আলোচনা: নিজস্ব চিত্র
বিভিন্ন সময়ে পাচারের পরে উদ্ধার হয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন প্রান্তের এমন ২২টি মেয়েকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করল জেলা পুলিশ।
শুক্রবার ক্যানিং-১ ব্লক অফিসে একটি অনুষ্ঠানে ওই মেয়েদের নাম-ঠিকানা নথিভুক্ত করা হয়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই মেয়েদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বনির্ভর করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে এই প্রয়াস। তাদের বিউটি পার্লার, সেলাই, চাষ, কাপড়ের ব্যবসা ইত্যাদির প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ জন্য এখনও পর্যন্ত ৮ লক্ষ টাকা ধার্য হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইজি (দক্ষিণবঙ্গ) অজয় রানাডে, ডিআইজি (প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ) ভরতলাল মিনা এবং জেলার এসএসপি সুনীল চৌধুরী। আইজি (দক্ষিণবঙ্গ) বলেন, ‘‘পাচার হওয়া মেয়ে-শিশুদের পাশে দাঁড়াতে রাজ্যের ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ প্রকল্প রয়েছে। সেই প্রকল্পেই ওই মেয়েদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
পুলিশের এই উদ্যোগে খুশি ওই মেয়েরা। সোনারপুরের এক কিশোরী ২০১৫ সালে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় পুণেতে পাচার হয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ এবং একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এ দিন ওই কিশোরী বলে, ‘‘বাড়ি ফিরে আসার পর দাদা আমাকে মানতে পারেনি। ও বাবা-মাকে বলে আমাকে মামাবাড়ি পাঠিয়ে দেয়। সেখানেও নানা অপমান সহ্য করতে হতো। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় স্কুলে ভর্তি হই। শাড়ি কিনে বাড়ি বাড়ি ব্যবসা শুরু করি। আমি চাই নিজে কিছু করতে চাই। প্রশাসন সাহায্য করলে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারব।’’
একই সুর শোনা গিয়েছে রায়দিঘির এক মহিলার গলাতেও। তিনি বলেন, ‘‘কাজের লোভ দেখিয়ে দেড় বছর আগে আমাকে একজন পুণেতে বিক্রি করে দেয়। পুণের এক পুলিশকর্মীর সহযোগিতায় পালিয়ে আসতে পেরেছি। পরে একজন সব জেনে ভালবেসে আমায় বিয়ে করে। আমি আনাজের ব্যবসা করি। প্রশাসনের সাহায্য পেলে ব্যবসাটা বড় করতে পারি।’’
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সুন্দরবনের অন্যতম বড় সমস্যা নারী ও শিশু পাচার। পরিসংখ্যান বলছে, সুন্দরবন-সহ গোটা জেলা থেকে ২০১৩ সালে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার,২০১৪ সালে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার এবং ২০১৫ সালে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার নারী ও শিশু পাচার হয়েছিল। এদের মধ্যে অনেককে উদ্ধার করা গিয়েছে। আস্তে আস্তে পাচারের সংখ্যা কমছে।
তবে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, ওই মেয়েরা ফিরে আসার পরেও নানা ভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছে। সমাজের চোখে তারা যেন অপরাধী। অনেকে লাঞ্ছিত হয়ে বা অভাবের তাড়নায় আবার সেই পুরনো জায়গায় ফিরে যেতে চায়। এই সমস্যারই নিরসন চাইছে পুলিশ।
এ জন্য মানুষকে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে বলে মন্তব্য করেন আইজি (দক্ষিণবঙ্গ)। এ দিনের অনুষ্ঠানে পুলিশের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় ইউনিসেফ, ক্যানিঙের গরানবোস গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy