অপেক্ষা: শ্যামনগর স্টেশনে ছবিটি তুলেছেন সজল চট্টোপাধ্যায়
স্টেশনে ট্রেন আসে, ট্রেন যায়। দিন গড়ায়, সন্ধ্যা নামে। ওঁরাও আসেন। আবছা জায়গা দেখে ফাঁকা বেঞ্চে বসেন। শরীরী ভাষায় খদ্দেরদের ডাকেন। ধারে কাছে লজ আছে এক-আধটা। আর আছে বন্ধ কারখানার কুলি লাইনের পরিত্যক্ত কোয়ার্টার।
স্টেশনের পাশেই কালী মন্দির। ফেরিঘাটও ঢিল ছোড়া দূরত্বে। সব সময়ে লোক চলাচল করছে এই স্টেশন দিয়ে। রাতের দিকে একটু ফাঁকা হলে স্টেশনের মধ্যেই দোকানের গলি-ঘুপচিতে শরীর ছোঁয়ার বিনিময়ে দু’একশো টাকা রোজগার হয়। শ্যামনগর স্টেশনে এই ব্যবসা বহু দিনের।
পর্তুগিজদের সময়ে, পরবর্তীতে ব্রিটিশের শাসন কালেও শ্যামনগরের আশেপাশের কয়েকটি মন্দিরে দেবদাসী প্রথার কথা শোনা যায় ইতিহাসে। কিন্তু স্টেশনে এই ব্যবসার বহর হালফিলে বেড়েছে। নিত্যযাত্রীদের অনেকের বক্তব্য, স্টেশন থেকে খদ্দের ধরে কাছাকাছি লজ বা ভাড়া করা ঘরগুলিতে দেহব্যবসা চলত এক সময়ে। ইদানীং দোকানের পাশে অন্ধকার ফাঁকা জায়গাতেও সংক্ষেপে ‘কাজ’ সারছে অনেকে। অধিকাংশই মাঝবয়সী যৌনকর্মী। খদ্দেররা বিভিন্ন বয়সের। স্কুল পড়ুয়া থেকে বৃদ্ধ।
শ্যামনগরের স্টেশনের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে রেল পুলিশের আউটপোস্ট। গোটা স্টেশনে রেল কর্মীদের নজরদারিও থাকে। কিন্তু দেখেও না দেখার ভান। এই ব্যবসায় আর পাঁচজন হকারের মতো রেলপুলিশকে মাসোহারার ব্যবস্থা আছে বলে অভিযোগ শোনা যায় নানা মহলে।
আরও পড়ুন: শিশুকে ধর্ষণ, খুনে ধৃত ৩
সস্তা প্রসাধনের মোড়কে নিজেকে ঢেকে এই ব্যবসায় প্রায় কুড়ি বছর পার করা সাহানা নাথ, রুমিয়া দাসদের (নাম পরিবর্তিত) বক্তব্য, ‘‘পারিশ্রমিক না দিয়ে চলে যাওয়া লোকের সংখ্যা প্রচুর। খোলা রাস্তায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করলেও কেউ আমাদের পাশে দাঁড়াবে না। উল্টে চরিত্রের দিকে আঙুল তুলবে। স্টেশনটা অনেক নিরাপদ আমাদের কাছে।’’ কিন্তু দেশের ‘ইমমর্যাল ট্র্যাফিক অ্যাক্টে’ স্টেশনে দেহ ব্যবসা মোটেই বৈধ নয়। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় নোয়াপাড়ার বিধায়ক মধুসূদন ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘এই বিষয়টা নিয়ে আমরা আগেও রেল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। চিঠিপত্র তৈরি করছি। অনেকের রুটি-রুজির প্রশ্ন জড়িয়ে আছে যেমন, তেমনই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার।’’
কিন্তু বন্ধ করতে চাইলেই কি আর করা যায়? স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী বিষ্ণুপ্রিয়া ঘোষ বলেন, ‘‘রোজগারের জন্য এঁরা স্টেশনকে বেছে নিয়েছেন। কিন্তু জায়গাটা যে এই কাজের জন্য নয়, তা বোঝানোর দায়টা প্রশাসনের।’’
শিয়ালদহের রেল পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্র বলেন, ‘‘বিষয়টি আমরা নজরে রাখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy