প্রতীকী ছবি।
নবম শ্রেণিতে পড়ে মেয়ে। পরিবারের তরফে তার বিয়ের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। শেষ মুহূর্তে জানতে পেরে বিয়ে বন্ধ করেছে পুলিশ। ঘটনাটি হাবড়া থানা এলাকার। কিশোরীকে চাইল্ড লাইনের মারফত পরিবারের কাছে দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ও চাইল্ড লাইন সূত্রের খবর, পনেরো বছরের মেয়েটির বাবা কিছু দিন আগে মারা গিয়েছেন। মা পরিচারিকার কাজ করেন। মেয়ে প্রেমে পড়েছে জানতে পেরে তড়িঘড়ি তার বিয়ে ঠিক করে পরিবার। শুক্রবার রাতে ছিল বিয়ে। বাসিন্দারা জানতে পেরে চাইল্ড লাইনের টোল ফ্রি নম্বর ১০৯৮-এ ফোন করেন। চাইল্ড লাইন থেকে খবর পেয়ে মছলন্দপুর ফাঁড়ির ওসি উৎপল সাহা বিয়ের আসরে হাজির হন।
স্থানীয়রা জানান, ততক্ষণে মণ্ডপ বাঁধা হয়ে গিয়েছিল। রান্না চলছিল। অতিথিরাও আসতে শুরু করেছিলেন। মেয়ের মা, ঠাকুর্দারা পুলিশকে বোঝাতে চেয়েছিলেন, অভাবের সংসারে ধারদেনা করে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। মেয়েরও পড়াশোনায় মন নেই। বিয়েটা এখনই না দিতে পারলে ক্ষতি হয়ে যাবে। পুলিশ সকলকে বোঝায়, আঠারো বছর না হলে মেয়ের বিয়ে দেওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। বিয়ে দিলে পরবর্তী সময়ে মেয়ের নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। সন্তান প্রসবের সময়ে মৃত্যুও হতে পারে।
তারপরেও পরিবারের সদস্যেরা অনুরোধ করতে থাকায় পুলিশ কনের সাজে বসে থাকা কিশোরীকে ফাঁড়িতে নিয়ে আসে। পুলিশকে মেয়েটি জানিয়েছে, তার বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু বড়দের মুখের উপরে কথা বলতে পারেনি। উৎপল বলেন, ‘‘মেয়েটি জানিয়েছে, সে এখন মন দিয়ে লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। আমরা পরিবারটির উপরে নজর রাখছি।’’ পুলিশ জানিয়েছে, মেয়ের মা পুলিশের কাছে মুচলেকা দিয়ে জানিয়েছেন, আঠারো বছরের আগে বিয়ে দেওয়া হবে না।
চাইল্ড লাইনের হাবড়া শাখার সদস্য প্রকাশ দাস বলেন, ‘‘মেয়েটির লেখাপড়া চালানোর জন্য সরকারি সাহায্য করা হবে। মঙ্গলবার কিশোরীকে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির কাছে হাজির করা হবে।’’
অন্য একটি ঘটনায়, বাগদাতেও এক নাবালিকার বিয়ে আটকেছে পুলিশ। পাত্রের বয়সও সবে আঠারো ছুঁয়েছিল। একই স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে দু’জন। বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। বাড়ির লোক রাজি হবে না বুঝতে পেরে অন্য গ্রামে ছেলের দাদুর বাড়িতে গিয়ে উঠেছিল তারা। সেখানেই চলছিল বিয়ের আয়োজন। জানতে পেরে মহকুমাশাসকের নির্দেশে পুলিশ, বিডিও-র প্রতিনিধি, মহকুমা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের প্যারালিগ্যাল ভলান্টিয়াররা গ্রামে গিয়ে বিয়ে বন্ধ করেন। রবিবার বাগদার বাজিতপুরের ঘটনা। চাইল্ড লাইনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে মেয়েটিকে তার বাবার কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
কী ভাবে বন্ধ হল বিয়ে? কিছু দিন আগে সিন্দ্রাণী গ্রামে একটি ভ্রাম্যমাণ স্বাস্থ্যশিবির হয়েছিল। সেখানে ছেলেটি ও মেয়েটি স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে যায়। শিবিরের কর্তৃপক্ষ কোনও ভাবে বিয়ের বিষয়টি জানতে পারেন। বনগাঁর মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায়কে বিষয়টি জানানো হয়। মহকুমাশাসকের নির্দেশে পুলিশ-প্রশাসন পদক্ষেপ করে।
মহকুমা আইনি পরিষেবা কেন্দ্রের সম্পাদক অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘খবর পাওয়ার দু’ঘণ্টার মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করতে পেরেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy