Advertisement
E-Paper

স্কুলে গোলমালের জেরে দোকানে ভাঙচুর ছাত্রদের

স্কুলের শিক্ষকদের দুই গোষ্ঠীর ঠান্ডা লড়াই চলছিল বেশ কয়েক দিন ধরে। এর জেরে কিছু ছাত্র খেপে উঠে সোমবার ভাঙচুর চালাল শিরাকোল যুধিষ্ঠির ননীলাল হাইস্কুলে। স্কুলের ভিতরেই শুধু নয়, প্রাঙ্গণের বাইরেও ভাঙচুর চলে। স্কুল-লাগোয়া দু’টি দোকানে, পাড়ার অন্যান্য বাড়িতেও চড়াও হয়ে ধমকি দেয় ছাত্ররা, অভিযোগ এমনই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৫ ০০:৩৫
তাণ্ডবের চিহ্ন।—নিজস্ব চিত্র।

তাণ্ডবের চিহ্ন।—নিজস্ব চিত্র।

স্কুলের শিক্ষকদের দুই গোষ্ঠীর ঠান্ডা লড়াই চলছিল বেশ কয়েক দিন ধরে। এর জেরে কিছু ছাত্র খেপে উঠে সোমবার ভাঙচুর চালাল শিরাকোল যুধিষ্ঠির ননীলাল হাইস্কুলে। স্কুলের ভিতরেই শুধু নয়, প্রাঙ্গণের বাইরেও ভাঙচুর চলে। স্কুল-লাগোয়া দু’টি দোকানে, পাড়ার অন্যান্য বাড়িতেও চড়াও হয়ে ধমকি দেয় ছাত্ররা, অভিযোগ এমনই। সোমবার এই ঘটনায় বিক্ষুব্ধ এলাকার ব্যবসায়ীরা। আপাতত দু’দিন বন্ধ রাখা হয়েছে ওই স্কুল। প্রশাসক হিসেবে পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখছেন ডায়মন্ড হারবারের এসডিও শান্তনু বসু।

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর চক্রবর্তী ও তাঁর ঘনিষ্ঠ দু’একজন শিক্ষকের সঙ্গে স্কুলের বাকি শিক্ষকদের মতবিরোধ চলছিল দীর্ঘদিন থেকে। সে জন্য স্কুলে নিয়মিত ভাবে ফ্যানের পাখা বাঁকানো, বিদ্যুতের ওয়্যারিং ছিঁড়ে ফেলার মতো ঘটনা ঘটছিল বলে অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের। গত শুক্রবার স্কুলে ছাত্রদের এই আচরণ নিয়ে বকাবকি করেন প্রধান শিক্ষকের ঘনিষ্ঠ শিক্ষকেরা। তা থেকেই অশান্তি ছড়ায়। শনিবার ছাত্রেরা তার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেন পথ অবরোধও করে।

তখনকার মতো তা মিটে গেলেও নতুন করে সমস্যা শুরু হয় সোমবার। জানা গিয়েছে, এ দিন সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই উঁচু ক্লাসের ছাত্রেরা মিড ডে মিল রান্না বন্ধ করে গেট তালা দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্লোগান তুলে তাঁর পদত্যাগ দাবি করা হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে তাঁকে অকথ্য গালাগাল শুনতে হয় ছাত্রদের থেকে।

প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘স্কুলের কিছু শিক্ষক ছাত্রদের উত্ত্যক্ত করছেন বলে আমার সন্দেহ। তা না হলে বাচ্চা ছেলেরা কখনওই এতবড় ঝামেলা, ভাঙচুর করতে পারে না। তবে আমার কাছে কোনও প্রমাণ নেই।’’

এ দিন ছাত্রদের রোষে পড়েন স্থানীয় দুই ব্যবসায়ী। তাদের দোকানে ভাঙচুর চলে। স্থানীয় মার্বেল ব্যবসায়ী তথা স্কুলের প্রাক্তনী অরিন্দম মণ্ডল বলেন, ‘‘হঠাৎ দেখি স্কুলের দেওয়াল ডিঙিয়ে কিছু ছেলে ঢুকে আমার দোকান তছনছ করে দিয়ে গেল। প্রায় ২০-২৫ হাজার টাকার মাল নষ্ট হয়েছে। শিক্ষদের গোষ্ঠীকোন্দলের খেসারত আমরা কেন দিতে যাব?’’ ভাঙচুর চলে সুকান্ত মণ্ডলের ফটোকপির দোকানেও। সেখানে দু’টি মেশিনে বাটাম দিয়ে ঘা মারে ছাত্রেরা। ঠেকাতে গেলে চোট পান দু’একজন। গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ী মহল।

একই ভাবে তাণ্ডব চালানো হয় পাশের একটি বাড়িতেও। ওই বাড়ির বাসিন্দা অনিন্দিতা সাহা বলেন, ‘‘আমাদের বাড়িতে ঢুকে বাঁশ নিয়ে তাড়া করেছিল ছাত্রেরা। ভয়ে, আতঙ্কে সিঁটিয়ে গেছিলাম।’’ মগরাহাটের সিআই, উস্তির ওসি এবং মগরাহাট -১ বিডিও ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি সামাল দেন।

তবে স্কুলের তরফেই মিলেছে পাল্টা দাবি। শিক্ষকদের অনেকেই এ দিন হাজির ছিলেন স্কুলে। তাঁদের পাল্টা যুক্তি, উঁচু ক্লাসের ছাত্রদের অনেক দাবি শুনছেন না প্রধান শিক্ষক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষকদের বক্তব্য, পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা নিয়ে ছাত্রেরা প্রধান শিক্ষককে আর্জি জানানোর পরে তাঁর ঘনিষ্ঠ এক শিক্ষক ছাত্রদের বিশ্রী ভাবে বকাবকি করলে তা মেনে নিতে পারেনি তারা। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে থাকা শিক্ষকদের সঙ্গেই সোমবার ভাঙচুর চালানো ছাত্রদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে দাবি করেন স্থানীয় বাসিন্দা। তবে তা মানেননি ওই শিক্ষকদের কেউই।

এ দিন স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, ছাত্রেরা নেই। সুনসান স্কুল। শিক্ষকদের কমন রুম ছাড়া প্রায় প্রতিটি ঘরেই ফ্যানের পাখা বাঁকানো, চেয়ারটেবিল ছত্রখান, ভাঙা বাথরুমের দরজা, গ্রন্থাগারের কাচও। স্কুলের ঘটনায় ক্ষোভ তো স্কুলের উপর থাকতে পারে। কিন্তু কেন বাইরের দোকানপাট ভাঙচুর চালাতে গেল উন্মত্ত ছাত্রেরা?

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রের দাবি, স্কুলে বার বার ঝামেলার জন্য স্থানীয় কিছু মানুষকে মীমাংসায় ডেকেছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের কেউ কেউ স্কুলের প্রাক্তনী, ব্যবসায়ী। তাই ছাত্রদের রোষে পড়েন তাঁরাও।

Vandalism shop diamond harbar police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy