মইদুল ইসলাম।— নিজস্ব চিত্র।
মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবকের জন্য রক্ষা পেল আস্ত ট্রেন।
রবিবার দুপুর তখন পৌনে ৩টে। আপ মাঝেরহাট-হাসনাবাদ লোকাল বারাসত থেকে হাড়োয়া স্টেশন এসে পৌঁছল। স্টেশন কলোনির বাসিন্দা বছর কুড়ির মইদুল ইসলাম রোজকার মতোই দুপুরের খাবার খেয়ে স্টেশন থেকে সামনে ২২ নম্বর গেটের দিকে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তাঁর চোখে পড়ে ট্রেন লাইনের ফাটল। ট্রেনটি তখন হাড়োয়া স্টেশন ছেড়ে হাসনাবাদের দিকে রওনা দিয়েছে। মইদুল সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান ২২ নম্বর গেটের গেটম্যানের কাছে। লাইনে ফাটল বলা মাত্রই গেটম্যান প্রসেনজিৎ পাল হাতে থাকা সিগন্যাল পতাকা নাড়তে নাড়তে ট্রেন থামানোর জন্য দৌড় দেন। সঙ্গে মইদুলও ছিলেন। তাঁদের চেষ্টায় ফাটল থেকে ২০ ফুট দূরে ট্রেনটি দাঁড়ায়। খবর যায় স্টেশন ম্যানেজারের কাছে। ইতিমধ্যে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
গেটম্যান প্রসেনজিৎ পাল বলেন, ‘‘সবেমাত্র গেট ফেলেছি। সিগন্যাল লাইট দিয়েছি। হঠাৎ ছেলেটি এসে বলল দাদা রেল লাইন ভেঙে গিয়েছে। ট্রেন আসছে। আপনি থামান। অবাক হয়ে গেলাম। একটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলের মধ্যে এই বোধ এল কোথা থেকে!’’
ট্রেনের যাত্রী রবিউল মণ্ডল, তাপস মণ্ডল, চন্দনা মণ্ডল ও সুস্মিতা কুণ্ডুরা বলেন, ‘‘স্টেশন থেকে ট্রেনটি সবে মাত্র ছাড়ার পরই থেমে যাওয়ায় সন্দেহ হয়েছিল। এরপরে ঘটনা শুনি। ছেলেটির জন্য দুর্ঘটনা থেকে বাঁচলাম।’’
স্টেশনের দায়িত্ব প্রাপ্ত ম্যানেজার দেবাশিস হালদার বলেন, ‘‘গেটম্যানের কাছ থেকে শোনামাত্র আমরা ঘটনাস্থলে যাই। রেললাইনের ফিস প্লেট খুলে যাওয়ায় দু’টি পাটির মধ্যে ১ ইঞ্চি ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। ট্রেনের গতি কম থাকায় বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি।’’ প্রায় দু’ঘণ্টা পর থেকে ওই স্টেশনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
দেওয়ানহাটি গ্রামের জব্বার আলি মণ্ডল, সওকত হোসেন ও মিরাজুল আলিরা বলেন, ‘‘ছেলেটির মাথার সমস্যা রয়েছে। কিন্তু সেই ছেলেই এমন কাজ করল, যা গ্রামের সকলের মুখ উজ্জ্বল করল।’’
এত সবের পরে অবশ্য মইদুলের মধ্যে তেমন কোনও হেলদোল নেই। আমতা আমতা করে বললেন, ‘‘ট্রেন উল্টে গেলে বহু মানুষের ক্ষতি হতো। গায়ে কোনও জামা ছিল না বলে ট্রেন কী করে থামাব বুঝতে পারছিলাম না। তাই ছুটে গিয়েছিলাম গেটম্যানের কাছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy