকের উপস্থিতিতে প্রশাসনের বিভিন্ন আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এ বার গঙ্গাসাগর মেলায় ১ জানুয়ারি থেকে কোনও ব্যবসায়ী বা কোনও ব্যক্তি প্লাস্টিক ব্যবহার করতে পারবেন না। ‘গ্রিন ক্লিন গঙ্গাসাগর মেলা’য় যদি কেউ পলিথিন ব্যবহার করেন, তা হলে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা ছ’মাসের জেল হতে পারে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক পিবি সেলিম।

প্রশাসনের নির্দেশ, প্লাস্টিক ব্যাগের পরিবর্তে কাগজের ঠোঙা, মাটির ভাঁড় ও শালপাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। জানা গিয়েছে, এ জন্য ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যে ১০ কুইন্ট্যাল কাগজের ঠোঙা বানাতে দিয়েছেন। কারণ, এই নির্দেশ শুধু মেলা চলাকালীন জারি হয়েছে তা নয়। মেলার পরেও এই নির্দেশ মেনেই চলতে হবে ব্যবসায়ীদের।

মেলা প্লাস্টিক ফ্রি ও গ্রিন ক্লিন করতে প্রশাসন থেকে কড়া নজরদারি চালানো হবে বলে জানানো হয়েছে। চলছে মাইকে প্রচার। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির লোকজন নিয়ে সভা করা হচ্ছে। এমনকী, কাজে লাগানো হচ্ছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও আশা কর্মীদের। এ ছাড়াও প্রচারে রয়েছেন ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের স্বেচ্ছাসেবকেরা। রয়েছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি।

কিন্তু প্লাস্টিক ফ্রি মেলার বিষয়টি এলাকার বাসিন্দারা জানলেও ভিন রাজ্যে থেকে আসা পুণ্যার্থীরা জানবেন কী করে? তাঁরা প্লাস্টিকের ব্যাগে জিনিস ঠেসে এনে হাজির হলে কী করা হবে?

প্রশাসনের একটি সূচ্র জানাচ্ছে, বিষয়টি তাঁদের চিন্তাতেও আছে। এ জন্য অতিরিক্ত নজরদারির কিছু পদক্ষেপ করা হচ্ছে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখার জন্য এ বার স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা অনেক বাড়ানো হয়েছে। তা ছাড়া, মেলার পূর্ব ও পশ্চিমদিকে বসানো থাকছে দু’টি বিশেষ ভ্যাট। আরও তিন হাজার ভ্যাট তৈরি করা হচ্ছে। আগের বারের চেয়ে বাড়ানো হচ্ছে তিন হাজার শৌচাগারও। ২৪ ঘণ্টা পরিস্কার রাখার জন্য প্রায় ৭৫টি আবর্জনার ঠেলা গাড়ি রাখা হচ্ছে। যত্রতত্র প্লাস্টিক, সব্জি, মল পড়ে থাকতে দেখলেই তা সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার করা হবে। গঙ্গাসাগর পঞ্চায়েতের প্রধান হরিপদ মণ্ডল বলেন, ‘‘সাগর মেলাকে পরিচ্ছন্ন মেলা হিসাবে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা চালাচ্ছি। সে বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলছি।’’

তবে এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা পড়েছেন খানিক বিপাকে। কারণ, বেশি খরচে তাঁদের কাগজের ব্যাগ তৈরি করতে হচ্ছে। অনেক ব্যবসায়ী আবার প্রচুর প্লাস্টিক ব্যাগের অর্ডারও দিয়ে দিয়েছিলেন ইতিমধ্যেই। তাঁদের কথায়, ‘‘পুজোর উপকরণ হিসেবে থাকে নারকেল, নকুলদানা, তিলের নাড়ু, তিলের পেঁড়া, বাদাম ছাপা, সিঁদুর, আলতা, ধূপ, ফুলের মালা, চেরি কাপড় ও ছাট শাঁখ। এগুলি সব সময়ে কাগজের ঠোঙায় দেওয়া যায় না। তা ছাড়া, হালকা জিনিস কাগজের ব্যাগে দেওয়া গেলেও ভারী জিনিস কোনও ভাবেই কাগজের ব্যাগে দেওয়া সম্ভব নয়।’’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হঠাৎ করে এমন ঘোষণা হয়নি। প্রায় সপ্তাহ খানেক ধরে নিয়মিত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। এমনকী, ব্যানার, ফেস্টুন ও মাইকে লাগাতার প্রচার চলছে। ইতিমধ্যে অনেক ব্যবসায়ী নিজেরাই ডাস্টবিন বানিয়ে সেখানে দোকানের আবর্জনা ফেলতে শুরু করেছেন। আর এই নির্দেশ শুধু মেলার জন্য নয়, এরপরেও ওই নির্দেশ বলবৎ থাকবে।

অনেক বাসিন্দাই এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন। তবে সারা ভারত থেকে আসা এত মানুষের ভিড়ে প্রশাসন শেষমেশ কতটা সফল হয় নিজেদের সিদ্ধান্ত বজায় রাখতে— তা নিয়ে চিন্তাও আছে নানা মহলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

plastic bag sagar mela prohibition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE