এক মহিলাকে ট্রেন থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিল কয়েক জন যুবক। রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বসিরহাটের ঘোড়ারাস স্টেশনে। গুরুতর আহত অবস্থায় বছর চল্লিশের সুমিত্রা দাস নামে ওই মহিলাকে এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্টেশনে ট্রেনটি ঢোকার মুখেই এমন ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ প্রত্যক্ষদর্শীদের। ওই মহিলার বাড়ি হাসনাবাদের শুলকুনি গ্রামে। কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। রেল পুলিশে এক কর্তা জানান, বিষয়টি তাঁদের জানানো হয়নি। তা-ও ওই ছেলেগুলির খোঁজ চলছে। তদন্ত হচ্ছে।
ঠিক কি ঘটেছিল ওই দিন?
বিকেল ৫টা ৫৫ মিনিটে হাসনাবাদ লোকাল ট্রেনটি শিয়ালদহ স্টেশন থেকে ছাড়ে। ওই কামরায় ছ’জন যুবকের একটি দল গেট আটকে বসে তাস খেলছিল। তাদের টপকে ওঠানামা করতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছিল যাত্রীদের। কোনও কোনও যাত্রী তাদের ভিতরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু কেউ ওই যুবকেরা নড়তে চায়নি। উল্টে যাত্রীদের সঙ্গে তাদের বচসা বাধে। যাত্রীরা তাদের হম্বিতম্বি শুনে বুঝতে পারেন, সকলেই মদ্যপ অবস্থায় রয়েছে। কেউ আর কথা বাড়াননি। বারাসত স্টেশন পৌঁছনোর পরে কামরা আরও ফাঁকা হয়ে যায়।
রাত পৌনে ৮টা নাগাদ ট্রেনটি মালতিপুর স্টেশনে পৌঁছলে সুমিত্রাদেবী ট্রেন ধরতে যান। কিন্তু ওই দলটি গেটের মুখে বসে থাকায় তিনি উঠতে পারছিলেন না। যুবকদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করলে তারা তেড়ে বলে ওঠে, অসুবিধা হলে যেন সুমিত্রাদেবী অন্য কামরায় গিয়ে ওঠেন। কিন্তু তত ক্ষণে ট্রেন ছেড়ে দেওয়ায় কোনও মতে সুমিত্রাদেবী ওই কামরাতেই উঠে পড়েন। তারপর থেকেই সুমিতাদেবীর সঙ্গে ওই ছেলেদের বচসা শুরু হয়। অন্যরা চুপ করে থাকলেও সুমিতাদেবী বার বার তাদের গেটে বসে তাস খেলা নিয়ে প্রতিবাদ করেন। মহিলা বলেন, “ফাঁকা ট্রেনের দরজা আটকে তাস খেলবে কেন? ট্রেনের ভিতরে গিয়ে খেলো।” এ নিয়ে বচসা চরমে ওঠে। শুরু হয় গালিগালাজ। বচসা চলাকালীন ওই মহিলার গালে এক যুবক চড় মারে বলেও অভিযোগ। এরপরই ট্রেনটি স্টেশনে ঢোকার মুখেই চলন্ত ট্রেন থেকে তাঁকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন। পরে তাঁরাই কলকাতায় নিয়ে আসেন। ওই ট্রেনে থাকা স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, রবীন বর্মনরা বলেন, “দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি চলাকালীনই ওই মহিলাকে ধাক্কা মারে এক মদ্যপ যুবক। ট্রেন থেকে বাইরে ছিটকে পড়েন মহিলা। এই দৃশ্য দেখে ট্রেনের ভিতর থেকে অন্য যাত্রীরা চিৎকার করে ওঠেন। কিন্তু এগিয়ে এসে ওই মহিলাকে তোলার সাহস পাননি। কারণ ওই ছেলেগুলি প্রত্যেককে হুমকি দিচ্ছিল। এরপরে ওরা পাশের কামরায় চলে যায়।” পরে ওই দলটি চাঁপাপুকুর স্টেশনে নেমে যায় বলে জানান যাত্রীরা।
প্রায়দিনই ট্রেনে এইরকম সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। প্রতিবাদ করলে কপালে জোটে মার। যাত্রীদের অভিযোগ, একদল যুবক আছে যারা কলকাতায় বিভিন্ন কারখানায় কাজ করে। তারা প্রায়ই ট্রেনের গেট আটকে তাসের আসর বসায়। তাদের কোনও ভাবেই ওই জায়গা থেকে তোলা যায় না। রেল পুলিশও এদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয় না বলে অভিযোগ। ট্রেন ফাঁকা থাকলেও তারা ট্রেনের ভিতরে গিয়ে বসতে চায় না। এতে ট্রেনে ওঠা নামা করতে সমস্যায় পড়তে হয় যাত্রীদের। বিপদের আশঙ্কা বাড়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy