Advertisement
E-Paper

জমিদার বাড়ির গুপ্তধন খুঁজতে ভিড় মিনাখাঁয়

সারা দিনই আকাশ কালো করে। থেকে থেকে ঘ্যানঘ্যানে বৃষ্টি। তারই মধ্যে শাবল-গাঁইতি নিয়ে পুরনো জমিদার বাড়ির একাংশ ভাঙাচোরার কাজ করছিলেন তিন শ্রমিক। হঠাৎই শাবলের ঘায়ে একটা ইট সরে যেতেই খুল যা সিম সিম...!!!! ছোট্ট একটা কুঠুরি। আর তার মধ্যে থেকে বেরিয়ে পড়তে থাকল একের পর এক মুদ্রা।

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৫ ০০:১৩
বাজার দর কত, চলছে আলোচনা। ইনসেটে, সেই মুদ্রা। —নিজস্ব চিত্র।

বাজার দর কত, চলছে আলোচনা। ইনসেটে, সেই মুদ্রা। —নিজস্ব চিত্র।

সারা দিনই আকাশ কালো করে। থেকে থেকে ঘ্যানঘ্যানে বৃষ্টি। তারই মধ্যে শাবল-গাঁইতি নিয়ে পুরনো জমিদার বাড়ির একাংশ ভাঙাচোরার কাজ করছিলেন তিন শ্রমিক। হঠাৎই শাবলের ঘায়ে একটা ইট সরে যেতেই খুল যা সিম সিম...!!!! ছোট্ট একটা কুঠুরি। আর তার মধ্যে থেকে বেরিয়ে পড়তে থাকল একের পর এক মুদ্রা।

গুপ্তধন মিলেছে— নিস্তরঙ্গ গ্রামীণ জীবনে সে খবর একবার ছড়িয়ে পড়তেই শনিবার দুপুরের পর থেকে তুমুল শোরগোল পড়ে যায় মিনাখাঁর বামনপুকুরের ভরসাপাড়ায়। বহু লোক মুঠো মুঠো প্রাচীন মুদ্রা সরিয়ে নিয়ে যায়। বিষয়টি থানা-পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়। যারা বাড়ি ভাঙার কাজ করছিল, সেই তিন জনকে পুলিশ থানায় ডেকে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। বসিরহাটের এসডিপিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুরনো বাড়ি ভাঙার সময়ে রুপোর টাকা মিলেছে বলে শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

তবে পুলিশ যত ক্ষণে বিষয়টি ‘খতিয়ে দেখছে’ তত ক্ষণে বহু মুদ্রা গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে ছড়িয়ে পড়েছে। রবিবার এলাকায় গিয়ে অনেকের কাছে দেখাও গেল সেই মুদ্রা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মিনাখাঁ থানার কাছেই ভরসা জমিদার বাড়ি। ইংরেজ আমলের ওই পরিবারের বেশ নামডাক ছিল। এলাকার স্কুল, মন্দির, এমনকী থানা ভবন যে জমিতে, সেটিও শোনা যায় পরিবারের এক পূর্ব পুরুষ সন্ন্যাসী ভরসার দানের জমি। তাঁর চার ছেলে। শ্রীমন্ত, ভুবন, বঙ্কিম এবং কেশব। পরিবারের মন্দিরটি এখনও আছে। আগাছায় ভরা জমিদার বাড়ির একটা অংশও দাঁড়িয়ে আছে কোনও মতে। এখনও ওই পরিবারের নিকট আত্মীয়েরা জমিদার বাড়ির আশেপাশে থাকেন। তবে যে অংশে এখনও জমিদার বাড়ি আছে, সেটি শ্রীমন্তবাবুর নাতি জগৎতারণ ভরসার ভাগের। তাঁরা অবশ্য বর্তমানে কলকাতার বাসিন্দা। তবে সম্পত্তি-সহ নতুন বাড়ি দেখভালের জন্য মিহির পাত্র বলে একজন আছেন।

পুলিশ জানায়, শনিবার সকালে নতুন বাড়ি ঘিরে পাঁচিল দেওয়ার জন্য পিছনের পুরনো জমিদার বাড়ির একাংশ ভাঙা হচ্ছিল। বেলা তখন প্রায় ২টো। প্রাচীন ভাঙা নির্ণারে ফাঁক গলে বেরিয়ে আসতে থাকে প্রাচীন মুদ্রা।

ভরসা পরিবারের সদস্য তরুণকুমার বলেন, ‘‘পূর্ব পুরুষদের মুখে রুপোর টাকার কথা শুনেছি। আগেকার দিনে অনেকেই টাকা মাটির তলায় পুঁতে কিংবা দেওয়ালের কুঠুরিতে লুকিয়ে রাখতেন। আমাদের বংশধরেরাও নাকি সে রকম বহু সোনা এবং রুপোর টাকা রেখেছিলেন বলে শুনেছি। তবে এ দিন সেই সব রুপোর টাকা দেখে কেউ আর লোভ সামলাতে পারেনি। অনেকেই টাকা নিয়ে পালিয়েছে।’’ স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, খবর পেয়ে মিহিরবাবু গিয়ে কোনও রকমে প্রায় দু’বস্তা মুদ্রা সরিয়ে রাখেন। সেই খবর পেয়ে কলকাতা থেকে ভরসা পরিবারের এক ছেলে এসে সন্ধ্যা নাগাদ মুদ্রা নিয়ে যান।’’

রবিবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, তখনও ভাঙা ইটের মধ্যে রুপোর টাকার খুঁজতে ব্যস্ত বহু মানুষ। ১০টি মুদ্রা পেয়েছেন প্রসেনজিৎ পাত্র। বললেন, ‘‘ইটের ফাঁকে লাল কাপড়ের মধ্যে থেকে রুপোর টাকা পড়ছে দেখে কয়েকটা কুড়িয়ে বাড়িতে এনে উনুনের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিলাম। ভরসা পরিবারের লোকেরা এসে বলে, টাকা না দিলে পুলিশকে জানাবে। তাই ভয়ে সব দিয়ে দিয়েছি।’’ ৩১টি রুপোর মুদ্রা পেয়েছিলেন প্রণব পাত্র। তাঁর স্ত্রী শর্মিষ্ঠা পাত্র বলেন, ‘‘পুলিশের ভয়ে সব টাকা ভরসা পরিবারের লোকেদের হাতে দিয়ে দিয়েছেন স্বামী।’’ অঞ্জলি পাত্র বলেন, ‘‘নাতি রাজু এবং পবিত্র কয়েকটা টাকা নিলেও তা ফেরত দিয়ে দিয়েছে।’’ স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সুজাতা মাইতির কথায়, ‘‘এখানকার বেশিরভাগ জমি ভরসা পরিবারের। অনেক দিন ধরেই শুনছি, ওঁদের অনেক টাকা বাড়িতেই লুকোনো আছে। এ দিন যে ভাবে মুদ্রা বেরিয়ে আসতে দেখলেন গ্রামের মানুষ, বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার প্রশাসনের।’’

মুদ্রাগুলির প্রকৃত মূল্য কী হবে, তা নিয়ে অবশ্য সন্দিহান অনেকেই!

Basirhat Treasure trove police Minakhan bricks nirmal basu south bengal MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy