Advertisement
E-Paper

জল মাড়িয়ে ক্লাসের পথে

পিঠে ভারী ব্যাগ। দু’হাত দু’দিকে ছড়ানো। ইটের উপর দিয়ে এক পা এক পা করে এগোচ্ছিল মেয়েটি। যেন ব্যালান্সের খেলা। একটু এ দিক ও দিক হলেই...। কী হবে? কী আর হবে, জমা জলে পড়ে ল্যাপ্টালেপ্টি হবে স্কুলের ইউনিফর্ম।

সামসুল হুদা

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৬ ০১:১২
ভাসছে স্কুল। নিজস্ব চিত্র।

ভাসছে স্কুল। নিজস্ব চিত্র।

পিঠে ভারী ব্যাগ। দু’হাত দু’দিকে ছড়ানো। ইটের উপর দিয়ে এক পা এক পা করে এগোচ্ছিল মেয়েটি। যেন ব্যালান্সের খেলা। একটু এ দিক ও দিক হলেই...।

কী হবে? কী আর হবে, জমা জলে পড়ে ল্যাপ্টালেপ্টি হবে স্কুলের ইউনিফর্ম। বইখাতা, ব্যাগ ভিজবে। পোশাক না বদলে সে দিন তো ওই অবস্থায় আর ক্লাস করা যাবে না। তাই জমা জলের মধ্যে পাতা ইট থেকে পা ফসকালে মোটামুটি ছুটি। আর সঙ্গে পা মচকানোর একটা আশঙ্কা যে থাকে না, তা নয়।

টানা বৃষ্টি না থাকলেও চারপাশের জমা জলে এই পরিস্থিতি হয় ক্যানিঙের দ্বারিকানাথ বালিকা বিদ্যালয়ে।

শুক্রবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল, সব জায়গায় তখনও ইট পাতা হয়নি। এক হাঁটু জলের মধ্যে দিয়ে ক্লাসে যাচ্ছে ছাত্রীরা। অনেকে জলে ঠেলে এগোবে কি এগোবে না, ভাবছে তখনও। কারও মুখে চিন্তা। কোনও কিশোরী আবার এই পরিস্থিতিতে দেদার মজা পেয়ে হেসে কুটোপাটি। কিন্তু শিক্ষিকাদের মুখ ভার। কিন্তু এ দিন পরীক্ষা থাকায় বাধ্য হয়ে জল ডিঙিয়েই ক্লাসে গেলেন তাঁরা।

শুধু ওই স্কুল নয় , বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে ক্যানিঙের বিভিন্ন এলাকা। রাস্তাঘাট, স্কুল সর্বত্রই একহাঁটু করে জল। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, প্রশাসনের গাফিলতির জন্যই প্রতি বছর বর্ষার সময়ে ক্যানিঙের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এ জন্য নিকাশি ব্যবস্থাকে দায়ী করেন সকলে।

দীর্ঘ দিন ধরেই ক্যানিঙের নিকাশি ব্যবস্থা যে বেহাল, তা প্রকট হয়ে উঠেছে। সরকারি ভাবে নিকাশি ঢেলে সাজার কথা বারবার বলা হলেও আজও তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। বাম আমলে যে সব নিকাশি নালা তৈরি হয়েছিল, তা সংস্কার না করার ফলে বুজে গিয়েছে। অনেক জায়গায় আবার নিকাশি নালা, খাল বুজিয়ে দোকান-বাড়িঘর তৈরি হয়েছে। যে কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকা।

দ্বারিকানাথ বালিকা বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা বলেন, ‘‘স্কুলে জল নিকাশির কোনও ব্যবস্থা নেই। বৃষ্টিতে স্কুল চত্বর, ক্লাস ঘর সবই জলমগ্ন হয়ে পড়ে। ক্লাস নিতে এক ভবন থেকে আর এক ভবনে যেতে গিয়ে কাপড় ভিজে যায়। ওই ভিজে কাপড়েই সারা দিন স্কুলে থাকতে হয়।’’ স্কুলের এক ছাত্রীর মা নমিতা নস্কর বলেন, ‘‘মেয়েকে স্কুলে দিতে গিয়ে দেখি, এক হাঁটু জল জমে আছে। তারমধ্যে দিয়েই সকলকে যেতে হচ্ছে। পোশাক ভিজে যাচ্ছে। রোজ রোজ ভিজে কাপড়ে থাকলে তো শরীর খারাপ করবে।

প্রধান শিক্ষিকা রোকেয়া বেগম জানালেন, প্রতি বছরই এটা মাথাব্যথার কারণ। স্কুলের আশপাশে নিকাশির ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির জল বেরোতে পারে না। চারিদিক জলমগ্ন হয়ে পড়ে। ক্লাস রুমেও জল ঢোকে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা নিজেদের মতো করে কিছুটা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া কোনও ভাবেই এই সমস্যার পাকাপাকি সমাধান সম্ভব নয়।’’ স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি যাদব বৈদ্য জানালেন, ছাত্রীদের যাতায়াতের সমস্যার জন্য রাস্তায় ইট ফেলা হয়েছে। এ ছাড়া, প্রশাসনের সব স্তরে জানানো হয়েছে বিষয়টি দেখার জন্য। ক্যানিঙের বাসিন্দাদের অনেকেরই মতে, দখল-মুক্ত করে নিকাশি নালাগুলি সংস্কার করা দরকার। তা ছাড়া, হাইড্রেন করে মাতলা নদীর সঙ্গে মিশিয়ে দিলে তবেই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব।

ক্যানিং-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পরেশরাম দাস বলেন, ‘‘ওই স্কুলে যে সমস্যা রয়েছে তা আমার নজরে এসেছে। যাতে বাইরের জল ভিতরে ঢুকতে না পারে, সে জন্য একটি গার্ডওয়াল তৈরি-সহ জল নিকাশির জন্য প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা অনুমোদন করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, নিকাশি নালার সংস্কার এবং প্রথম পর্যায়ে ক্যানিং বাজার-সহ আশপাশের বেশ কিছু জায়গায় হাইড্রেন করা হবে। এ জন্য সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ থেকে টাকা অনুমোদন করা হয়েছে। সমস্যার কথা মেনে নিচ্ছেন বিডিও বুদ্ধদেব দাসও। কী বাবে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা যায়, সে চেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

কিন্তু এই ভরা বর্ষার বাকি দিনগুলোয় কী হবে? স্কুলে ঢোকার মুখে দুষ্টু হেসে এক কিশোরী বলে যায়, ‘‘স্কুলের মধ্যে একবার পা পিছলে জলে পড়লে তো মোটামুটি সে দিনটায় ছুটি। দেখি ব্যাপারটা কী ভাবে কাজে লাগানো যায়!’’

water logged canning
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy