এই লঞ্চেই আনা হয় যাত্রীদের। ছবি: দিলীপ নস্কর।
রাতের কুয়াশায় সামনে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। হঠাৎই টলমল করে ওঠে পর্যটক-বোঝাই লঞ্চটি। তলা থেকে হু হু করে ঢুকতে থাকে জল। আতঙ্কে চিৎকার শুরু করে দেন পর্যটকেরা। তাঁদের চিৎকার কানে যেতেই ট্রলার নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন আশপাশে থাকা মৎস্যজীবীরা। তাঁদের সাহায্যে প্রাণ বাঁচল ৪৫জন পর্যটকের।
রবিরার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে নামখানার মুড়িগঙ্গা নদীর কারামারা চরের কাছে। পুলিশ জানিয়েছে, একটি কাঠের টুকরোর সঙ্গে ধাক্কা লেগে এই দুর্ঘটনা ঘটে। রাতে জঙ্গলে পুলিশের একটি লঞ্চে রাত কাটান যাত্রীরা। পরে বাসে করে তাঁদের বাড়ি পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া থানার দুর্গাচক গ্রামের ৪৫ জনের একটি দল সুন্দরবনে ঘুরতে গিয়েছিল। দলে ছিল ৬টি শিশুও। শুক্রবার রাত ১২টা নাগাদ পাতিখালি ঘাট থেকে ‘মা শীতলা’ নামের ভাড়া করা লঞ্চটি রওনা হয়। কিন্তু রাতে কুয়াশা থাকায় লঞ্চ কিছুটা এগিয়ে আর যেতে পারেনি। পর দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ লঞ্চটি নামখানা ঘাটে পৌঁছয়। সেখানে দুপুরের খাওয়া সেরে পর্যটকেরা রওনা হন পাথরপ্রতিমার ভাগবতপুর কুমির প্রকল্পে। সেখান থেকে লঞ্চটি যায় বনি ক্যাম্পে।
পর্যটকেরা জানান, বনি ক্যাম্প হয়ে নামখানা ঘাটে ফিরতে রাত হয়ে যায়। ওই ঘাট থেকে রবিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ তাঁরা রওনা দেন হলদিয়ার দিকে। প্রায় আধ ঘণ্টা লঞ্চ চলার পর ঘন অন্ধকারে মুড়িগঙ্গা ও হাতানিয়া-দোহানিয়া নদীর সংযোগস্থলে ওই ঘটনা ঘটে।
মৎস্যজীবীরা জানান, অনেকের আর্ত চিৎকার শুনে তাঁরা ঘটনাস্থলে আসেন। ট্রলারে থাকা কাছি (দড়ি) লঞ্চের সঙ্গে বেঁধে প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে টানা শুরু হয়। টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হয় কাঁকড়ামারি চরের কাছে।
খবর যায় কাকদ্বীপ, নামখানা, সাগর, হারউড পয়েন্ট কোস্টাল ও ফ্রেজারগঞ্জ কোস্টাল পুলিশের কাছে। পুলিশ উদ্ধারের সাহায্যে করতে লঞ্চ নিয়ে দ্রুত পৌঁছয় ঘটনাস্থলে। পুলিশ গিয়ে সবাইকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যায়। সারা রাত চরের জঙ্গলের মধ্যে পুলিশের লঞ্চে রাত কাটান পর্যটকেরা। সকাল হলে সেখান থেকে লঞ্চে ফিরে আসেন নামাখানার নারায়ণপুর ঘাটে।
দুর্ঘটনার হাত থেকে উদ্ধার হওয়ার পরেও সকলের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ রয়েছে। এক পর্যটক বলেন, ‘‘যদি মৎস্যজীবীরা আশেপাশে না থাকতেন, তা হলে এ যাত্রায় বাঁচতাম না।’’
লঞ্চের যাত্রী কলেজ পড়ুয়া অপর্ণা দাস বলেন, ‘‘জীবনে এই প্রথম লঞ্চে উঠলাম। রাতে যখন লঞ্চে জল ঢুকছিল, খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। চারি দিকে শুধু জল আর জল। ঘন কুয়াশার মধ্যে দূরের কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। যে ভাবে বিপদের মুখ থেকে বেঁচে ফিরলাম তা জীবনে ভুলব না।’’
পর্যটক দলের পূর্ণেন্দু মাইতি বলেন, ‘‘সাগর থেকে লঞ্চটি ৩০ হাজার টাকায় ভাড়া করা হয়েছিল। শুক্রবার থেকে তিন দিনের জন্য সুন্দরবন বেড়াতে বেরিয়েছিলাম।’’ পুলিশ জানিয়েছে, পর্যটকদের অন্য লঞ্চে তুলে দিয়ে দুর্ঘটনাগ্রস্ত লঞ্চটি মেরামত করানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy