Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

গঙ্গাসাগর ঘিরে পর্যটন কেন্দ্রের দাবি

তীর্থস্থান হিসেবেই শুধু নয়, সাগরবাসীর দাবি গঙ্গাসাগরকে কেন্দ্র করে সুসংহত পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হোক। মকর সংক্রান্তিতে তো বটেই, এমনিতেও সারা বছর পুণ্যার্থীদের ভিড় লেগে থাকে সাগরে। কিন্তু সাগরদ্বীপকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার সমস্ত সম্ভাবনা আছে বলেই মনে করেন এখানকার মানুষ। লাইট হাউস, বেণুবন, তপোবনের মতো একাধিক দর্শনীয় জায়গা রয়েছে আশপাশেই। যেখানকার উন্মুক্ত আকাশ, বালিয়াড়ি, সমুদ্র সৈকত, ঝাউবন মানুষের মন ছুঁয়ে যায়।

গঙ্গাসাগরে জলে নেমে উচ্ছ্বাস পর্যটকদের। নিজস্ব চিত্র।

গঙ্গাসাগরে জলে নেমে উচ্ছ্বাস পর্যটকদের। নিজস্ব চিত্র।

শিবনাথ মাইতি
শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৩৪
Share: Save:

তীর্থস্থান হিসেবেই শুধু নয়, সাগরবাসীর দাবি গঙ্গাসাগরকে কেন্দ্র করে সুসংহত পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হোক।

মকর সংক্রান্তিতে তো বটেই, এমনিতেও সারা বছর পুণ্যার্থীদের ভিড় লেগে থাকে সাগরে। কিন্তু সাগরদ্বীপকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার সমস্ত সম্ভাবনা আছে বলেই মনে করেন এখানকার মানুষ। লাইট হাউস, বেণুবন, তপোবনের মতো একাধিক দর্শনীয় জায়গা রয়েছে আশপাশেই। যেখানকার উন্মুক্ত আকাশ, বালিয়াড়ি, সমুদ্র সৈকত, ঝাউবন মানুষের মন ছুঁয়ে যায়। কিন্তু গঙ্গাসাগরে যাঁরা আসেন, তাঁদের ক’জনই বা ঘুরে দেখেন এই সমস্ত জায়গা। ওই এলাকাগুলিতেও উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে তুললে এবং তার প্রচার চালালে পর্যটন শিল্পের লাভের পাশাপাশি এলাকার অর্থনীতিও আরও মজবুত হবে বলে মনে করেন এলাকার বাসিন্দারা।

সাগরে পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, সে কথা মানছেন স্থানীয় বিধায়ক বঙ্কিমচন্দ্র হাজরাও। তিনি জানান, ইতিমধ্যেই সাগরে পর্যটকদের জন্য ১০০ বেডের একটি ট্যুরিস্ট লজ ও ১০টি কটেজ গড়ে তোলা হয়েছে। যাত্রীদের জন্য ফুড কোর্ট ও স্থানীয় দোকানদারদের জন্য স্টলের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়াও, কচুবেড়িয়াতে একটি ‘স্বাগতম গেট’ ও ‘পর্যটন সহায়ক কেন্দ্র’ গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। গঙ্গাসাগর পঞ্চায়েতের প্রধান হরিপদ মণ্ডল জানান, গঙ্গাসাগরে বর্তমান রাত্রি যাপনের জন্য যে পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে তাতে অনায়াসে দশ হাজারেরও বেশি মানুষকে জায়গা করে দেওয়া যেতে পারে।

এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য শান্তনু দাস বলেন, “তীর্থস্থান হিসেবে সাগরের নাম আলাদা করে উল্লেখ করার দরকার পড়ে না। দরকার যেটা, তা হল সাগরের পর্যটকদের চোখকে টানে এমন জায়গাগুলোকেও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরা। পর্যটকেরা যাতে সেই সব জায়গাও ঠিকমতো ঘুরে দেখতে পারেন। সে জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশিকা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, এ সবের উন্নতি দরকার।” তাঁর মতে, যতই পর্যটকেরা ওই সব এলাকায় যাবেন, ততই লাভবান হবেন স্থানীয় দোকানদার, ছোট ব্যবসায়ী, রিকশাওয়ালা, হোটেল মালিকেরা। এর ফলে ভারি শিল্পহীন, মিন-পান-লঙ্কা নির্ভর সাগরের অর্থনীতিটাই ঘুরে দাঁড়াবে বলে দাবি তাঁর। পেশায় শিক্ষক ব্যোমকেশ পাণ্ডার কথায়, “পর্যটনের স্বার্থে শহরের রাস্তাঘাট এবং যানবাহনের দিকে নজর দিতে হবে। পরিকল্পনা মাফিক উন্নতি ঘটাতে হবে গঙ্গাসাগরের। নিয়মিত রাস্তাঘাট পরিস্কার ও সংস্কারের দিকে নজর রাখতে হবে। কেননা, একজন বহিরাগত পর্যটকের কাছে এই জিনিসগুলি বেশি গুরুত্ব পায়।” যানবাহনের ভাড়ার উপরে নিয়মিত নজরদারি ও যাত্রী স্বাচ্ছ্যন্দের খেয়াল রাখতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

প্রতি বছরই সাগরমেলা উপলক্ষে যে বিশাল আয়োজন করা হয়, তাতে দুটো কাঁচা পয়সার মুখ দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। হোগলা কটেজ, জেটি, অস্থায়ী শৌচাগার-সহ নানা নির্মাণে স্থানীয় মানুষদের শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তা ছাড়া, মেলার সময় চা পানের স্টল, খাওয়ার দোকান দিয়েও প্রচুর আয় করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থায়ী ডালা-মালার দোকানদারেরা তো রয়েছেনই। পেশায় শাঁখা দোকানের ব্যবসায়ী পুষ্প হালদার আবার অন্য একটি দিক উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “এমনিতেই সারা বছর যে তীর্থযাত্রীরা আসেন, তাঁরা স্মারক হিসেবে কিছু না কিছু কিনে নিয়ে যান। কিন্তু সাগরকে যদি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায়, তা হলে বিক্রিবাটা আরও বেশি হবে।” তাঁর অভিজ্ঞতায়, পুণ্যার্থীদের থেকেও কেনাকাটা বেশি করেন সাধারণ পর্যটকেরা। সমুদ্র সৈকতে নেমে পরিবারের লোকেদের সঙ্গে ফটো তোলার ধুম পড়ে। সাগরে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হলে সারা বছর ধরেই সেই ফটোগ্রাফারদের আয় বাড়বে বলে আশা। (শেষ)

বিধায়ক জানান...

বিধানচন্দ্র রায়ের আমলে দিঘাকে যেমন পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল, তেমনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ও সাগরকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন বলে জানান বিধায়ক বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা। তিনি বলেন, “রাধাকৃষ্ণনগর থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার লম্বা সমুদ্র সৈকত জুড়ে একটি পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য জঙ্গলের ভেতরে ছোট ছোট কটেজ তৈরি হবে। রাস্তা হবে। সে জন্য সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে ১৩০০ কোটি টাকা। ২৪ শতাংশ দেবে রাজ্য সরকার। বাকিটা দেবে লগ্নিকারী সংস্থা।” তিনি আরও জানান, সিঙ্গাপুরের শিল্পপতিদের বিনিয়োগের জায়গা করে দেওয়ার জন্য সাগরের সমুদ্র সৈকতকে বেছে নেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে সাগরের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিধায়ক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

amar sohor shibnath maiti gangasagar tourist spot
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE