Advertisement
E-Paper

বিয়ে নয়, পড়তে চায় দুই কন্যা

বিয়ে করতে চাই না এখনই, সটান বলল দুই মেয়ে। একজনের বয়স আঠারো ছুঁয়েছে। কিন্তু আরও পড়াশোনা করতে চায় সে। অন্যজন পড়ে দশম শ্রেণিতে। মা মরা মেয়েটার জন্য সম্বন্ধ এসেছিল বুধবার। বৃহস্পতিবারই বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলেন বাড়ির লোকজন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৭ ১৩:০০
বারণ: মনিকার বাড়িতে সরকারি প্রতিনিধিরা।—নিজস্ব চিত্র

বারণ: মনিকার বাড়িতে সরকারি প্রতিনিধিরা।—নিজস্ব চিত্র

বিয়ে করতে চাই না এখনই, সটান বলল দুই মেয়ে। একজনের বয়স আঠারো ছুঁয়েছে। কিন্তু আরও পড়াশোনা করতে চায় সে। অন্যজন পড়ে দশম শ্রেণিতে। মা মরা মেয়েটার জন্য সম্বন্ধ এসেছিল বুধবার। বৃহস্পতিবারই বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলেন বাড়ির লোকজন। স্কুলের দিদিমনিদের গিয়ে সে কথা জানায় মেয়েটি। শেষমেশ, সেই বিয়েও আটকানো গিয়েছে।

প্রথম ঘটনাটি কুলপির গাজিপুর পঞ্চায়েতের দৌলতাবাদের হালদারপাড়ার। মেয়েটির নাম মনিকা খাতুন। স্থানীয় হাইস্কুল থেকে এ বারই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে সে। পাঁচ ভাই, দুই বোন মনিকারা। বাবা শ্রমিকের কাজ করেন মুম্বইয়ে। বোনেদের মধ্যে বড় মনিকাই। পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায় সে। কিন্তু মা মাসুরা বিবি বিয়ের ঠিক করে বসেন।

স্থানীয় সূত্রে কুলপির বিডিও সঞ্জীব সেনের কাছে সেই খবর পৌঁছয়। বৃহস্পতিবার সঞ্জীববাবু প্রশাসনের লোকজনকে নিয়ে হাজির হন মেয়ের বাড়িতে। মনিকা বিডিওকে খুলে বলে মনের কথা। বলে, ‘‘আমি আরও পড়াশোনা করতে চাই। কিন্তু বাড়ির কথা ফেলতে পারিনি।’’ বিডিওকে অনুরোধ তার, ‘‘স্যার, আপনিই আমার মাকে বোঝান। আমার পড়াশোনাটা যেন বন্ধ না হয়ে যায়।’’

বিডিও কথা বলেন মায়ের সঙ্গে। জানান, মেয়ের বয়স আঠারো হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তার ইচ্ছে-অনিচ্ছেকেও মাথায় রাখা উচিত। বিশেষত, যখন সে পড়াশোনা করতে চায়। সঞ্জীববাবু পরে বলেন, ‘‘মেয়েটি কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকাও পাবে। তাই পরিবারকে বুঝিয়ে আপাতত বিয়ে বন্ধ করা গিয়েছে।’’

অন্য দিকে, জোর করে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে জগদ্দলের এক স্কুল ছাত্রীকেও। পুলিশ জানিয়েছে, ভাটপাড়া পুর এলাকার বাসিন্দা কৃষ্ণা দাস নামে মেয়েটি পড়ে দশম শ্রেণিতে। মা মারা গিয়েছেন। বাবা বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। সামান্য বেতনে কোনও রকমে সংসার চলে।

বুধবার সকালে এক আত্মীয়া হাবরার পাত্রের সম্বন্ধ এনে হাজির করেন। বৃহস্পতিবারই বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলেন সকলে মিলে।

রথতলা ফিঙাপাড়া বালিকা বিদ্যালয়ে পড়ে মেয়েটি। বৃহস্পতিবার সকালে সেখানে গিয়ে কৃষ্ণা ও তার এক বোন দিদিমনিদের ঘটনাটি জানায়। থানায় যোগাযোগ করে শিক্ষিকারা।

দুই শিক্ষিকাকে নিয়ে এ দিন বিকেলে ওই ছাত্রীর বাড়িতে পুলিশ যায়। পুলিশ জানিয়ে দেয়, নির্দিষ্ট বয়সের আগে বিয়ে যেমন দেওয়া যাবে না, তেমনই মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধেও বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া যাবে না। মেয়েটি বলে, ‘‘আমি লেখাপড়া করতে চাই। হঠাৎ করে বিয়ে দেওয়া হবে শুনে আকাশ থেকে পড়ি।’’

মেয়ের বাবা বিশ্বনাথ দাসের কথায়, ‘‘মা-মরা মেয়ে। আমি সারা দিন কাজের জন্য বাইরে বাইরে থাকি। বিয়ে দিয়ে একটু নিশ্চিন্ত হতে চেয়েছিলাম। তবে এখন মনে হচ্ছে, কাজটা ঠিক করিনি।’’

কৃষ্ণার পদক্ষেপের তারিফ করেছেন ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সুব্রত মিত্র। তিনি বলেন, ‘‘মেয়েরা এ ভাবেই সচেতন হোক। তা হলে প্রশাসনও পদক্ষেপ করতে পারবে ঠিক সময়ে।’’

Daughter Wedding Education Social Issues
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy