Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Railway Track at Hingalganj

দু’টি নদী পেরিয়ে আদৌ পৌঁছবে কি রেললাইন, প্রশ্ন হিঙ্গলগঞ্জে

২০০৯ সালে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন হাসনাবাদ থেকে হিঙ্গলগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার রেলপথ তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে বছরই হিঙ্গলগঞ্জ চত্বরে জমি মাপজোক শুরু হয়।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নবেন্দু ঘোষ 
হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:৩৫
Share: Save:

বছর পনেরো আগে হাসনাবাদ থেকে হিঙ্গলগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথ চালু করার কথা ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেললাইন পাতার জন্য এলাকায় মাপজোকও শুরু হয়েছিল। আশায় বুধ বেঁধেছিলেন সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ। কিন্তু তারপরে এত বছরে কাজ এগোয়নি। সম্প্রতি রাজ্য জুড়ে বেশ কিছু রেলপথ তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণে সাহায্য করার আবেদন জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। সেই চিঠিতে রয়েছে হাসনাবাদ-হিঙ্গলগঞ্জ রেললাইনের প্রসঙ্গও। রেললাইনৃ তৈরির সম্ভাবনা আছে বলে ফের মনে করছেন হিঙ্গলগঞ্জের বহু মানুষ। তবে দু’টি নদী পেরিয়ে আদৌ এই পথে রেলপথ নির্মাণ সম্ভব কি না, সেই প্রশ্নও তুলছেন অনেকে।

২০০৯ সালে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন হাসনাবাদ থেকে হিঙ্গলগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার রেলপথ তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে বছরই হিঙ্গলগঞ্জ চত্বরে জমি মাপজোক শুরু হয়। হাসনাবাদ-বারাসাত শাখার শেষ স্টেশন হাসনাবাদ। এই স্টেশন দিয়ে প্রতি দিন কয়েক হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। বেশিরভাগই হিঙ্গলগঞ্জ এবং হাসনাবাদ ব্লকের বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দা। ট্রেন থেকে নেমে দীর্ঘ পথ পেরিয়ে বাড়ি ফিরতে হয় তাঁদের। হাসনাবাদ থেকে রেলপথ হিঙ্গলগঞ্জ পর্যন্ত গেলে বহু মানুষই উপকৃত হবেন।

হিঙ্গলগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ বলেন, “সে সময়ে শুনেছিলাম বরুণহাট, রামেশ্বরপুর, লাউতলা আর হিঙ্গলগঞ্জে চারটি স্টেশন হবে। হিঙ্গলগঞ্জ স্টেশনটি হবে হিঙ্গলগঞ্জ কলেজের পিছনের মাঠে। কিন্তু এত বছরেও কিছুই হল না। রেলপথ চালু হলে এলাকার ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। সরাসরি শিয়ালদা থেকে মালপত্র নিয়ে আসতে পারবেন। পরিবহণ খরচ কমবে। গ্রাম থেকে শহরে আনাজ, মাছ-সহ বিভিন্ন জিনিস নিয়ে যেতেও সুবিধা হবে।” হিঙ্গলগঞ্জ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ শেখ কামালউদ্দিন বলেন, “রেলপথ হলে এলাকার পড়ুয়াদের শহরে পড়াশোনা করতে যেতে সুবিধা হবে। দূর থেকে আমাদের কলেজে পড়ুয়ারা পড়তে আসতে পারবে।”

তবে এই পথেই রয়েছে গৌড়েশ্বর ও কাটাখালি— দু’টি নদী। রেললাইন হিঙ্গলগঞ্জে নিয়ে যেতে হলে দু’টি নদীর উপরেই সেতু নির্মাণ করতে হবে। মাত্র ১৮ কিলোমিটার রেল লাইনের জন্য দু’টি নদীর উপরে সেতু তৈরির বিপুল খরচ রেলমন্ত্রক শেষ পর্যন্ত আদৌ করবে কি না, সে প্রশ্ন উঠছে। হিঙ্গলগঞ্জের দুর্গাপুর বায়লানি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সমীরকুমার মান্না বলেন, “সরকার ভোট এলে চমক দিতে চেষ্টা করে। ভোট ফুরোলে আবার সব ঝিমিয়ে যায়। সামনে লোকসভা ভোট। তাই হয় তো এমন চমক দিচ্ছে। হাসনাবাদ-বারাসাত শাখার ডবল লাইনের কাজ এখনও সম্পূর্ণ হল না। রেল দফতর দু’টো নদীর উপরে সেতু তৈরি করে হাসনাবাদ থেকে ট্রেন হিঙ্গলগঞ্জে নিয়ে যাবে, এটা বিশ্বাস হয় না।”

তবে সত্যি যদি রেলপথ তৈরি হয়, জমি দিতে প্রস্তুত বলেই জানান স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে। হিঙ্গলগঞ্জের বাসিন্দা অমিয় ঘোষ বলেন, “বাহাদুর মিলের কাছে আমাদের চাষের জমি আছে। শুনেছিলাম রেললাইনের জন্য আমাদের জমি কিছুটা অধিগ্রহণ করা হবে। কিন্তু তারপর তো আর কোনও হেলদোল নেই। ক্ষতিপূরণপেলে রেললাইনের জন্য জমি দিয়ে দেব।”

হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সইদুল্লা গাজি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প এটা। হিঙ্গলগঞ্জের মানুষের কথা ভেবে ঘোষণা করেছিলেন। রেল প্রয়োজনীয় উদ্যোগ করুক।” স্থানীয় বিজেপি নেতা তুলসী দাস বলেন, “কেন্দ্র সরকার মানুষের কথা ভেবেই রেলপথ তৈরিতে আবার উদ্যোগী হয়েছে। আমরা দলীয় ভাবে রেলমন্ত্রকের কাছে আবেদন করব, আগামী দিনে হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের শেষপ্রান্ত সামসেরনগর পর্যন্ত রেলপথ চালু হোক। তা হলে এই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে। পর্যটনের উন্নতি হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hingalganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE