Advertisement
০৪ মে ২০২৪

উন্নয়নের দুই রূপকার ভোটের লড়াইয়ে মুখোমুখি, দ্বিধায় টাকি

একজন বলছেন, ‘‘সুষ্ঠু প্রশাসন গড়তে হলে বুড়ো মানুষটাকে ফেরাতে হবে।’’ অন্য জনের দাবি, ‘‘উন্নয়ন করতে হলে তারুণ্যের উপরে জোর দিতে হবে।’’ দু’জনেই টাকি পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান। একজন সিপিএমের সত্তরোর্ধ্ব প্রার্থী দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য জন বছর চুয়াল্লিশের তৃণমূল প্রার্থী সোমনাথ মুখোপাধ্যায়। টাকি পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে লড়ছেন দু’জনে। দু’জনেই সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ। এক সঙ্গে নাটক-যাত্রাও করেন।

সোমনাথ মুখোপাধ্যায় ও দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।

সোমনাথ মুখোপাধ্যায় ও দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ০২:২৯
Share: Save:

একজন বলছেন, ‘‘সুষ্ঠু প্রশাসন গড়তে হলে বুড়ো মানুষটাকে ফেরাতে হবে।’’ অন্য জনের দাবি, ‘‘উন্নয়ন করতে হলে তারুণ্যের উপরে জোর দিতে হবে।’’

দু’জনেই টাকি পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান। একজন সিপিএমের সত্তরোর্ধ্ব প্রার্থী দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য জন বছর চুয়াল্লিশের তৃণমূল প্রার্থী সোমনাথ মুখোপাধ্যায়। টাকি পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে লড়ছেন দু’জনে। দু’জনেই সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ। এক সঙ্গে নাটক-যাত্রাও করেন। টাকির মানুষ মনে করেন, দু’জনেই কাজের মানুষ। আধুনিক টাকি গড়ে তোলার পিছনে ভূমিকা আছে দু’জনেরই। কিন্তু ভোটাররা এ বার পড়েছেন দোটানা। কাকে ছেড়ে কাকে ভোট দেবেন, তা নিয়েই চিন্তা। পুরবাসীর একটা বড় অংশের বক্তব্য, ‘‘টাকির উন্নয়নে দু’জনকেই দরকার। তাই একই ওয়ার্ডে না লড়ে যদি আলাদা আলাদা ওয়ার্ডে প্রার্থী হতেন তাঁরা, তা হলে ভোটারদেরই সুবিধা হত।

টাকি পুরসভায় মোট ওয়ার্ড ১৬টি। ভোটার ২৮,৯৩৯ জন। টাকি পুরভবনের উল্টো দিকে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে দিলীপবাবুর বাড়ি। বাড়ি-সংলগ্ন ওষুধের দোকান তাঁর। ১৯৮১ সালে প্রথম পুর নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়েছিলেন। ’৮৬ সালে অবশ্য তাঁরই নেতৃত্বে বামফ্রন্ট টাকিতে বোর্ড গঠন করে। পুরপ্রধান হন দিলীপবাবু। ইছামতী নদীর ধারে গেস্ট হাউস, বৃদ্ধাশ্রম, মিনি সুন্দরবন, মাতৃসদন, পার্ক, সাংস্কৃতিক মঞ্চ, ছাত্রাবাস, যাত্রী আবাস, ডাম্পিং গ্রাউন্ড, বাজার তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ছিল পুরপ্রধান দিলীপবাবুর। বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে গরিব মানুষের ঘর তৈরি-সহ টাকিকে পর্যটন ক্ষেত্র হিসাবে সাজিয়ে তোলার ক্ষেত্রেও তাঁর ভূমিকার কথা মনে রেখেছেন মানুষ। উন্নয়নের জোরেই চার বার পুরপ্রধান হন তিনি। ২০১০ সালে মাত্র ৪৭ ভোটের ব্যবধানে তৃণমূলের সোমনাথবাবুর কাছে পরাজিত হন বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ।

এরপরে বিভিন্ন কারণে রাজনীতি থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে থাকেন দিলীপবাবু। ঠিক করেন, অনেক হয়েছে। এ বার একটু বিশ্রাম নেওয়ার দরকার। কিন্তু ভোট বড় বালাই। দলের চাপে রাজনৈতিক সন্ন্যাস ছেড়ে ফের বোটের লড়াই নেমেছেন তিনি। প্রচারে বেরিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে বলছেন, ‘‘টাকার অপচয়, অপশাসন এবং নৈরাজ্য বন্ধ করে স্বচ্ছ প্রশাসন গড়তে হলে এই বুড়োটাকেই পুরসভায় ফিরিয়ে আনুন।’’

এলাকার আম জনতা চান উন্নয়ন। সে কারণেই দিলীপবাবু সরে যেতেই বহু অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে নেমে সোমনাথবাবুও রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ২০০০ এবং ২০০৫ সালে দিলীপবাবুর কাছে পরাজিত হয়েও কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি। বরং জেদ আরও বাড়ে সোমনাথের। মানুষকে তিনি বোঝান, দিলীপবাবুর না করা কাজ শেষ করে তিনি জয়ী হলে এলাকার আরও শ্রীবৃদ্ধি ঘটাবেন। মানুষ তাঁকে বিশ্বাস করে। ২০১০ সালে তৃতীয়বার প্রার্থী হয়ে জয়ী হন সোমনাথ। গেস্ট হাউস থেকে শুরু করে মিনি সুন্দরবনের গভীরে যাওয়ার জন্য লম্বা জেটি, জলের ট্যাঙ্ক, অ্যাম্বুল্যান্স, অফিস গাড়ি, স্বাস্থ্য ভবন, রাস্তার ধারে শৌচাগার, বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে গরিব মানুষদের ঘর তৈরি, বাজার, মেয়েদের স্কুল, ইছামতীর ধারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গেস্ট হাউস, আর্ট গ্যালারি, ইকো ট্যুরিজম পার্ক, বিপণন কেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার, রাস্তা, আলো, ইছামতীর নোনা জল পানীয়ের উপযোগী করা— এমন আরও নানা কাজে টাকিকে এক ধাপে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন সোমনাথবাবু। সব মিলিয়ে কাউকেই কাজের মানুষ নন, এমন তকমায় বাঁধতে পারছেন না স্থানীয় মানুষ। সমস্যাটা সেখানেই। তাঁদের বক্তব্য, টাকির দুই রূপকারের একজনকে হারাতে হবে, এটা ভাবাই যাচ্ছে না।

দিলীপবাবু বলেন, ‘‘আমাদের এখানে ব্যক্তিকে নিয়ে রাজনীতি হয় না। ইদানীং যে ভাবে পুরবোর্ডে দুর্নীতি শুরু হয়েছে, সেটা আমাদের সময়ে ছিল না। তা ছাড়া, সামাজিক সুরক্ষা, আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, আর্থিক বিশৃঙ্খলা দূর করে স্বচ্ছ প্রশাসন উপহার দিতে পারে বামফ্রন্টই।’’

অন্য দিকে, সোমনাথবাবুর বক্তব্য, ‘‘এই ওয়ার্ডে একমাত্র আমিই ভূমিপুত্র। বাকি প্রার্থীরা সকলে অন্য ওয়ার্ড থেকে এসেছেন। দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে আমার কোনও ব্যক্তি-অভিযোগ নেই। তবে এটা সত্যি, রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার কারণে উনি অন্য ওয়ার্ড থেকে এসে নিজের ওয়ার্ডের উন্নয়নের কাজ দেখতে পারেননি। আমাদের এখানে রাজনীতি নয়, উন্নয়ন নিয়ে লড়াই হয়।’’ তাঁর দাবি, ‘‘অল্প সময়ের মধ্যে যেটুকু কাজ করতে পেরেছি, সে বিষয়টা তুলে ধরে মানুষকে আগামী দিনের পরিকল্পনা নিয়েও বলছি।’’

দীপক বসু, অধীর পাল, মনীষা মুখোপাধ্যায়রা বলেন, ‘‘দু’জনকেই আমরা এলাকার উন্নয়নে প্রাণপাত করতে দেখেছি। দু’জনের আমলেই টাকির ভোল বদলেছে অনেকটাই। ফলে কাউকেই ফেলা যাচ্ছে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE