Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ধর্ষণে অভিযুক্ত ফেরার নেতাও তৃণমূলের সভায়

এক জন কোটি টাকা জালিয়াতিতে অভিযুক্ত হন চার বছর আগে। অন্য জনের বিরুদ্ধে দশম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে গত বছর। কিন্তু শাসক দলের অভিযুক্ত দুই জনপ্রতিনিধির এখনও টিকি ছুঁতে পারেনি পুলিশ। দু’জনেই এলাকায় বিদায়ী বিধায়ক তথা প্রার্থীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

তৃণমূল প্রার্থী দেবশ্রী রায়ের সঙ্গে একই মঞ্চে সালাম। ইনসেটে, সত্যেন অধিকারী। —ফাইল চিত্র।

তৃণমূল প্রার্থী দেবশ্রী রায়ের সঙ্গে একই মঞ্চে সালাম। ইনসেটে, সত্যেন অধিকারী। —ফাইল চিত্র।

শান্তশ্রী মজুমদার
ঢোলাহাট শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৪৯
Share: Save:

এক জন কোটি টাকা জালিয়াতিতে অভিযুক্ত হন চার বছর আগে।

অন্য জনের বিরুদ্ধে দশম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে গত বছর।

কিন্তু শাসক দলের অভিযুক্ত দুই জনপ্রতিনিধির এখনও টিকি ছুঁতে পারেনি পুলিশ। দু’জনেই এলাকায় বিদায়ী বিধায়ক তথা প্রার্থীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ভোট-বাজারে তাঁরা এলাকায় প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অথচ, পুলিশের দাবি, কিছুতেই তাঁদের খোঁজ মিলছে না! এতে ভোটাররা তো বটেই, শাসক দলের নেতাদের একাংশও ক্ষুব্ধ। ভোটে এর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কাও তাঁদের রয়েছে।

দুই অভিযুক্তের মধ্যে এক জন দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির কেওড়াতলা পঞ্চায়েতের প্রধান সত্যেন অধিকারী। অন্য জন আব্দুস সালাম শা। এই জেলারই মথুরাপুর-১ পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ। দু’টি এলাকাই ঢোলাহাট থানার আওতায় পড়ে। নির্বাচন কমিশনের গুঁতোয় ভোটের কয়েক মাস আগে থেকেই জেলা জুড়ে নানা ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা শুরু করে জেলা পুলিশ। কিন্তু সত্যেনবাবু এবং আব্দুস সালাম শা অধরাই থেকে গিয়েছেন। দলের শীর্ষ নেতারা পাশে থাকায় পুলিশ ওই দু’জনকে ধরছে না বলে দাবি এলাকার বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতাদের। কাকদ্বীপের এসডিপিও অশেষ বিক্রম দস্তিদারের দাবি, ‘‘ওই দু’জনকে ধরার জন্য রীতিমতো অপারেশন চলছে। প্রতিনিয়ত তাঁদের খোঁজে যাচ্ছে পুলিশ।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি শোভন চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘অভিযোগ উঠলেই কেউ দোষী প্রমাণিত হয় না। আব্দুস সালামের দোষ প্রমাণিত হয়নি। প্রচারে সামিল হলে অসুবিধা কোথায়?’’ তবে, সত্যেনবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি তাঁর জানা নেই বলে দাবি শোভনবাবুর।

২০১২ সালে সত্যেনবাবুর বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছিল দলেরই একাংশ। তারা বিডিওকে জানিয়েছিল, ১০০ দিনের কাজ, পুকুর কাটা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের টাকা নিয়ে গোলমাল করেছেন প্রধান। এলাকার দলীয় বিধায়ক যোগরঞ্জন হালদার থেকে শুরু করে দলের জেলা সভাপতি শোভন চট্টো‌পাধ্যায়কেও জানানো হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়ে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতাকর্মীরা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশেও মামলা রুজু না হওয়ায় ওই নেতারা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আদালত অবমাননার অভিযোগ জানান। হাইকোর্টের নির্দেশে সবে গত মাসে সত্যেনবাবুর বিরুদ্ধে ঢোলাহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করে প্রশাসন। তার পরেও যোগরঞ্জন-ঘনিষ্ঠ সত্যেন অধরা!

অন্য দিকে, আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নাম করে এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে গত বছর মে মাসে। বার পাঁচেক তিনি কাকদ্বীপ আদালত এবং কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন জানান। কিন্তু সব আবেদনই নামঞ্জুর হয়। ওই ছাত্রীর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এফআইআর প্রত্যাহারের জন্য তার পরিবারের লোকজনকে আব্দুস সালাম হুমকি দিচ্ছেন, এই অভিযোগও ওঠে। ছাত্রীর পরিবারের লোকজন নির্বাচন কমিশনের শরণাপন্ন হন। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও সত্যেনবাবুর মতো রায়দিঘির বিদায়ী বিধায়ক তথা প্রার্থী দেবশ্রী রায় ঘনিষ্ঠ আব্দুস সালামও অধরা!

অথচ, দুই অভিযুক্তকেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে। দু’জনেই স্বপদে বহাল রয়েছেন। সত্যেনবাবু প্রায়ই পঞ্চায়েতে আসছেন। ইতিমধ্যে দেবশ্রীর প্রচারসভায় একাধিকবার দেখা গিয়েছে আব্দুস সালামকে। এলাকায় দলীয় প্রচারেও সামিল হচ্ছেন। সত্যেনবাবুর দাবি, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। অভিযোগ ওঠার পরে একই দাবি করেছিলেন আব্দুস সালামও। যোগরঞ্জনবাবু এ নিয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। দেবশ্রী এসএমএসের উত্তর দেননি।

কিন্তু দুই এলাকার বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতাকর্মীরা অন্য কথা বলছেন। তাঁদের বক্তব্য, এই ঘটনায় ভোটের বাজারে দলেরই ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে। দল যদি অভিযুক্তদের আত্মসমর্পণেরও নির্দেশ দিত, তা হলেও মুখরক্ষা হতো। কুলপির তৃণমূল নেতা রবীন্দ্রনাথ কোলে বলেন, ‘‘সত্যেন অধিকারীর মতো নির্বাচিত প্রতিনিধি যে ভাবে এক কোটিরও বেশি টাকা চুরি করেছেন তাতে গরিব মানুষ কাজ পাচ্ছেন না। সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পাচ্ছেন না। এ সব কারণে আমরা অনেকেই বসে গিয়েছি। দলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি।’’ বিরোধীরা অবশ্য অভিযুক্ত দুই তৃণমূল নেতাকে এলাকায় দেখে অবাক নন। তাঁদের মতে, তৃণমূল জমানায় এটাই দস্তুর। কমিশনের নজরদারি সত্ত্বেও তাই ওই দু’জনকে ধরতে পুলিশ ‘ঢিলেঢালা মনোভাব’ দেখাচ্ছে। জেলা সিপিএম সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অনেক দিন আগেই রাজ্যের পুলিশ তৃণমূলের দলদাস হয়ে গিয়েছে। তৃণমূল নেতাদের ওরা ধরবে কী করে?’’ জেলা কংগ্রেস সভাপতি অর্ণব রায়ের আশঙ্কা, ভোটের সময় দুই নেতা প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করতে পারেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC rape accused
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE