Advertisement
E-Paper

খুচরো নিয়ে বাজারে সারতে গিয়েও ফিরতে হচ্ছে খালি হাতেই

মাস কয়েক আগেও ছবিটা মোটেও এমন ছিল না। ৬ টাকার কেনাকাটা সেরে ১০০ টাকার নোট হাতে ধরাতে রীতিমতো কেঁপে যেতেন ক্রেতা। এমন ক্ষেত্রে দোকানিদের মুখ শোনা তো ছিল রুটিন ব্যাপার।

সীমান্ত মৈত্র ও নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৭ ০৮:২০
বিড়ম্বনা: রাশি রাশি খুচরো। —নিজস্ব চিত্র।

বিড়ম্বনা: রাশি রাশি খুচরো। —নিজস্ব চিত্র।

৬ টাকার একটা সিগারেট কিনে ভদ্রলোক সভয়ে একশো টাকার নোট এগিয়ে দিলেন দোকানির দিকে। মুখে ক্যাবলা হাসি, ‘‘একদম খুচরো নেই, দেখুন না একটু।’’ মুখের কথা মুখে থেকে গেল। ছোঁ মেরে একশো টাকার নোটটা হাতে নিয়ে দোকানি বললেন, ‘‘আরে দিন না, কোনও ব্যাপার নয়।’’

মাস কয়েক আগেও ছবিটা মোটেও এমন ছিল না। ৬ টাকার কেনাকাটা সেরে ১০০ টাকার নোট হাতে ধরাতে রীতিমতো কেঁপে যেতেন ক্রেতা। এমন ক্ষেত্রে দোকানিদের মুখ শোনা তো ছিল রুটিন ব্যাপার।

কিন্তু হালে পরিস্থিতি বদলেছে। খুচরোর আকাল থেকে এখন খুচরোর বন্যায় ভাসছে গোটা রাজ্য। কিছু ব্যাঙ্ক খুচরো নিতে না চাওয়ায় দোকানিদের মাথায় হাত। সেই আঁচ পোহাতে হচ্ছে ক্রেতাদেরও।

সমস্যা মেটাতে বুধবার বনগাঁর মহকুমাশাসক সুদীপ মুখোপাধ্যায় নিজের দফতরে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেছেন। সেখানে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি ও মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সুদীপবাবু বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কগুলিকে বলা হয়েছে খুচরো পয়সা জমা নেওয়ার জন্য। পাশাপাশি ব্যাঙ্ক থেকেও খুচরো পয়সা গ্রাহকদের দিলে তা নিতে হবে।’’ প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, ব্যাঙ্ক যদি ১০০ টাকার কয়েন জমা নেয়, তা হলে ৫০ টাকার খুচরো পয়সা গ্রাহকদের দেওয়া হবে।

বসিরহাটের এসডিপিও শ্যামল সামন্ত বলেন, ‘‘আমরা আগে একবার খুচরো নিয়ে প্রচার করেছি। দরকারে খুচরো আদান-প্রদানের জন্য ফের পুলিশের তরফে প্রচার করা হবে।’’

দিন কয়েক আগে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর বনগাঁর এসডিপিও অনিল রায়ের কাছে খুচরোর সমস্যা মেটাতে স্মারকলিপি জমা দেয়। সংগঠনের পক্ষে দেবাশিস রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘পুলিশ প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছে, খুচরো সমস্যা মেটাতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্য প্রচার কর্মসূচি গ্রহণ করতে।’’

পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, এক-দু’টাকার কয়েন বাতিল হয়ে গিয়েছে— এমন প্রচার করেছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। ফলে পরিস্থিতি আরও ঘোরাল হয়েছে। কিন্তু খুচরো পয়সা বাতিল নিয়ে কেন্দ্র কোনও ঘোষণা করেনি। কেউ যদি খুচরো পয়সা না নিতে চান, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপও করা হতে পারে।

বসিরহাটে খুচরোর সমস্যা মেটাতে কখনও ছুটতে হচ্ছে পুলিশের কাছে। কেউ যাচ্ছেন পুরকর্মীদের কাছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসনের উদ্যোগে খুচরো নেওয়ার জন্য মাইকে প্রচার শুরু হয়েছে।

বনগাঁ হাইস্কুলে ক্যান্টিন চালান সুশান্ত নাথ। স্কুলের পড়ুয়ারা তাঁর কাছ থেকে খুচরো পয়সা দিয়ে খাবার নিয়ে খায়। তাঁর কথায়, ‘‘মুরগির মাংস, চা, প্যাকেট দুধ-সহ নানা খাবার বাজারে কিনতে গেলে সমস্যা হচ্ছে। কেউ খুচরো নিতে চাইছেন না।’’ অথচ পড়ুয়াদের কাছ থেকে খুচরো পয়সাই নিতে হয়। এ ভাবে প্রায় ১৭ হাজার টাকার খুচরো জমে গিয়েছে তাঁর।

বসিরহাটের বাসিন্দা স্বরাজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘১-২ টাকার কয়েন নিয়ে সকাল থেকে ঘুরছি, কোনও দোকান নিতে চাইছে না। বাজার করতে পারছি না।’’

বনগাঁ চেম্বার অব কমার্স এর সম্পাদক বিনয় সিংহ বলেন, ‘‘ছ’মাস ধরে ব্যাঙ্ক খুচরো পয়সা জমা না নেওয়ার কারণে সমস্যা বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের কাছে বস্তা বস্তা খুচরো জমে গিয়েছে। ব্যাঙ্ক যদি খুচরো জমা নেয় তা হলে সমস্যা মিটবে।’’

বাড়িতে মহিলারা ঘটে এতদিন খুচরো জমাতেন। এমনই এক মহিলার কথায়, ‘‘খুচরো চলছে না দেখে ঘট ভেঙে ওই পয়সা চালাতে গিয়েছিলাম। এখন দেখছি দোকানদার নিচ্ছে না। কী করব বুঝতে পারছি না।’’

Coins খুচরো বসিরহাট Basirhat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy