পাশের বাড়ির জেঠু...। ব্যস, এটুকু বলেই অনন্ত নীরবতা। আর কোনও কথা নেই ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীটির। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। চোখের পাতায় থমকে আছে জল।
টেবিলের ও প্রান্তে যিনি বসেছিলেন, তাঁর আর বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে, সে ‘খারাপ স্পর্শ’।
নাবালিকাটিকে যিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রশ্ন করছিলেন, তিনি মথুরাপুর গ্রামীণ হাসপাতালের কাউন্সিলর মৌসুমি গুপ্ত। ঘটনাস্থল হরিণডাঙা কুমুদিনি হাইস্কুল।
কলকাতার কয়েকটি বেসরকারি স্কুলে শিশু পড়ুয়াদেরএকের পর এক যৌন নির্যাতনের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন স্কুলও। শুধু স্কুলেই বা কেন, পুলিশের হিসেব বলছে, নিজের ঘরে, নিকটজনের হাতেও যৌন নির্যাতনের ঘটনাও বড় কম নয়। এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে পদক্ষেপ করছে বিভিন্ন স্কুল। শুক্রবার সেই সচেতনতা শিবির হল হরিণডাঙার স্কুলটিতে। শিবিরের নাম— ‘ভাল স্পর্শ, খারাপ স্পর্শ’। শিবিরে মেয়েদের সঙ্গে ডাকা হয়েছিল তাদের মায়েদেরও। কারণ কাউন্সিলররা মনে করছেন, সচেতন হওয়ার প্রয়োজন মায়েদেরও।
সরকারি অন্বেষা ক্লিনিকের ওই কাউন্সিলর মৌসুমির কথায়, ‘‘পাশের বাড়ির এক জেঠুর কুকীর্তির জেরে গর্ভবতী হয়ে পড়েছিল এক নাবালিকা। পরে গর্ভপাত করাতে হয়। আমরা দেখছি, এ সব নিয়ে ছাত্রীটি এবং তার বাবা-মায়ের সচেতনতা অনেকটাই কম।’’ এ দিন কুমুদিনী হাইস্কুলে প্রায় প্রায় ২০০ ছাত্রী ও তাদের মায়েরা হাজির ছিলেন। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের বোঝানো হয়, কোন স্পর্শগুলি খারাপ। সেগুলি কীভাবে এড়িয়ে চলতে হবে। আবার কোন স্পর্শ ক্ষতিকারক নয় তা কীভাবে চিনতে হবে, সে উপায়ও বাতলে দেওয়া হয়।
স্থানীয় রামচন্দ্রপুরের বাসিন্দা নিরূপা বিশ্বাসের (নাম পরিবর্তিত) মেয়ে ওই স্কুলের ছাত্রী। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তিনি বলেন, ‘‘আমরা তো স্কুলের উপরেই ভরসা করে মেয়েদের পাঠাই। এখানে কিছু যাতে না হয়, তা আপনারাই তো দেখবেন।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক পার্থ বৈদ্য বলেন, ‘‘আমরা ১৫ দিন অন্তর মেয়েদের নিয়ে বসি। তাদের অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করি। তারপরেও স্কুলের বাইরে তাদের সমস্যা থাকতে পারে। ছাত্রীর মায়েদের রোজ তাদের সঙ্গে মিশতে হবে। খোঁজ নিতে হবে।’’
মাতা-শিক্ষক সমন্বয় বিভাগের শিক্ষিকা সোমা সিংহ ছিলেন এ দিনের আলোচনা সভার দায়িত্বে। তিনি বললেন, ‘‘মেয়েদের এই ধরনের সমস্যার কথা জানার পরেই কর্মশালার আয়োজন করার উদ্যোগ নিই।’’ স্কুলের ছাত্রীদের মধ্যে থেকে এ দিন উঠে এল বিবিধ সমস্যার কথা। আলোচনার শেষে ভিডিওতে দেখানো হয়, কীভাবে বাচ্চা মেয়েরা পড়শি, নিকট আত্মীয়, পরিচিতদের হাতে যৌন হেনস্থার শিকার হচ্ছে। বাচ্চা মেয়েদের বোঝানো হয়, কোন কোন ঘটনা ঘটলে তারা বাড়িতে অবশ্যই জানাবে। স্কুলের অনেক ছাত্রীই কাউন্সিলরের সঙ্গে তাদের ব্যক্তিগত নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে। তাদের কয়েকজনকে কাউন্সেলিংয়েও ডাকাও হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy