মনোরম: গাইঘাটায় এ ভাবেই গাছ রেখে সম্প্রসারিত হয়েছে রাস্তা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
মুখ্যমন্ত্রী যশোর রোডে গাছ বাঁচিয়ে রাস্তা সম্প্রসারণের পক্ষে সওয়াল করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন গাছা-বাঁচাও আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেকে। সাধারণ নাগরিকেরাও গাছের প্রাণ রক্ষা হতে পারে শুনে নিশ্চিন্ত। তবে কেউ কেউ সংশয়ে। কেউ আবার জল কোন দিকে গড়ায়, সে দিকে তাকিয়ে মন্তব্য এড়িয়ে যাচ্ছেন।
প্রকৃতিপ্রেমীদের বক্তব্য ছিল, তাঁরা উড়ালপুলের বিপক্ষে নন, কিন্তু চান, প্রাচীন গাছ বাঁচিয়েই উড়ালপুল হোক। বিকল্প হিসাবে দু’টি দাবি তোলা হয়েছিল। পেট্রাপোল সীমান্তে যেমন গাছগুলিকে মাঝখানে রেখে দুই লেনে রাস্তা আছে, তেমনটা করা হোক। অথবা, গাছ তুলে অন্যত্র রোপণ করা হোক।
মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর তরফে গাছ কাটার বিরোধিতা করে হাইকোর্ট মামলা করা হয়েছিল। গাছ কাটার উপরে স্থগিতাদেশ দিয়েছে আদালত। কাজ এখন বন্ধ। বুধবার ওই মানবাধিকার সংগঠনের বারাসত শাখার সম্পাদক মানস দাস মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা নিয়েরমন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি বিচারাধীন। আমরা কোনও মন্তব্য করব না।’’
মুখ্যমন্ত্রী বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসকে নির্দেশ দিয়েছেন, মামলাকারীদের সঙ্গে কথা বলে, তাদের বুঝিয়ে মামলাটি তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে। তিনি কী মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে কথা বললেন? বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘এখন বিধানসভার অধিবেশন চলছে। তারপরে ওই সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলব।’’ এ নিয়ে মানসবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আলোচনা করতে চাইলে বিধায়ককে সংগঠনের কাছে লিখিত আবেদন করতে হবে। তারপরে আমরা সংগঠনে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’’ জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, যশোর রোডে বারাসত, অশোকনগর, হাবড়া ও বনগাঁ শহরে মোট পাঁচটি রেলসেতু তৈরি হওয়ার কথা। হাবড়া শহরের যানজটের কথা মাথায় রেখে সেখানে দু’টি রেলসেতু তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। পাঁচটি রেলসেতুর জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। বনগাঁ শহরে যশোর রোডে প্রস্তাবিত রেলসেতুটি লম্বায় ১১১৫ মিটার হওয়ার কথা। ওই কাজের জন্য ৬৬টি গাছ কাটা পড়বে। পাঁচটি রেলসেতুর জন্য গাছ কাটা পড়বে মোট ৩৫৬টি। রেলসেতু তৈরির জন্য সড়ক পরিবহণ দফতর থেকে টাকা বরাদ্দও হয়েছে।
অতীতে কেন্দ্রের তরফে একবার যশোর রোডের বিকল্প একটি চার লেনের রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সমীক্ষার কাজও শুরু হয়। সে সময়ে তৃণমূল প্রভাবিত কৃষি জমি রক্ষা কমিটির বাধায় কাজ হয়নি। পরবর্তী সময়ে টাকা ফিরে যায়। এ বারও যশোর রোড সম্প্রসারণের কাজ থমকে রয়েছে। সাধারণ মানুষের আশঙ্কা, বরাদ্দ ফিরে যাবে না তো?
গাছের মধ্যে বেশির ভাগ শিরিষ মেহগনি। আম গাছও রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী গাছ অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেনও বাস্তবে তা সম্ভব কিনা, তা নিয়ে সংশয় আছে। জীববিজ্ঞানের প্রবীণ শিক্ষক অজয় মজুমদার বলেন, ‘‘যশোর রোডের ধারে গাছগুলির বয়স প্রায় দু’শো বছর। ওই গাছগুলি সাধারণত ৫০০ বছর পর্যন্ত বাঁচে। এখন গাছগুলি অন্যত্র সরিয়ে রোপণ করা হলে তাদের বাঁচার সম্ভাবনা কম।’’
গাছ বাঁচাতে পথে নেমেছিলেন কবি বিভাস রায়চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী গাছের বিষয়ে সংবেদনশীল, তা জেনে ভাল লাগছে। ওই গাছ সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া সম্ভব কিনা, তা উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বললে জানা যাবে। সব থেকে বড় কথা, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে আলোচনার রাস্তা বের হল। গাছ বাঁচিয়েও যে সড়ক সম্প্রসারণ সম্ভব, সেটাই স্পষ্ট ভাবে জানালেন উনি।’’
শিক্ষক পার্থসারথি দে বললেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আমাদের মনের কথা বলেছেন। গাছও বাঁচুক, সড়কও সম্প্রসারণ হোক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy