পড়াচ্ছেন স্যার। নিজস্ব চিত্র।
ওদের কারও বাবা দিনমজুর। কেউ আবার অন্যের জমিতে চাষ করেন। কোনওক্রমে বই, খাতা কিনে স্কুলে যায় তারা। কিন্তু তাদের স্কুলের বাইরে বেতন দিয়ে টিউশন পড়তে যাওয়ার ক্ষমতা নেই। অথচ, ভাল নম্বর পেতে গেলে স্কুলের বাইরেও বিশেষ ক্লাস করা বিশেষ জরুরি। এই পড়ুয়াদের জন্যই রয়েছেন ‘শ্যামলাল স্যার’। উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা ব্লকের কোজারবাগি গ্রামের বাসিন্দা পেশায় স্কুল শিক্ষক শ্যামলাল ওঁরাও গত আট বছর ধরে এলাকার দরিদ্র পড়ুয়াদের প্রায় বিনা বেতনে টিউশন পড়িয়ে আসছেন।
বাজিতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্যামলালবাবু পড়ানোর প্রয়োজনে স্থানীয় নাটাবেড়িয়া বাজারে একটি ছোট ঘর ভাড়া নিয়েছেন। ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা প্রায় আশি। সেখানে নবম এবং দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের ইতিহাস, ভূগোল, বাংলা এবং একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ইতিহাস পড়ান তিনি। কারও থেকে আলাদা করে কোনও বেতন নেন না। তবে কেউ কেউ স্বেচ্ছায় কিছু টাকা দেয়। বছর ঊনচল্লিশের শ্যামলালবাবুর কথায়, ‘‘এলাকার বহু মানুষ খুব কষ্ট করে সংসার চালান। অভাবের সংসারে ছেলেমেয়েদের আলাদা করে টিউশন প়ড়ানোর মতো সামর্থ্য তাঁদের নেই। তাই অনেকে মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। সেটি আটকাতেই আমার এই সামান্য উদ্যোগ।’’ মাস্টারমশাইয়ের কাছে অগ্রাধিকার পায় আদিবাসী ছাত্রছাত্রীরা। বিনা বেতনে পড়ানোর পাশাপাশি গণেশ ওঁরাও নামে একটি আদিবাসী ছেলের পড়াশোনার খরচ বহন করেন তিনি। গণেশ এখন কৃষ্ণনগর গর্ভরমেন্ট কলেজে ভূগোলে অনার্স নিয়ে পড়াশোনা করছেন। একাদশ শ্রেণির ছাত্র দীপঙ্কর সর্দারের মতো অনেকেই শ্যামলালবাবু না থাকলে হয় তো প়়ড়াশোনা ছেড়ে দিতো। গদার মালিপোতা গ্রামের দীপঙ্করের কথায়, ‘‘স্যার কোনও টাকা নেন না। বাড়িতে প্রতিটি বিষয়ের জন্য গৃহশিক্ষক দেওয়ার ক্ষমতা নেই। উনি না থাকলে যে কী হতো!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy