Advertisement
E-Paper

ডাকঘরে টাকা রেখেও বিপত্তি

বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে পথে বসার জোগাড় হয়েছিল। যেটুকু যা অবশিষ্ট ছিল, রেখেছিলেন ডাকঘরে। শুনেছিলেন, ডাকঘরে সঞ্চয়ে লাভ কম হলেও নাকি টাকা মার যাবে না, এটুকু নিশ্চিত। কিন্তু কোথায় কী! এজেন্ট টাকা গায়েব করে দেওয়ায় ফের ফাঁপরে পড়েছেন বহু গ্রাহক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৪২
ক্ষুব্ধ গ্রাহকদের বিক্ষোভ। ছবি নির্মল বসু।

ক্ষুব্ধ গ্রাহকদের বিক্ষোভ। ছবি নির্মল বসু।

বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে পথে বসার জোগাড় হয়েছিল। যেটুকু যা অবশিষ্ট ছিল, রেখেছিলেন ডাকঘরে। শুনেছিলেন, ডাকঘরে সঞ্চয়ে লাভ কম হলেও নাকি টাকা মার যাবে না, এটুকু নিশ্চিত। কিন্তু কোথায় কী! এজেন্ট টাকা গায়েব করে দেওয়ায় ফের ফাঁপরে পড়েছেন বহু গ্রাহক।

ঘটনাটি বসিরহাটের ভ্যাবলা উপ ডাকঘরের। এক মহিলা এজেন্ট কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালানোয় বিপদে পড়েছেন গ্রাহকেরা। বুধবার তাঁরা টাকা ফেরতের দাবিতে ওই ডাকঘরের তিন কর্মীকে বের করে দফতরে তালা ঝুলিয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। দীর্ঘ ক্ষণ কর্মীদের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।

এ বিষয়ে মহকুমা ডাকঘরের আধিকারিকেরা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। মহকুমা ডাকঘর পরিদর্শক সত্যেন্দ্রকুমার ওঝা বলেন, ‘‘টাকা তছরুপের ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। এ দিনের ঘটনার কথা দফতরের পদস্থ কর্তাদের জানানো হয়েছে।’’ কবে, কী ভাবে গ্রাহকেরা টাকা ফেরত পাবেন, সে বিষয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করেননি তিনি। ডাকঘরের তরফে এখনও পুলিশের কাছে অবশ্য ওই এজেন্টের নামে অভিযোগ দায়ের হয়নি। গ্রাহকদেরও কেউ পুলিশের দ্বারস্থ হননি।

মহকুমা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বসিরহাট মহকুমায় ডাকঘরগুলিতে ‘কোর ব্যাঙ্কিং’ চালু হয়। কম্পিউটার প্রশিক্ষণ না দিয়ে কর্মী পাঠানো এবং দিনরাতের বেশির ভাগ সময়ে বিএসএনএল লিঙ্ক না থাকায় পরিষেবায় সমস্যা চলছে তখন থেকেই। কিন্তু সারদার মতো বিভিন্ন বেআইনি লগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে প্রতারিত মানুষজন ইদানীং ডাকঘরের মতো সরকারি ও তুলনায় নিরাপদ জায়গায় টাকা রাখতে শুরু করেছেন।

কিন্তু সেখানেও বিপত্তি।

ভ্যাবলা উপ ডাকঘরে আরডি করা বেশ কিছু গ্রাহকের অভিযোগ, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও গত ৭ মাস ধরে তাঁদের জমানো টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। তারই প্রতিবাদে বুধবার সকালে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সকলে। ডাকঘরের কর্মী দেবাশিস সানা, সৌমেন বিশ্বাস এবং প্রশান্ত মণ্ডলের উপরেই রাগ গিয়ে পড়ে তাঁদের। সকলকে দফতর থেকে বের করে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় নিয়ে আসা হয়। বসিরহাট চৌমাথা-ন্যাজাট রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বেশিরভাগ ছিলেন মহিলা। তাঁদের দাবি, সকলেই ছোটখাট কাজ করে অনেক কষ্টে অল্প অল্প করে টাকা জমাচ্ছিলেন। কিন্তু সেখানেও এই অবস্থা। সাত মাস ধরে ডাকঘরের চক্কর কাটলেও খালি বলা হচ্ছে, তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত শেষ হলে টাকা ফেরত পাবেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি, যত দিন না টাকা ফেরত পাচ্ছেন, বিক্ষোভ-অবস্থান চলবে।

কাউন্সিলর পরিমল মজুমদার, বিশ্বজিৎ রায়রা বলেন, ‘‘এই ডাকঘরে এক মহিলা এজেন্ট কাজ করতেন। বর্তমানে তিনি পলাতক। ওই মহিলার হাত দিয়ে যাঁরা আরডি-তে টাকা জমিয়েছিলেন, তাঁরা প্রতারিত হয়েছেন। আরডি-র কমিশন নিতেন প্রশান্তবাবুরা। অথচ এখন বলছেন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। চিটফান্ড ছেড়ে গরিব মানুষ ডাকঘরের উপরে ভরসা করেও এখন সর্বস্বান্ত হওয়ার জোগাড়।’’

ওই ডাকঘরের দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘এখানে প্রায় ৩ হাজার গ্রাহকের আরডি আছে। তারমধ্যে ১৪০০ গ্রাহকের আরডি-র পাসবইয়ে সিল মারলেও সেই টাকা দফতরে জমা দেননি মিত্রা দাস নামে ওই এজেন্ট। আমরা মাত্র এক শতাংশ কমিশন পাই। বড় অংশ পান এজেন্ট। তিনি গত বছর সেপ্টেম্বর থেকে বেপাত্তা হওয়ার পরে ডিসেম্বর মাসে পুরো ঘটনাটি জানাজানি হয়। পদস্থকর্তাদের জানানোর পরে তদন্ত শুরু হয়েছে। আমাদের পক্ষে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়।’’

বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছোট জিরাফপুর বাড়ি পানু বিশ্বাস বলেন, ‘‘সারদাকে বিশ্বাস করে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছিল। তাই বাড়ির কাছে ডাকঘরে টাকা রাখা শুরু করি। মাসে ৫০০ টাকা করে দিতাম। এখন মেয়াদ শেষ টাকা ফেরত পাচ্ছি না।’’ সীতা রায় বলেন, ‘‘চিটফান্ডে টাকা নষ্টের পরে ডাক মাস্টার ওই মহিলা এজেন্টকে দেখিয়ে তার কাছেই আরডি করতে বলেছিলেন।’’

বসিরহাট মুখ্য ডাকঘরের অধীনে ২১টি উপ ডাকঘর আছে। পরিকাঠামোর উন্নয়ন না করে ‘কোর ব্যাঙ্কিং’ পরিষেবা চালু করে গ্রাহকেরা ঠিক মতো পরিষেবা পাচ্ছেন না বলে সম্প্রতি হিঙ্গলগঞ্জ, হাড়োয়া এবং চাঁপাপুকুর উপ ডাকঘরের আধিকারিককেও ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। এ বার উঠল টাকা তছরুপের অভিযোগ।

প্রশ্ন উঠছে, কী ভাবে দিনের পর দিন পাস বইতে সিল-সই দিয়ে জমানো টাকার অঙ্ক লিখে দেওয়া হলেও ডাককর্মীরা জানতেই পারলেন না যে টাকা জমা পড়ছে না। তা ছাড়া, ওই উপ ডাকঘরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক যখন স্বীকারই করছেন, এক শতাংশ কমিশন তাঁরা পেতেন, তখন গ্রাহকদের টাকা যে সরকারের ঘরে জমা পড়ছে না, তা বুঝতে এত সময় লেগে গেল কেন?

বিক্ষোভকারীদের প্রশ্ন, এ ভাবে চলতে থাকলে সরকারি আর বেসরকারি পরিষেবার মধ্যে তো ফারাক থাকছে না। মানুষ তা হলে কার উপরে ভরসা রাখবেন!

post office money
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy