সরকার জমি দিয়েছে। টাকার অনুমোদন এসে গিয়েছে। তবু তৈরি হচ্ছে না শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন। কারণ হিসাবে উঠছে বিজেপির অসহযোগিতার অভিযোগ।
গত সাত বছরে জয়নগর ২ ব্লকে মায়াহাউরি শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের কোনও ভবন তৈরি হয়নি। সে কারণে কখনও বারান্দায় কখনও বা বৈঠকখানায় চলছে ছোটদের পঠন পাঠন। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের খাওয়া-দাওয়াও সারতে হয় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে।
কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, উঠোনে সারি দিয়ে বসে কচিকাঁচারা। পাতে পড়ল ভাত, তরকারি। মিড ডে মিলের খাওয়া-দাওয়া চলছে। এ দিকে, সামনে দিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে বি়ড়াল। ধুলোর ঝাপট থালাবাসনের উপর দিয়ে...।
প্রধান শিক্ষিকা স্বপ্না বিশ্বাস জানালেন, সরকার থেকে জমি পাওয়ার পরে ২০১৩ সালে ভবন নির্মাণের জন্য প্রায় দেড় লক্ষ টাকা অনুমোদনও মেলে। কিন্তু এই এলাকায় মায়াহাউরি পঞ্চায়েতটি বিজেপির দখলে। তাঁরাই ভবন নির্মাণ করতে দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ। নানা অজুহাত দেখিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে স্কুলের কাজ, অভিযোগ প্রধান শিক্ষিকার। তাঁর কথায়, ‘‘যে জমিটি সরকার স্কুলের জন্য দিয়েছে, তা খেলার মাঠ হিসাবে ব্যবহার হয়। ভবন নির্মাণ করতে গেলেই বিজেপি থেকে দলগত ভাবে চাপ আসছে।’’ এসইউসি ও বিজেপি জোটের জয়নগর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অঞ্জনা দাসও ভবন তৈরিতে বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ প্রধান শিক্ষিকার। স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা কেন্দ্রের অভিভাবক প্রতিনিধি কমিটির সম্পাদক প্রফুল্ল সর্দারও জানাচ্ছেন, রাজনৈতিক কারণেই উন্নয়নের কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে। আপাতত প়ড়ুয়ার সংখ্যা ৬৫। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সংখ্যাটা কমছে বলে দাবি প্রফুল্লবাবুর।
অসহযোগিতার অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপি নেত্রী তথা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অঞ্জনাদেবী বলেন, ‘‘ওই কেন্দ্রের জন্য আমরাই টাকা অনুমোদন করেছিলাম। শাসকদলের নেতারাই জমি দখল করে থাকায় ভবন নির্মাণ করা যাচ্ছে না। ওঁরা সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ করছেন।’’
জয়নগর ২ বিডিও নাসরিন বারি আলি বলেন, ‘‘ওই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের ভবন নির্মাণের জন্য সকলকে নিয়ে সভা ডাকা হয়েছিল। ভবন নির্মাণের জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’’
গ্রামে কোনও প্রাথমিক স্কুল নেই। অন্য স্কুলে পড়তে হলে প্রায় ১৫ মিনিট রাস্তা পেরিয়ে যেতে হবে কচিকাঁচাদের। সে কারণে দূরের কোনও স্কুলে ছেলেমেয়েদের পড়তে পাঠাতে নারাজ অভিভাবকেরা। এলাকার এই সমস্যা দূর করার জন্যই ২০০২ সালে মায়াহাউরিতে শিশু শিক্ষাকেন্দ্রেটি চালু করা হয়। কিন্তু তার এখন এই পরিস্থিতি।
খড়ের ছাউনি দেওয়া একটি ঘরে ক্লাস শুরু হয়। তার কিছু দিন পরেই এই ঘর-লাগোয়া পাঁচ শতকের বেশি জমি ওই কেন্দ্রের নামে সরকারি নথিভুক্ত হয়। সেটি এখন গ্রামের ছেলেদের খেলার মাঠ। ২০০৯ সালে আয়লার সময়ে কেন্দ্রের অস্থায়ী ঘরটি ভেঙে পড়ে। তারপর থেকেই শুরু হয়েছে শিক্ষাকেন্দ্রের ভবন
নিয়ে সঙ্কট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy