Advertisement
E-Paper

ভয়ে ভাঙড়ের গ্রাম ছাড়ছে পরীক্ষার্থীরা

টেস্টে যতটা আশা ছিল, ততটা নম্বর পায়নি মাছিভাঙা গ্রামের ছাত্রীটি। আসন্ন মাধ্যমিক পরীক্ষা নির্বিঘ্নে পার করতে এ বার গ্রাম ছেড়ে দূরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে থাকতে চাইছে সে।

শুভাশিস ঘটক ও সামসুল হুদা

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৮ ০২:৪২
অশান্তির সেই দিনগুলো। ফাইল চিত্র

অশান্তির সেই দিনগুলো। ফাইল চিত্র

টেস্টে যতটা আশা ছিল, ততটা নম্বর পায়নি মাছিভাঙা গ্রামের ছাত্রীটি। আসন্ন মাধ্যমিক পরীক্ষা নির্বিঘ্নে পার করতে এ বার গ্রাম ছেড়ে দূরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে থাকতে চাইছে সে।

শুধু ওই ছাত্রীই নয়। আশপাশের আরও দশ-বারোটি গ্রামের মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অনেকের ভাবগতিক এমনই। কে জানে, আবার কখন অশান্তি-ঝুটঝামেলা শুরু হয়! তাই পরীক্ষার আগে ছেলেমেয়েদের ভাঙড়ে নিজেদের গ্রামে রাখার পক্ষপাতী নন অভিভাবকদের অনেকেই।

পরীক্ষার আগে ঘর ছাড়ার এই প্রবণতা প্রধানত চোখে পড়ছে ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিড আন্দোলনের শরিক গ্রামগুলিতে। ঠিক একই পরিস্থিতি মাথাচাড়া দিয়েছিল গত বছরেও। সে বার অবশ্য শাসক দল বনাম গণ-আন্দোলনকারীদের টানাপড়েনে পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল। এ বার বোমা-গুলির উৎপাত কিছুটা থিতিয়েছে। কাছাকাছি বসেছে তিনটি পুলিশ ক্যাম্প। তবু গ্রামবাসীদের অনেকেরই আস্থা ফেরেনি। চাপা আতঙ্কের পরিবেশ ফিকে হয়নি এখনও।

ভাঙড়ের পোলেরহাট-২ গ্রাম পঞ্চায়েত-সহ আশপাশের কিছু অঞ্চলে এখনও গ্রামবাসীদের সঙ্গে প্রশাসন তথা শাসক দলের সংঘাত চলছে। মাছিভাঙা, খামারআইট, পদ্মপুকুর, উত্তর গাজিপুর, টোনা, বকডোবা, উড়িয়াপাড়া, মিদ্যাপাড়ার মতো ১০-১২টি গ্রামে পা রাখলেই পাওয়ার গ্রিড-বিরোধী আন্দোলনের ঝাঁঝ টের পাওয়া যায়। সেখানেই পড়ুয়াদের পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় অভিভাবকেরা।

গত বছরের জানুয়ারি মাস থেকেই গোলমালের সূত্রপাত এ তল্লাটে। আন্দোলন চলাকালীন পুলিশের গুলিতে দু’জন গ্রামবাসীর মৃত্যুর পরে পরিস্থিতি আরও অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। পাওয়ার গ্রিডের কাজ বন্ধ থাকলেও গ্রামবাসীদের আন্দোলন থামেনি। কয়েকটি গ্রামে তো এখনও ঢুকতে পারেনি প্রশাসন। আবার গ্রামবাসীদের একাংশ তথা আন্দোলনকারীদের তরফেও শাসক দলের কোনও কোনও ডাকাবুকো নেতার বিরুদ্ধে দৌরাত্ম্যের অভিযোগ রয়েছে। তাতেও জনজীবন ব্যাহত হয়েছে বলে আন্দোলনকারীদের দাবি।

পড়ুয়াদের পরীক্ষার ফলেও যে এই অশান্তির ছাপ পড়েছে, তা মানছেন স্থানীয় শিক্ষক থেকে অভিভাবক, প্রায় সকলেই। গোলমালের জেরেই যে নিয়মিত স্কুলে হাজিরা দেওয়া বা কোচিং ক্লাসে পড়তে যাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছিল, তা-ও স্বীকার করছেন তাঁরা। পোলেরহাট হাইস্কুলের এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘ভাঙড়ের ওই গ্রামগুলির মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অর্ধেকই টেস্টে উতরোতে পারেনি।’’ এত টানাপড়েনের পরেও মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক মিলিয়ে কমবেশি ২০০ জন পড়ুয়া পরীক্ষায় বসতে চলেছে। টোনার একটি কোচিং সেন্টারের এক শিক্ষকের দাবি, ‘‘অধিকাংশ পরীক্ষার্থী এ বারও গ্রামছাড়া। প্রস্তুতি নিতেও অনেকে বাড়ি ছাড়ছে।’’

স্থানীয় চাঁপাগাছি হাইস্কুলের পরীক্ষার্থীদের সিট পড়েছে রাজারহাটের স্যার রমেশ হাইস্কুল ও অম্বিকা গার্লস হাইস্কুলে। আর পোলেরহাট হাইস্কুলের সিট পড়েছে কারবালা হাইস্কুলে। অভিভাবকদের একাংশ ভাবছেন, কী ভাবে পরীক্ষার ক’দিনের জন্য সেন্টারের কাছে সস্তায় বাড়ি ভাড়া মেলে! তবে স্থানীয় বাসিন্দারা এ-ও বলছেন, লেকটাউন গার্লস স্কুল বা সল্টলেক বিডি স্কুলের মতো খানিকটা দূরেও অনেক সময়ে পরীক্ষার্থীদের সিট পড়ে। তারা এমনিতেই পরীক্ষার আগে এলাকার বাইরে গিয়ে থাকে।

অশান্তি নিয়ে পরীক্ষার্থীদের যে আতঙ্ক, তাকে অমূলক বলে ভাবছেন না জমি আন্দোলনের অন্যতম নেতা মির্জা হাসান। তাঁর কথায়, ‘‘শাসক দল ফের সন্ত্রাস করতে পারে বলে আশঙ্কা তো রয়েইছে। পরীক্ষার দিনে আটকে পড়লে কী হবে? সেই ভয়েই হয়তো কেউ অন্যত্র থাকার কথা ভাবছে।’’

Fear Bhangar Students Bhangar Power Grid
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy