Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সৌরভের উচ্চশিক্ষার পথে বাধা অর্থ

ডাক্তারি এবং ইঞ্জিনিয়ারিঙে ভাল ফল করেও অর্থের অভাবে ভর্তি হতে পারছে না বসিরহাটের গৌরব দাশ। বসিরহাট টাউন হাইস্কুলের মেধবী এই ছাত্র এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে সব বিষয়ে লেটার পেয়েছেন। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৪৬২।

গৌরব দাশ।

গৌরব দাশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৫ ০২:১১
Share: Save:

ডাক্তারি এবং ইঞ্জিনিয়ারিঙে ভাল ফল করেও অর্থের অভাবে ভর্তি হতে পারছে না বসিরহাটের গৌরব দাশ। বসিরহাট টাউন হাইস্কুলের মেধবী এই ছাত্র এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে সব বিষয়ে লেটার পেয়েছেন। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৪৬২। প্রধান শিক্ষক যোগেশচন্দ্র ঘোষ জানান, খুব ভাল ছেলে গৌরব। পড়াশোনায় বরাবরই ভাল। তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। সে জন্য স্কুলের শিক্ষেকরা তাকে বিনা পারিশ্রমিকে পড়িয়েছেন।

স্থানীয় উত্তর বাগুণ্ডি গ্রামে বাড়ি গৌরবের। ইটের দেওয়াল, টালির ছাওনি দেওয়া দেওয়া বাড়িতে বাবা, মা ও তিন ভাইবোন মিলে থাকেন। বাবা কার্তিকচন্দ্র দাশ পেশায় রং মিস্ত্রি। মা শিশুশিক্ষাকেন্দ্রে সহায়িকার কাজ করেন। অর্থের অভাবে কলেজে ভর্তি হলেও বিএ পড়া শেষ করতে পারেননি কার্তিকবাবু। একই কারণে স্ত্রী সুমিতাদেবী স্কুলের গণ্ডি পার করতে পারলেও কলেজে ভর্তি হতে পারেননি। সে জন্য স্বামী-স্ত্রীর ইচ্ছে তাঁদের না পারার স্বপ্নকে সার্থক করুক ছেলেমেয়েরা। কিন্তু সেখানেও বাধা সেই অর্থ। কার্তিকবাবুর বড় মেয়ে সুনন্দা এমএ প্রথম বর্ষ পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর আর পড়া চালিয়ে যেতে পারেননি। গৌরব ও সৌরভ যমজ ভাই। দু’জনই একই ক্লাসে পড়ছে। সৌরভ বাংলা অনার্স নিয়ে পড়তে চায়। তাই কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে তাকে বিশেষ সমস্যায় পড়তে হয়নি। তবে গৌরবকে নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন তার বাবা-মা। দাশ দম্পত্তির একটাই স্বপ্ন পড়াশোনা শিখে মানুষের মতো মানুষ যেন তাঁদের ছেলেমেয়েরা হয়। কার্তিকবাবু বলেন, ‘‘নিজেরা বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারিনি। তাই সন্তানদের পড়াশোনা শিখিয়ে আমাদের স্বপ্ন পূরণ করতে চাইছি। কিন্তু সামান্য রোজগারের অর্থে কোনও রকমে এক বেলা খেয়ে ওদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু অর্থের অভাবে গৌরবকে ডাক্তারি কিংবা ইঞ্জিনিয়ারঙে ভর্তি করতে না পারলে ভাগ্যের কাছে হার মানতে হবে।’’

শুধুমাত্র নিজের স্কুল নয়, সৌরভ পাশে পেয়েছেন অন্য স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাকেও। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয় চন্দ্র মিত্র ও রণজিৎ মুখোপাধ্যায়ের কথা। তাঁরা বিনা পারিশ্রমিকে পড়ানোই নয়, বই, খাতা দিয়ে গৌরবকে সাহায্য করেছেন। গৌরবের কথায়, ‘‘বাবা-মায়ের ইচ্ছে পূরণ করতে ছোট থেকেই চেষ্টা করছি। কিন্তু যা পরিস্থিতি মনে হয় দিদির মতো এ বার আমারও থামার পালা এসেছে। যদি স্বপ্ন পূরণ হয়, তা হলে গ্রামে ফিরে গরিব মানুষের জন্য কাজ করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sourav money doctor HS
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE