Advertisement
E-Paper

তিতুমিরের স্মৃতির কেল্লাও নড়বড়ে

উনিশ শতকে হায়দারপুরের কয়েক কিলোমিটার দূরে নারকেলবেড়িয়ায় বাঁশের কেল্লা গড়ে যিনি ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধ‌ে লড়াই করেছিলেন। অসম্ভব সাহসই ছিল তাঁর পুঁজি।

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:৫৭
মির জমশেদ আলি। নিজস্ব চিত্র

মির জমশেদ আলি। নিজস্ব চিত্র

ইংরেজরা তাঁর বাঁশের কেল্লা ধ্বংস করেছিল।

স্বদেশ কি তাঁর স্মৃতিটাই ক্রমশ ধ্বংস করে দিচ্ছে না?

দু’দিক থেকেই পরাজয় ঘটেছে তাঁর। তিনি, বাদুড়িয়ার হায়দারপুরের সৈয়দ মির নিসার আলি, যিনি পরে ‘তিতুমির’ নামে খ্যাত হন। উনিশ শতকে হায়দারপুরের কয়েক কিলোমিটার দূরে নারকেলবেড়িয়ায় বাঁশের কেল্লা গড়ে যিনি ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধ‌ে লড়াই করেছিলেন। অসম্ভব সাহসই ছিল তাঁর পুঁজি। কিন্তু অসম লড়াইয়ে পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছিল তাঁকে। এ হেন শহিদ আজ তাঁর জন্মস্থানেই অবহেলিত। তাঁর বংশধরও উপেক্ষিত। ভোটের ভরা বাজারে তাই এলাকার বাসিন্দাদের কোনও প্রশ্ন করলেই মিলছে ক্ষুব্ধ জবাব।

বাদুড়িয়ার বাগজোলা পঞ্চায়েতের চাঁদপুর মৌজার হায়দারপুর গ্রামে ঢুকতেই তেমনই এক রাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন তিতুমিরের ষষ্ঠ বংশধর সৈয়দ মদত আলি। অর্থের অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না বলে দাবি করে তিতুমিরের পঞ্চম বংশধর মির জামসেদ আলি বলেন, ‘‘সরকার যত দিন না তিতুমিরের স্মৃতিরক্ষার জন্য কিছু করবেন, তাঁর বংশধরদের কথা ভাববেন, ততদিন আমরা ক্ষোভ বয়ে বেড়াব।’’ তাঁদের কথায়, ‘‘ভোট এলেই রাস্তা, হাসপাতাল, লাইব্রেরি, রাস্তায় আলো-সহ একাধিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে নেতারা গ্রামে পৌঁছন। উন্নয়ন তো দূরস্ত, নির্বাচনের পরে তাঁরা আর গ্রামগঞ্জ ফিরে দেখার প্রয়োজনও বোধ করেন না। ফলে মাত্র দু’কিলোমিটার রাস্তার সংস্কার হয় না। তিতুমিরের গ্রামের অন্ধকার কাটে না। তাঁর জন্মভিটের সংরক্ষণ হয় না।’’

এক দিকে আটঘরা, অন্য দিকে বাগজোলা বাজার। মধ্যে চাঁদপুর, হায়দারপুর গ্রামের মধ্যে দিয়ে চলে যাওয়া ওই দু’কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারের অভাবে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। শেখ আবুল আলিম, সাজ্জাত হোসেন, আসবাতুন বিবি বলেন, ‘‘প্রতিশ্রুতি শুনে শুনে এখানকার মানুষ তিতিবিরক্ত।’’

আনারুল হক, রাবেয়া বিবি বলেন, ‘‘রাস্তার পাশে বিদ্যুতের খুঁটি থাকলেও তাতে আলো নেই। রাতবিরেতে চলাচল করতে ভয় হয়। হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ বা বাজার যেতে গ্রামবাসীদের বেহাল রাস্তাই ব্যবহার করতে হয়।’’ গ্রামবাসীদের কথায়, ‘‘আর কিছু না হোক, রাস্তাটির উন্নয়ন করে তিতুমিরের নামে দিলে গর্ববোধ করতাম। ২০০০ সালে সরকারের পক্ষে তিতুমিরের নামে একটি ফলক বসানো হয়েছিল। ব্যস! ওইটুকুই। এ ছাড়া কিছু করা হয়নি।’’

নারকেলবেড়িয়ার শেখ রফিকুল্লা বলেন, ‘‘শহিদের বংশধর অবহেলিত। গ্রামে উন্নয়ন নেই। মানুষের ক্ষোভ তো স্বাভাবিক। সাংসদ, বিধায়ক, সরকারি আমলা কেউই কোনও প্রতিশ্রুতি রাখেননি। বারাসত শহরে তিতুমিরের নামে বাসস্ট্যান্ড, জেলা পরিষদের ঘর হচ্ছে। অথচ যে গ্রামে তিতুমির জন্মালেন সেই গ্রামের মানুষই নানা দিক থেকে বঞ্চিত।’’

উন্নয়নের জন্য তিতুমিরের নামে কমিটি অবশ্য গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনের উদাসীনতায় সেই কমিটি অনেক দিনই ভেঙে গিয়েছে জানিয়ে জামশেদ আলি বলেন, ‘‘সরকার তিতুমিরকে ভুলে গিয়েছে। তা না হলে আমাদের এই অবস্থা হয়?’’

Titumir Bamboo Fort History
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy