Advertisement
০৭ মে ২০২৪

ক্যানিঙে সাপের ছোবলে অসুস্থকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন যুবক

সাপে কাটার পরে বাড়ির লোক ছেলেটিকে নিয়ে গিয়েছিল গুণিনের কাছে। রুখে দাঁড়ান জাকির খান নামে ক্যানিং থানার এক সিভিক ভলান্টিয়ার। তিনি ওই কিশোরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়ির লোককে বোঝান। কোনও ভাবে রাজি হয় না ওই কিশোরের পরিবার ও গ্রামবাসীরা।

মায়ের সঙ্গে নজিবুল। ইনসেটে, জাকির। নিজস্ব চিত্র।

মায়ের সঙ্গে নজিবুল। ইনসেটে, জাকির। নিজস্ব চিত্র।

সামসুল হুদা
ক্যানিং শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৬ ০২:০৭
Share: Save:

সাপে কাটার পরে বাড়ির লোক ছেলেটিকে নিয়ে গিয়েছিল গুণিনের কাছে। রুখে দাঁড়ান জাকির খান নামে ক্যানিং থানার এক সিভিক ভলান্টিয়ার। তিনি ওই কিশোরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়ির লোককে বোঝান। কোনও ভাবে রাজি হয় না ওই কিশোরের পরিবার ও গ্রামবাসীরা। উল্টে জাকিরকেই গালিগালাজ করতে থাকেন তাঁরা। তারপরেও জোর করে নজিবুর নামে ওই কিশোরকে ক্যানিং হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করান জাকির। সুস্থ করে তাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে ক্যানিঙের হেড়োভাঙার বধূকুলা গ্রামে। এই মহকুমা তথা সুন্দরবনে প্রায়ই সাপের কামড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে হাসপাতালে না নিয়ে আসার ফলেই মানুষের মৃত্যু হয়। তা সত্ত্বেও সাপে কাটা রোগীকে ওঝা বা গুণিনের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে প্রচার চালাচ্ছে ক্যানিঙের যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা। সংস্থার সম্পাদক বিজন ভট্টাচার্য জানান, শুধু সুন্দরবন বলে নয় বিভিন্ন জায়গায় এখনও মানুষের ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। বিষধর সাপ কামড়ালে ওঝা গুণিনের কিছু করার থাকে না। হাসপাতালেই তার সঠিক চিকিৎসা হয়। আর বিষহীন সাপের ক্ষেত্রে ভয়ের কিছু নেই। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়ার পরে রোগী সুস্থ হয়ে যান। সে ক্ষেত্রে বুঝতে হবে, বিষহীন সাপ কামড়িয়েছে দেখে রোগী সুস্থ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তাতে অনেকেই ভেবে নেন, ওঝা ওই রোগীকে সুস্থ করে দিয়েছেন। বিষধর সাপ কামড়ালে দেরি না করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত।

ক্যানিং হাসপাতালের এক সর্পরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সমর রায় বলেন, ‘‘বিষহীন সাপের কামড়ে ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু বিষধর সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা না হলে রোগী মারা যেতে পারেন।’’ তিনি জানান, সমস্ত সরকারি হাসপাতালে সাপের কামড়ের প্রয়োজনীয় ওষুধ মিলবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা কামড়ের দাগ দেখে বোঝা যায়, কী ধরনের সাপ কামড়েছে। সে ভাবে চিকিৎসাও হয়। কোনও বিষধর সাপ কামড়ালে রোগীকে ওঝা, গুণিনে ভাল করতে পারে না। এ দিন নজিবুরকে বিষধর সাপ কামড়ায়নি ঠিকই। কিন্তু হাসপাতালে এনে জাকির বছর চোদ্দোর ওই কিশোরের উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন।

জাকির বলেন, ‘‘বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি, হাসপাতালেই সাপে কামড়ানোর সঠিক চিকিৎসা হয়। সে কারণে নজিবুরকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। আগে প্রতিবাদ করার সাহস ছিল না। এখন থানায় সিভিক ভলান্টিয়ারের কাজ করায় কিছুটা সাহস হয়েছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার বিকেলে বাড়ির কাজে গাছে দড়ি বাঁধতে গিয়ে একটি সাপ কামড়ায় নজিবুরকে। তার বাবা আবুজাফর সর্দার মা মণিরা ও গ্রামবাসীরা তাকে নিয়ে ওঝার কাছে যান। সেখানে ঝাড়ফুঁক শুরু হয়। সে সময়ে বাধা দেন জাকির। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে গ্রামবাসীরা জাকিরের উপর চড়াও হয়। তবু জোর করে ওই কিশোরকে নিয়ে জাকির হাসপাতালে যান। ছেলের কিছু হলে তাকে দেখে নেওয়ারও হমকি দেয় আবুজাফর-সহ গ্রামবাসীরা। কোনও কিছুর তোয়াক্কা না করে জাকির নাজিবুর ও তার দাদা মিজানুরকে মোটরবাইকে বসিয়ে প্রায় ১৭ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে ক্যানিং হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রায় ৬ ঘণ্টা পরে সম্পূর্ণ সুস্থ হয় নজিবুর।

মণিরা বলেন, ‘‘সবাই বলল, গুণিনের কাছে নিয়ে যেতে। তাই নিয়ে গিয়েছিলাম। জাকির জোর করে হাসপাতালে নিয়ে যায় ছেলেকে। না বুঝে জাকিরকে উল্টোপাল্টা অনেক কিছু বলেছিলাম। এ বার গ্রামের সকলকে বলব, সাপে কাটলে গুণিন নয়, হাসপাতালে যাওয়ার জন্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hospital snake
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE