থমকে শৈশব।—ছবি: শান্তনু হালদার।
বাড়ির উঠোনে খোলা আকাশের নীচে বাঁশের তৈরি একটি খাঁচা। তার মধ্যে বছর বারোর একটি ছেলে প্লাস্টিকের একটি ছেঁড়া বস্তার টুকরোর উপরে উদম হয়ে বসে কাঁদছে। শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্যহীন ওই কিশোরকে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে সোমবার সন্ধ্যায় উদ্ধার করল পুলিশ। চিকিৎসার জন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনাটি হাবরা থানার বেড়গুম ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের পেয়ারাতলা এলাকার। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পেয়ারাতলার বাসিন্দা আবদুল রেজ্জাক মোল্লার সঙ্গে সাংসারিক অশান্তির জন্য বছর পাঁচেক আগে তাঁর প্রথম পক্ষের স্ত্রী মনোয়ারার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তাঁদের তিন ছেলে। বড় ও ছোট ছেলেকে নিয়ে মনোয়ারা চলে যান। মেজো ছেলে শামিমকে তিনি রেখে যান।
পরে রেজ্জাক রাবিয়া নামে এক মহিলাকে বিয়ে করেন। তার তিন বছরের একটি ছেলে রয়েছে। শামিম জন্মের পর থেকেই শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। রেজ্জাক মুম্বইতে একটি কারখানায় গাড়ি সারাইয়ের কাজ করেন। কয়েক মাস অন্তর তিনি বাড়ি আসেন। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কয়েক মাস ধরে রাবিয়া তার সৎ ছেলে শামিমকে ওই ভাবে খোলা আকাশের নীচে রেখে দিচ্ছে।
সোমবার দুপুরে হাবরা থানার আইসি মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মোবাইলে পরিচয় গোপন করে ওই এলাকার এক বাসিন্দা ফোন করে গোটা ঘটনার কথা জানান। মৈনাকবাবু চাইল্ড লাইন ও চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। চাইল্ড লাইন সংস্থার দুই সদস্যকে নিয়ে আইসি ওই বাড়িতে গিয়ে দেখেন বৃষ্টির মধ্যেও শামিমকে খোলা আকাশের নীচে বাঁশের খাঁচায় রাখা হয়েছে। বাসিন্দারা পুলিশকে জানিয়েছেন, সাত সকালে শামিমকে খাঁচায় পুরে দেওয়া হত। ঝড় বৃষ্টিতেও তোলা হত না। তবে দীর্ঘ ক্ষণ মুশলধারায় বৃষ্টি হলে তাকে মাঝেমধ্যে মাটির বারান্দায় তোলা হত। রাবিয়া রাতে শুতে যাওয়ার আগে অবশ্য তাকে ঘরে তুলত। তাকে ঠিক মতো খেতেও দেওয়া হত না বলে অভিযোগ। এক গ্রামবাসী বলেন, “সৎ মায়ের এমন আচরণ অমানবিক। নিষেধ করা সত্ত্বেও রাবিয়া শোনেননি। চিকিৎসাও করানো হয়নি।”
ওই কিশোরকে আপাতত হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। রাবিয়াকে পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। প্রয়োজনে তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে বলে পুলিশ জানিয়েছে। হাবরা থানার পুলিশ ফোনে মুম্বইতে রেজ্জাকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ছেলেকে খাঁচায় পুরে রাখার কথা তিনি জানতেন না বলে দাবি করেছেন রেজ্জাক। প্রতিবেশীরা অবশ্য ওই কথা মানতে চাননি। রাবিয়া জানান, কিশোরকে ওই ভাবে না রাখলে ও হামাগুড়ি দিয়ে চলে যায়। তাই ওই ভাবে রাখা হয়েছিল। তবে ঠিক সময়ে ঘরে তোলা হত। পুলিশ জানিয়েছে, ওই কিশোর হাঁটতে পারে না। কথাও ঠিক ভাবে বলতে পারে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy