Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

টাকা দিলে মিলবে শংসাপত্র, বিজ্ঞপ্তি দিলেন তৃণমূল প্রধান

দুপুরবেলা গরমে ঘেমে নেয়ে গজগজ করতে করতে পঞ্চায়েত অফিস থেকে বেরোচ্ছিলেন পঞ্চাশোর্ধ এক প্রৌঢ়া। তাঁর কাছে কিছু জানতে চাইতেই ঝাঁঝিয়ে উঠলেন তিনি। একটু পরে কাপড়ের আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে জানালেন, ‘‘নাতির বয়সের শংসাপত্র নিতে এসেছি। এর জন্য এখন নাকি পঞ্চায়েতে ৫০ টাকা কর লাগবে। সেই কথা শুনে হনহন করে বেরিয়ে তিনি ছুটলেন তাঁর পাড়ায়। সেখানে পঞ্চায়েতের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে ফের আসবেন।

এই সেই বিজ্ঞপ্তি। —নিজস্ব চিত্র।

এই সেই বিজ্ঞপ্তি। —নিজস্ব চিত্র।

দিলীপ নস্কর
মগরাহাট শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০৭
Share: Save:

দুপুরবেলা গরমে ঘেমে নেয়ে গজগজ করতে করতে পঞ্চায়েত অফিস থেকে বেরোচ্ছিলেন পঞ্চাশোর্ধ এক প্রৌঢ়া। তাঁর কাছে কিছু জানতে চাইতেই ঝাঁঝিয়ে উঠলেন তিনি। একটু পরে কাপড়ের আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে জানালেন, ‘‘নাতির বয়সের শংসাপত্র নিতে এসেছি। এর জন্য এখন নাকি পঞ্চায়েতে ৫০ টাকা কর লাগবে। সেই কথা শুনে হনহন করে বেরিয়ে তিনি ছুটলেন তাঁর পাড়ায়। সেখানে পঞ্চায়েতের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলে ফের আসবেন।

শুধু ওই মহিলা নন। মগরাহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির অধীনে আমড়াতলা পঞ্চায়েতে এসেছিলেন পরিবারের মাসিক আয়ের শংসাপত্র নিতে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘‘ছেলে এ বারে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। সে অন্য একটা পরীক্ষায় বসবে বলে প্রধানের কাছে এসেছিলাম মাসিক আয়ের শংসাপত্র নিতে। এসে বিজ্ঞপ্তি দেখে অবাক হয়ে গেলাম।’’ ওই পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে দেখা গেল ওই পঞ্চায়েতের প্রধান একটা কাগজে লেখা বিজ্ঞপ্তি নিজের অফিসের সামনে সেঁটে দিয়েছেন। পঞ্চায়েত অফিসের দোতলায় প্রধানের ঘরের সামনে দেওয়ালে প্রায় ১০ ফুট উঁচুতে লাগানো ওই বিজ্ঞপ্তি দেখছেন কয়েকজন।

কিন্তু তাঁদের প্রশ্ন, প্রধান একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে এ ভাবে শংসাপত্রের বিনিময়ে কর নিতে পারেন? এ বিষয়ে বিডিও খোকনচন্দ্র বালা বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে কোনও শংসাপত্র নিতে গেলে প্রধানকে টাকা দিতে হবে এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব। তবুও খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই আমড়াতলা পঞ্চায়েতে বেড়ামারা, রাজাপুর, পরুই, কৃষ্ণপুর, উত্তর কৃষ্ণপুর, কামারপুকুর, রামনাথপুর, মাগুরপুকুর-সহ ১৫টি সংসদ রয়েছে। জনসংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। এলাকার বাসিন্দাদের নিত্য প্রয়োজনে বিভিন্ন শংসাপত্র আনতে ছুটতে হয় ওই পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে। তার মধ্যে রয়েছে জন্ম, মৃত্যু, আয় সংক্রান্ত, ইন্দিরা আবাস যোজনা, গীতাঞ্জলি প্রকল্পের শংসাপত্র। বিজ্ঞপ্তিতে লেখা রয়েছে কোন খাতে কত টাকা লাগবে। যেমন, গীতাঞ্জলি গৃহনির্মাণের জন্য ৫০০ টাকা, ইন্দিরা আবাস যোজনার জন্য ২০০ টাকা, বিআরজিএফের জন্য ১০০ টাকা, অন্যান্য প্রকল্পের জন্য ১০০ টাকা, জন্ম ও মৃত্যু শংসাপত্রের জন্য ৫০ টাকা, ওয়ারিশন শংসাপত্রের জন্য ৫০ টাকা, আয় সংক্রান্ত শংসাপত্রের জন্য কর দিতে হবে ১০ টাকা।

নির্বাচনে ওই পঞ্চায়েতে ১৫টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ৮টি, সিপিএম ৬টি এবং বিজেপি ১টি আসন পেয়েছে। প্রধান হন তৃণমূলের মুকুল চট্ট্যোপাধ্যায়। ওই নোটিশটি তাঁর নিজের ইচ্ছামতো লাগিয়েছে বলে দাবি পঞ্চায়েতের বিরোধী দল নেতা রাধাকান্ত মণ্ডলের। তাঁর কথায়, ‘‘গতকাল অফিসে এসে ওই নোটিশ বোর্ডটি দেখতে পাই। পঞ্চায়েতে কোনও কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হলে সকলকে নিয়ে একটা সাধারণ সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে কাউকে না জানিয়ে প্রধান নিজের ইচ্ছায় ওই কাজ করেছেন।’’ একই কথা বলেছেন বেড়ামারা গ্রামের ওই পঞ্চায়েতেরই সিপিএম সদস্য নার্গিস মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘আমি দু’দিন আগে আমার এলাকার কয়েকটি ইন্দিরা আবাস যোজনার আবেদনপত্র প্রধানের কাছে জমা দিতে গিয়েছিলাম। প্রধান জানালেন ওই আবেদন জমা দিতে হলে এ বার থেকে কর দিতে হবে। তারপর এ নিয়ে কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটির পর আমি আবেদনপত্র জমা না দিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছি।’’

এ বিষয়ে তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান মুকুলবাবু বলেন, ‘‘কোথায় নোটিস বোর্ড লাগানো রয়েছে আপনি দেখাতে পারবেন।’’ নোটিশ বোর্ডের ছবি তুলে এনেছি বলাতে তিনি এই ঘটনা স্বীকার করে বলেন, ‘‘ওয়ারিশন শংসাপত্র নিতে এক লোক একাধিকবার আসছেন। তাতে আমার অসুবিধা হচ্ছে। তা ছাড়া পঞ্চায়েত চালাতে গেলে তো একটা খরচ আছে তাই নোটিশ বোর্ড লাগানো হয়েছে।’’ নোটিশ বোর্ড লাগানো হলে এখনও পর্যন্ত টাকা নেওয়া শুরু হয়নি বলে তাঁর দাবি। তবে সবাইকে নিয়ে সাধারণ সভা ডেকে যাতে ওই নোটিশ বোর্ড কার্যকরি করা যায় তার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানায় তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE