Advertisement
E-Paper

খোলা আকাশের নীচে মীন কেনাবেচা সাগরে

সিকি শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও মাথায় ছাদ জুটল না সাগরের কচুবেড়িয়া মীন বাজারের। সাগরে পান বাদ দিলে মানুষের কাঁচা পয়সা আয়ের আর এক উপায় মীন। নদী-সমুদ্র বেষ্টিত সাগরের চার দিকেই মানুষ ‘জাল’ পেতে মীন ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। সাগরে মীন বিক্রির জন্য কয়েকটি বাজার রয়েছে। তার মধ্যে কচুবেড়িয়া বাজারটি প্রধান ও আকারে বড়।

শিবনাথ মাইতি

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫৪

সিকি শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও মাথায় ছাদ জুটল না সাগরের কচুবেড়িয়া মীন বাজারের।

সাগরে পান বাদ দিলে মানুষের কাঁচা পয়সা আয়ের আর এক উপায় মীন। নদী-সমুদ্র বেষ্টিত সাগরের চার দিকেই মানুষ ‘জাল’ পেতে মীন ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। সাগরে মীন বিক্রির জন্য কয়েকটি বাজার রয়েছে। তার মধ্যে কচুবেড়িয়া বাজারটি প্রধান ও আকারে বড়। কিন্তু সেটির কোনও স্থায়ী ঠিকানা নেই। কচুবেড়িয়া বাসস্ট্যান্ডের উল্টো দিকে পঞ্চায়েত সমিতির ইটপাতা চাতালে অস্থায়ী ভাবে সেটি বসে। শ’তিনেক ব্যবসায়ী ওই বাজারে মীন কিনতে আসেন। প্রায় হাজার তিনেক মৎস্যজীবী আসেন মীন বিক্রি করতে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানালেন, শুধু সাগর নয়, মীনের মরসুমে হুগলি নদী পেরিয়ে পূর্ব মেদিনীপুর থেকেও কেউ-কেউ মীন বিক্রি করতে আসেন। এত মানুষের ভরসাস্থল হয়েও খোলা আকাশের নীচেই চলছে বেচাকেনা। তবু সেটিকে পাকা করার কোনও তাদিগই নেই প্রশাসনের। স্থানীয় বিধায়ক বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা বলেন, “আমার কাছে কোনও আবেদন জমা পড়েনি। তবে রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে স্থায়ী বাজার তৈরি করা যায় কি না, দেখছি।”

মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, “১০টি মীন বাজার তৈরি করার জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন করা হয়েছে।” তাঁর দাবি, এত দিন মীন বাজার তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার দিত ৯০ শতাংশ টাকা। মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি বাকিটা দিত। এখন থেকে কেন্দ্র দেবে ৪০ শতাংশ। বাকি ৬০ শতাংশ সমবায় সমিতিকে দিতে বলা হয়েছে। সেই জন্যই বাজার তৈরির কাজ থমকে রয়েছে বলে তাঁর দাবি। সেই সঙ্গে জমিজট তো রয়েছেই।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতি হিসেবে তাঁরা সরকারি স্বীকৃতি পেয়েছেন ১৯৯৯ সালে। তার অনেক আগে থেকেই চলছে মীন কেনাবেচা। স্থায়ী বাজার না থাকায় তাঁরা সাগর মেলার সময়ে তিন-চার দিন কেনা-বেচা বন্ধ রাখতে বাধ্য হন। বছর দেড়েক আগে একটি স্থায়ী মীন বাজার, বিদ্যুতের সংযোগ, শৌচালয় গড়ার জন্য সাগর পঞ্চায়েত সমিতির কাছে লিখিত আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সমিতির তরফ থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। সাগর কচুবেড়িয়া মৎস ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক প্রশান্ত দাসের আক্ষেপ, “গরিব মানুষের কারবার বলেই হয়তো প্রশাসনের কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই।”

• বাজারে শেড নেই

• শৌচাগার নেই

• পর্যাপ্ত জল মেলে না

• নদী পেরোনোয় সমস্যা

• মেলায় বন্ধ বেচাকেনা

মীন ব্যবসায়ীরা জানান, বাজার বসার আগে মুড়িগঙ্গা থেকে অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়িতে জল ভরে রাখতে হয় তাঁদের। কিন্তু কোনও স্থায়ী ছাউনি না থাকায় তা আকাশের নীচে রাখতে বাধ্য হন তাঁরা। রোদে তা তেতে ওঠে। সেই গরম জলেই মীন রাখতে বাধ্য হন তাঁরা। ফলে অনেক মীন মরে যায়। ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ, স্থায়ী বাজার থাকলে তাঁদের এ ভাবে লোকসানের মুখে পড়তে হত না। মীন ব্যবসায়ী মনোরঞ্জন সাউ বলেন, “দীর্ঘ ২৫-২৬ বছর ধরে এই বাজার চলছে। অথচ আলাদা করে চিনিয়ে দেওয়ার মতো বাজারের অস্তিত্ব নেই।”

সবচেয়ে সমস্যা হয় গরমের সময়। চৈত্র-বৈশাখের দিনে চড়া রোদ পড়লে তবেই বিকেল ৪টে-সাড়ে ৪টের সময়ে বাজার বসে। খানিক কেনা-বেচা হতে না হতে অন্ধকার নেমে আসে। বাজারে বিদ্যুতের সংযোগ সে ভাবে না থাকায় বাজার বন্ধ হয়ে যায়। বর্ষায় আবার মীনের মরসুম জোরকদমে চললেও ছাউনি না থাকায় বৃষ্টিতে ভিজেই বেচাকেনা করতে হয়। কাছে একটি দোকান রয়েছে। জোর বৃষ্টি এলে মীন ফেলে ছুটতে সেখানেই ঠাঁই নিতে ছুটতে হয় ব্যবসায়ীদের। কিছু ব্যবসায়ী পলিথিন বা হোগলা দিয়ে অস্থায়ী ছাউনি তৈরি করেন, কিন্তু তাতে সামাল দেওয়া যায় না।

মৎস্যজীবী শান্তিরাম পাত্র বলেন, “অভাবের তাড়নায় আমাদের সারা দিন জলে পড়ে মীন ধরতে হয়। বিকেলে বাজারে বিক্রি করতে আসি। কিন্তু শীতে-গরমে সেখানেও মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু মেলে না।” সাগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অনিতা মাইতি অবশ্য দাবি করেন, “গত ৩৪ বছর ধরে সিপিএম কিছুই করেনি। আমরা এখন তার দ্বিগুণ কাজ করছি। মীনের বাজার নিয়ে আমাদের কিছু চিন্তভাবনা রয়েছে।” কী সেই চিন্তাভাবনা এবং কবে তা বাস্তবায়িত হবে, তার সদুত্তর অবশ্য মেলেনি।

sagar sibnath maiti
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy