বোমা-গুলির লড়াইয়ে তখন বাতাস ভারী। প্রবল শব্দে কান পাতা দায়। চলছে চিৎকার-চেঁচামেচি, হুলস্থূল। কে মরবে, কে বাঁচবে— কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।
এরই মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন সুদেশনা রায়। প্রথম বার মা হতে চলেছেন। যন্ত্রণায়, ভয়ে তখন ঘরের মধ্যে বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদছেন সুদেশনা। ও দিকে, গুন্ডারা শাসিয়ে গিয়েছে, ঘর থেকে বেরোলে জানে মেরে দেবে।
অসুস্থ সুদেশনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার তখন কেউ নেই। একটা সময় যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন সুদেশনা। মেয়ের হাত ধরে বসে তখন দিশেহারা দশা মা হেমামালিনীর।
সন্দেশখালির জেলিয়াখালি পঞ্চায়েতের পাখিরালয় গ্রামে বিদ্যাধরী নদীর কাছে বাড়ি হেমামালিনীর। মেয়ের প্রসব আসন্ন বুঝতে পেরে কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। সকাল তখন প্রায় ৮টা। বাইরে দাপাদাপি থামেনি। গুলি-বোমার লড়াইয়ের মাঝে পড়ে প্রাণ বাঁচাতে যে যে দিকে পারে দৌড়চ্ছে। হইহই রই রই করতে করতে তাণ্ডব চালাচ্ছে দুষ্কৃতী-দল। একের পর এক দোকানে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে তারা। ভাঙচুর, লুঠপাট চলছে দোকানে। কেউ কেউ প্রাণ বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপ দিয়েছে।
হেমা মাঝে একবার দরজা ফাঁক করে দেখা চেষ্টা করেছিলেন। যদি একটা নৌকো জোগাড় করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু দরজা ফাঁক করতেই কে যেন কড়া গলায় বলে উঠল, ‘‘গ্রামে যুদ্ধ বেধেছে। চুপ করে ঘরে বসে থাকো। বেরোতে গেলেই বিপদ।’’
শেষমেশ অবশ্য বিপদ এড়াতে পেরেছেন সুদেশনা।
কী ভাবে? পুলিশ শুরুর দিকে গ্রামে ঢুকতে পারেনি। গ্রামবাসীরাই বাধা হয়ে দাঁড়ান। পাখিরালয়ে বিদ্যাধরীর ফেরিঘাটে ছিলেন বসিরহাটের এসডিপিও শ্যামল সামন্ত। সেখানে যাঁরা গ্রামের ভিতর থেকে পালিয়ে আসছিলেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। অভিযোগ নিচ্ছিলেন। সেখানেই শ্যামলবাবুর কানে যায়, গ্রামের মধ্যে এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা প্রসব বেদনায় ছটফট করছেন। সে কথা শুনে পুলিশ পাঠান এসডিপিও। সুদেশনাকে বের করে আনা হয় ঘর থেকে।
কিন্তু ঘাটে তখন নৌকো নেই। তা ছাড়া, কালীনগরের ঘোষপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পৌঁছতে প্রায় দু’আড়াই ঘণ্টা লেগে যাবে। একটু চিন্তা করেন শ্যামলবাবু। পুলিশের লঞ্চে মহিলাকে তুলতে বলেন। এক কনস্টেবলকেও সঙ্গে পাঠান।
লঞ্চে উঠে সুদেশনা বলেন, ‘‘স্বামী কলকাতায় কাজ করেন। ওঁকে ছাড়া আমার আরও দিশেহারা অবস্থা। একটা সময়ে তো মনে হচ্ছিল মরেই যাব। পুলিশকাকুর জন্য প্রাণটা যেমন বাঁচল। পেটের সন্তানটাও রক্ষা পেল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy