Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
মৃত্যুতেও টনক নড়বে কি?

পিছোল সাঁকো,গাড়ি উল্টে জলে

গাড়ি উল্টে পড়ল নদীতে। রবিবার রাতে স্বরূপনগরের বয়ারঘাটায় এই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এক যুবকের। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে স্বরূপনগরে সোনাই নদীর উপরে বয়ারঘাটায়। পুলিশ জানায়, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা গিয়েছেন চাঁপাপুকুরের বাসিন্দা সঞ্জিত মণ্ডল (২৮)।

বিপজ্জনক: পিছোল এই সাঁকো থেকেই গাড়ি পড়ে মারা গিয়েছেন সঞ্জিত। নিজস্ব চিত্র

বিপজ্জনক: পিছোল এই সাঁকো থেকেই গাড়ি পড়ে মারা গিয়েছেন সঞ্জিত। নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু
স্বরূপনগর শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৭ ০২:০৩
Share: Save:

নিমন্ত্রণ বাড়ি থেকে খাওয়া-দাওয়া সেরে ফিরতে ফিরতে রাত হয়েছিল কনেযাত্রীদের। গাড়িতে হইহই করছিলেন কেউ কেউ। কারও আবার চোখ লেগে এসেছিল ঘুমে।

এরই মধ্যে বিপত্তি।

গাড়ি উল্টে পড়ল নদীতে। রবিবার রাতে স্বরূপনগরের বয়ারঘাটায় এই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এক যুবকের। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে স্বরূপনগরে সোনাই নদীর উপরে বয়ারঘাটায়। পুলিশ জানায়, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা গিয়েছেন চাঁপাপুকুরের বাসিন্দা সঞ্জিত মণ্ডল (২৮)।

যে সাঁকো পেরোতে গিয়ে বিপত্তি, সেটির দু’ধারে রেলিং নেই। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, গত কয়েক মাস ধরে চলছে এই পরিস্থিতি। রেলিং খুলে বেচে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। কিন্তু তারপর থেকে রেলিং বসেনি। এ দিকে, বৃষ্টিতে পিচ্ছিল হয়ে থাকছে কাঠের সাঁকো। মাঝে মধ্যে ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটেছে। তারপরেও হুঁশ ফেরেনি প্রশাসনের।

সাঁকো ভেঙে কংক্রিটের সেতু করার দাবি আছে বাসিন্দাদের। স্বরূপনগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ঝুমা সাহা বলেন, ‘‘এলাকার মানুষের চাহিদার কথা জেলা পরিষদে জানানো হবে। যত দ্রুত সম্ভব সাঁকোর দু’পাশে শক্ত কাঠের রেলিংয়ের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হবে।’’

কী হয়েছিল শনিবার? পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত ১টা নাগাদ শাঁড়াপুল থেকে বৌভাতের নিমন্ত্রণে সেরে চাঁপাপুকুরের দিকে ফিরছিল কনেযাত্রীদের ১০টি গাড়ি। প্রথম ৮টি গাড়ি পেরিয়ে গিয়েছিল। পরের গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে বেশ খানিকটা নীচে, নদীর জলে।

বাকি গাড়িগুলি দাঁড়িয়ে যায়। কনেযাত্রীরাই প্রাথমিক ভাবে উদ্ধারের কাজে হাত লাগান। জলে পড়ে যাওয়া গাড়িতে ছিলেন চালক-সহ ৮ জন। তাঁদের জল থেকে তোলা হয়। রাতেই পুলিশ ক্রেন দিয়ে জল থেকে গাড়ি তোলে।

হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান সঞ্জিত। বাকিদের শাঁড়াপুল গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। ভর্তি করতে হয় পূজা মণ্ডলকে। সে গাইঘাটার গদাধরপুর থেকে দাদুর বাড়িতে এসেছিল।

পূজার কথায়, ‘‘খুব সাজগোজ করেছিলাম। আনন্দে ছিলাম। ফেরার পথে একটু ঘুম এসে গিয়েছিল। হঠাৎ চালকের চিৎকার। গাড়ি উল্টে পড়ল জলে। কোনও মতে গাড়ির বাইরে মুখ বের করে স্বাস নিচ্ছিলাম।’’ সঞ্জিত দাস ছিলেন ওই গাড়িতে। তিনি বলেন, ‘‘বৃষ্টিতে কাঠের সাঁকো পিছোল হয়ে ছিল। সামনের গাড়ি একটু ব্রেক কষে। আমাদের গাড়িব্রেক কষতেই উল্টে গেল। হাত কুড়ি নীচে পড়ি।’’

সেতুর এক পাশে মল্লিকপুর, চিতুরি, বালতি এবং নবাদকাটি-সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম। উল্টো দিকে বয়ারঘাটা, কালীদহরপোতা এবং দত্তপাড়া গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ বয়ারঘাটা কাঠের সাঁকোর উপর দিয়ে যাতায়াত করেন। একে বৃষ্টির ফলে কাঠের উপরে শ্যাওলা জমে পিচ্ছিল হয়েছে। তার উপরে রেলিং না থাকায় বিপদ বেড়েছে। দুর্ঘটনার পরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এলাকার বাসিন্দা গোবিন্দ মণ্ডল, কালীপ্রসাদ সর্দার, লছমি বিবি, সামাদ গায়েনরা বলেন, ‘‘শীতের দিনে জমাট কুয়াশায় কিংবা বর্ষায় শ্যাওলা জমে বিপজ্জনক অবস্থা সেতুর। হাজার হাজার মানুষ, গাড়ি রোজ এ ভাবেই চলাচল করছে। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে শান্তিতে থাকা যায় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Swarupnagar Bridge সাঁকো
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE