বিয়ের উপযুক্ত বয়স না হওয়া সত্ত্বেও তাদের বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল পরিবার। কিন্তু ওরা ‘না’ বলেছিল। সেই প্রতিবাদের সামনেই হার মেনেছে পরিবারের চোখ রাঙানি।
কাকদ্বীপের লক্ষ্মীপুর রাধাকান্ত অ্যাকাডেমিতে এ বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠেছে ১৪ বছরের নাবালিকা গোলাপি খাতুন। তার বাবা গোলাপ শেখ এবং মা রেহানা বিবি দিল্লিতে শ্রমিকের কাজ করেন। মধুসূদনপুর পঞ্চায়েতের ওই একরত্তি মেয়েটি হল চার ভাইবোনের সংসারে বড় মেয়ে। তাই মা তার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিল। সেই শুনে গোলাপি জানিয়ে দেয়, সে এখন পড়াশোনা করবে। বিয়ে নয়। গোলাপি বলে, ‘‘বিয়ে করবো না শুনে মা বকাবকি শুরু করেছিল। কিন্তু আমি বলে দিয়েছিলাম, বিয়ে দিলে আমি বাড়ি থেকে চলে যাব।’’
গোলাপি যে স্কুলে পড়ে তার প্রধান শিক্ষক খোকনচাঁদ হালদার বলেন, ‘‘ওই মেয়েটির পরিবারে সেই প্রথম পড়াশোনা শিখছে। ও যে এত সাহস দেখাতে পারবে ভাবিনি। স্কুলের অন্য পড়ুয়াদের কাছে ও এখন অনুপ্রেরণা।’’ মেয়েটির দিদা হাসিনা বিবির দাবি, অভাবের কারণেই ওর মা মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছিল। তবে নাতনির ইচ্ছের বিরুদ্ধে তার বিয়ে দেওয়া হবে না। প্রতিবাদ করে বিয়ে আটকাতে পারলেও পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছে মধুসূদনপুর পঞ্চায়েতেরই উত্তর রামতনুনগরের মুর্শিদা খাতুনের। রামতনুনগর হাই মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর বিয়ে ঠিক করেছিল তার পরিবার। বিয়ে করতে চায়নি মুর্শিদা। মুর্শিদার সহপাঠীরা রামতনুনগর হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকের কাছে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানায়। তার পর প্রশাসনের কর্তারা মুর্শিদার অভিভাবকদের ডেকে নাবালিকা বয়সে বিয়ে দিতে বারণ করেন। মুর্শিদার কথায়, ‘‘আরও কিছুদিন পড়তে চাই। নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। তাই বিয়েতে না বলেছি।’’ বিয়ে বন্ধ হয়েছে। কিন্তু তার সঙ্গেই বন্ধ হয়েছে তার পড়াশোনা। রামতনুনগর হাইমাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক সামসুদ্দোহা লস্কর বলেন,‘‘মেয়েটি পড়াশোনায় ভালো। ওর বাবা চাষি। মেয়েকে স্কুলে পাঠানোর অনুরোধ করে ওনার সঙ্গে কথা বলবো।’’ মধুসূদনপুরের পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সহদেব বৈদ্য বলেন, ‘‘মুর্শিদার পরিবারের সঙ্গে কথা বলবো। এর পরেও যদি লুকিয়ে ওই মেয়েটির নাবালিকা বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে তার বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy