বিদ্যুৎ-চুরি: নিজস্ব চিত্র
টাকা বাঁচাতে চলছে হুকিং। আর বাড়ছে বিপদের আশঙ্কা।
ক’দিন আগেই অশোকনগরে পোলট্রির গায়ে জড়ানো হুকিংয়ের তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে দুই নাবালকের। জখম আরও এক শিশু।
সম্প্রতি গাইঘাটার ভাড়াডাঙা এলাকায় এক কিশোরের অপমৃত্যু হয়। যেখানে দেহ মিলেছিল, তার পাশে ছিল একটি মুরগি খামার। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ওই খামারের চারপাশেও হুকিং করে বিদ্যুতের তার জড়ানো ছিল।
পোলট্রি মালিকেরা এ সব ক্ষেত্রে যুক্তি খাড়া করেন, মুরগিকে শিয়াল-কুকুর-ভামের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে হুকিংয়ের তার দিয়ে পোলট্রি ঘিরে রাখা হয়। অশোকনগরের ঘটনায় সে খবর ছিল না গ্রামের লোকের কাছে।
খোলা তার থেকে বিপদের আশঙ্কা থাকে প্রতি মুহূর্তে, সে কথা জেনেও অবশ্য নিজেদের বাড়ি, দোকানেও হুকিং করেন অনেকে। হুকিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমে এর আগে বিস্তর শোরগোলও বেধেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটে হুকিং রুখতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। রাজ্যের নানা প্রান্তে আক্রান্ত হয়েছেন পুলিশ কর্মীরাও। হুকিংয়ের প্রবণতা অবশ্য কমেনি।
সম্প্রতি অশোকনগরের ঘটনার পরে গাইঘাটার পাঁচপোতার পারুইপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, বিদ্যুতের খুঁটি থেকে তার টেনে বাড়িতে হুকিং করা হয়েছে। ওই তারের নীচ দিয়েই যাতায়াত করছেন গাঁয়ের লোক। ঝড়ে পলকা তার ছিঁড়ে মাটিতে পড়ার আশঙ্কা আছে জেনেও কারও কোনও হেলদোল নেই। না তো গ্রামবাসী সচেতন, না বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির কোনও হেলদোল আছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ওই এলাকায় অনেকের বাড়িতে বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ আছে। কিন্তু তাঁরাও হুকিং করে বাড়িতে বিদ্যুৎ নিয়েছেন। গ্রামবাসীদের অনেকেই লুকোছাপা না করে সরাসরি বলে দিলেন, ‘‘বিদ্যুতের দাম দেওয়ার মতো আর্থিক ক্ষমতা আমাদের নেই। তাই হুকিং করা হয়েছে।’’ কিন্তু এ ভাবে হুকিং করলে তো বিপদের আশঙ্কা থাকে? প্রশ্ন শুনে চুপ অনেকেই। গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি ধ্যানেশনারায়ণ গুহ বলেন, ‘‘ওই এলাকায় বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের নিয়ে কর্মশালা করে মানুষকে সচেতন করার কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে।’’
অতীতে বনগাঁর ট্যাংরা কলোনি বদনাম ছিল হুকিংয়ের জন্য। এখন অবশ্য পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, বেশ কিছু বাড়িতে এখনও হুকিং করে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া হয়েছে। কয়েকটি দোকানেও দেখা গেল রাস্তার খুঁটি থেকে তার টেনে নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, হুকিংয়ের তার থেকে আনন্দ বারুই নামে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল এই এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দা চিকিৎসক আশিসকান্তি হীরা বলেন, ‘‘আগের থেকে হুকিংয়ের প্রবণতা কমেছে, এটা ঠিক। তবে কিছু দরিদ্র পরিবার এখনও তা চালিয়ে যাচ্ছেন।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘আর্থিক দুরবস্থার জন্য যেমন অনেকে হুকিং করেন, তেমনই কিছু মানুষ নিজেদের স্বভাবের জন্যই বেআইনি পথে এ ভাবে সংযোগ টানেন।’’
অতীতে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে হলে বিস্তর হ্যাপা ছিল। এখন সহজেই মেলে। তারপরেও হুকিং চলছে। স্থানীয় আরশিংড়ি বাজারে গিয়ে দেখা গেল, হুকিংয়ের তার ঝুলছে। হাবরা অশোকনগরের গ্রামীণ এলাকাতেও একই ছবি দেখা গিয়েছে।
বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি সূত্রে জানা গিয়েছে, মগরাহাট-কাণ্ডের আগে স্থানীয় থানাগুলি বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের হুকিংয়ের অভিযানে সরাসরি সাহায্য করতেন। এখন জেলা পুলিশ সুপারের কাছে আগে আবেদন করতে হয় পুলিশ চেয়ে। পুলিশ সেখাকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে তারপরে সহযোগিতা করে। প্রক্রিয়াটি জটিল। এতে গোপনীয়তাও রাখা মুশকিল হয়।
কোম্পানির এক কর্তা বলেন, ‘‘তা সত্ত্বেও নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। নিয়মিত এফআইআরও করা হয়।’’ তবে মগরাহাট কাণ্ডের পরে হুকিং বিরোধী অভিযানের ধার যে কমেছে, তা গ্রামের মানুষও জেনে গিয়েছেন। বিপদ জেনেও তাই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy