বিড়ম্বনা: জমেছে খুচরো। চিন্তায় ব্যবসায়ী। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায় বিড়ম্বনা: জমেছে খুচরো। চিন্তায় ব্যবসায়ী। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যাবিড়ম্বনা: জমেছে খুচরো। চিন্তায় ব্যবসায়ী। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
এক বছরে বস্তা দশেক খুচরো টাকা জমেছে হানিফ মণ্ডলের।
কামারহাটিতে বি টি রোড থেকে একটু ঢুকলেই হানিফের বাড়ি। পারিবারিক বেকারি ব্যবসায় লোকসানের মুখ কখনও দেখেননি বলে জানালেন। বললেন, ‘‘এই এলাকায় একচেটিয়া ব্যবসা। সেই অর্থে সমস্যা কিছু ছিল না।’’
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর দেখাদেখি ৭ নভেম্বর রাত ১২টার পর থেকে নিজের হোয়াটস অ্যাপের ডিপি কালো করে রেখেছেন। ঘর-ভর্তি দশ বস্তা কয়েন। ব্যাঙ্ক, ডাকঘর ফিরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু দু’-চার টাকার বিস্কুট, পাঁউরুটি কেনা খুচরো ক্রেতাদের ফেরালে ব্যবসা যে লাটে উঠবে তাই রোজই কয়েন জমে তাঁর ঘরে।
হানিফ মণ্ডল একটা মুখ মাত্র। গোটা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে বেকারির সংখ্যা প্রায় ১৪০০। এর মধ্যে নিজের কারখানা ও খুচরো এবং পাইকারি বিক্রেতার সংখ্যা সাড়ে তিনশো। প্রত্যেকের কাছেই খুচরোর ভাঁড়ার উপচে পড়ছে গত এক বছরে। সবটাই ঘটেছে নোটবন্দির পরে, মনে করেন এই ব্যবসায়ীরা।
ব্যারাকপুর বারাসত রোডে নীলগঞ্জের কাছে অনেকগুলি বেকারি কারখানা ও পাইকারি দোকান। বহু মানুষের রুটি রুজির জোগান হয় এখান থেকে। গত বছর ৮ নভেম্বরের পর থেকে আচমকাই যেন আকাশ ভেঙেছে এঁদের মাথার উপরে। ছোট ব্যবসা। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও ছিল না অনেকের। পাইকারি দোকানে কয়েন নেওয়ার চল বেশি চিরকালই। অতিরিক্ত টাকা দিয়ে কয়েন কেনা হত এক বছর আগেও। এখন উল্টো ছবি। কয়েনের ভারে পাঁউরুটি শিল্প ভারাক্রান্ত।
ভোর রাতেই নিজের ৯টা গাড়িতে বিস্কুট, পাঁউরুটি ঠেসে কাছাকাছি স্টেশন, বাস স্ট্যান্ডের দোকানগুলিতে পাঠান মর্জিনা বিবি। বললেন, ‘‘আগে প্রতি গাড়িতে খুচরো টাকা দিয়ে পাঠাতে হত। এখন গাড়িগুলো এত খুচরো টাকা নিয়ে ফিরে আসে যে আমরা সে সব কোথায় চালাব, বুঝতে পারি না।
অন্য দোকানে, বাজারে নিতে চায় না। এমনকী, বাস-অটোর ভাড়াও এখন এমন করে দিয়েছে যে কয়েন দেওয়ার উপায় নেই।’’ বারাসতের কাছে শেখ মাসুদের বহু পুরনো বেকারি। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কেক, বিস্কুটের দামই এমন যে ২ টাকা, ৫ টাকার কয়েনই ক্রেতারা দেন। একটা টিফিন কেক নিয়ে কেউ ৫০ টাকা দিলে আগে আপত্তি করতাম। এখন দিলেও খুচরো কয়েন ফেরত দিতে চাইলে নিতে চায় না। সরকার আমাদের কথা ভাবল না।’’
বেকারি শিল্প ছাড়াও ছোট ছোট চা বিস্কুটের দোকানগুলিতেও একই সমস্যা। প্রায় প্রতিটি এলাকায় চায়ের দোকানে ঘুরলে দেখা যাবে, বিস্কুটের পাশে বয়াম-ভর্তি খুচরো পয়সা। আগে খুচরো না থাকলে দোকানে লজেন্স দেওয়ার চল হয়েছিল। এখন খুচরো ফেরত দিতে পারলে
বাঁচেন দোকানদারেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy