Advertisement
১০ জুন ২০২৪

অশান্ত এলাকাতেও ভাল ফল পড়ুয়াদের

এই পরিবেশে থেকেই পরীক্ষা দিয়েছে ভাঙড়ের মাছিভাঙা, খামারআইট, টোনা, মিদ্যেপাড়া, উত্তর গাজিপুর, পদ্মপুকুর এলাকার ছেলেমেয়েরা। তবু তাদের পরীক্ষার ফল তাক লাগানো। 

উৎকণ্ঠা: তখনও জানা হয়নি রেজাল্ট। পোলেরহাটে। নিজস্ব চিত্র

উৎকণ্ঠা: তখনও জানা হয়নি রেজাল্ট। পোলেরহাটে। নিজস্ব চিত্র

সামসুল হুদা
ভাঙড় শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৮ ০১:৪৭
Share: Save:

কখনও রাতবিরেতে বোমা-গুলির শব্দ। কখনও দিনভর রাস্তা অবরোধ। কখনও খুনোখুনি।

এই পরিবেশে থেকেই পরীক্ষা দিয়েছে ভাঙড়ের মাছিভাঙা, খামারআইট, টোনা, মিদ্যেপাড়া, উত্তর গাজিপুর, পদ্মপুকুর এলাকার ছেলেমেয়েরা। তবু তাদের পরীক্ষার ফল তাক লাগানো।

পোলেরহাট হাইস্কুলে ৫৯৭ নম্বর পেয়ে সেরা সৌম্য মণ্ডল। টোনা গ্রামে বাড়ি তার। পরীক্ষার অনেক আগে থেকেই ওই এলাকা বার বার উত্তপ্ত হয়েছে পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলনের জেরে। সৌম্য জানায়, গত দু’বছর ধরে এলাকায় গন্ডগোল চলছে। প্রায়ই রাস্তা অবরোধ হয়। বোমা পড়ে।

মাঝে মধ্যে রাজারহাটে পড়তে গিয়ে বাড়ি ফিরতে পারত না। বন্ধু বা আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে যেতে হত। কখনও আবার গন্ডগোলের জেরে অনেক ঘুরপথে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। মাঝে মধ্যেই স্কুলে বা প্রাইভেট টিউশন নিতে যেতে পারত না, জানায় সে। ‘‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আরও ভাল রেজাল্ট করতে পারতাম’’— বলে সৌম্য।

উত্তর গাজিপুরে তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের বাড়ির কাছে থাকে সামসুদ্দিন মোল্লা। সে-ও এ বার পোলেরহাট হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। তার কথায়, ‘‘প্রথম প্রথম আন্দোলনে যেতাম। পরে আর মিছিলে পা মেলাইনি।’’

পোলেরহাট ২ পঞ্চায়েতের গ্রিড এলাকার মধ্যেই পড়ে পোলেরহাট হাইস্কুল। এ বছর সেখানে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩৬৩। পাস করেছে ৩৬১ জন। ভাঙড়ের অনেক ছাত্রছাত্রী উত্তর ২৪ পরগনার রাজারহাটের চাঁপাগাছি হাইস্কুলেও পড়ে। এ বার ওই স্কুলে ১৮৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১৪৫ জন। সর্বোচ্চ ৫১৬, নতুনহাটের মারুফা খাতুনের।

স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, ‘‘আগের তুলনায় স্কুলে পাশের হার বাড়লেও নম্বরের হার গত তিন বছরের তুলনায় কমেছে। যারা পড়তে আসে, তাদের বাড়ি মূলত পাওয়ার গ্রিড এলাকায়। গন্ডগোলের কারণে অনেকে নিয়মিত স্কুলে আসতে পারত না। পড়তে যেতে পারত না।’’

আতঙ্কের পরিবেশ থাকায় অনেকে মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে থেকে বাড়ি ছেড়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের কাছাকাছি ভাড়া বাড়িতে বা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে থাকা শুরু করে বলেও জানা গেল। এলাকারই এক গৃহশিক্ষক বলেন, ‘‘পরীক্ষার আগে এলাকায় যা গন্ডগোল ছিল, ছেলেমেয়েরা নিয়মিত কোচিংয়ে আসতে পারেনি। আমরা অনেক সময়ে তাদের কাছে গিয়েও পড়িয়ে এসেছি।’’

জমি কমিটির সদস্য মির্জা হাসান বলেন, ‘‘টানাপড়েন অনেক দিন ধরে চলছে এ কথা ঠিক। তবে গতবারের থেকে এ বছর পরিস্থিতি কিছুটা ভাল ছিল। অনেকেই ভাল ফলও করেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE