Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

জমির দাম বাড়ছে, সঙ্গে বাড়ছে অপরাধও

ইছামতীর এক পারে কাচ লাগানো দু’তিনতলা বাড়ি। অন্য পারে পাঁচ-ছ’তলা বড় বড় সুদৃশ্য ফ্ল্যাট। গত কয়েক বছরের মধ্যে বসিরহাট শহর-সংলগ্ন এলাকায় এমনই পরিবর্তন দেখে তাক লেগে যায়। এলাকার উন্নতি যতটা না হয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি হয়েছে নতুন নতুন দোকান, বাড়ি, ফ্ল্যাট। আর সেই সঙ্গেই কিছু লোকের হাতে কাঁচা টাকার পরিমাণ দেখেও চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার জোগাড় হয়।

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৫৭
Share: Save:

ইছামতীর এক পারে কাচ লাগানো দু’তিনতলা বাড়ি। অন্য পারে পাঁচ-ছ’তলা বড় বড় সুদৃশ্য ফ্ল্যাট। গত কয়েক বছরের মধ্যে বসিরহাট শহর-সংলগ্ন এলাকায় এমনই পরিবর্তন দেখে তাক লেগে যায়। এলাকার উন্নতি যতটা না হয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি হয়েছে নতুন নতুন দোকান, বাড়ি, ফ্ল্যাট। আর সেই সঙ্গেই কিছু লোকের হাতে কাঁচা টাকার পরিমাণ দেখেও চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার জোগাড় হয়। কয়েক দিন আগেও যে ছিল গাড়ি চালক, বর্তমানে সেই নিজে গাড়ি-বাড়ি হাঁকিয়ে বসেছে। অন্য ছোটখাট পেশায় যুক্ত লোকজনও হঠাৎই আমূল বদলে গিয়ে প্রচুর টাকার মালিক হয়ে বসেছে। গরু ও সোনাপাচারের পেশার একটা হাত তার পিছনে থাকতে পারে। সেই সঙ্গে মেছোভেড়ি বা ইটভাটার ব্যবসাও আছে। আর আছে জমির দালালি।

লাভের ব্যবসা হওয়ার জন্যই বসিরহাট শহরে হাউজিং তৈরি বেড়েছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জমির দাম। স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এখন আর বিঘা প্রতি কিংবা শতক প্রতি জমির দাম করে না কেউ। জমির অবস্থান (পজিশন) দেখে দাম ঠিক হয়। জমি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত এক জনের কথায়, “শহরের মধ্যে এখন এক-দু’কাঠা জমি ৪০-৫০ লক্ষ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে। দু’কামরার ফ্ল্যাটের মূল্যও আকাশ ছোঁয়া। ২০-৩০ লক্ষ টাকা তো বটেই। কেন এত দাম বাড়ছে? এক জমি ব্যবসায়ীর কথায়, “বসিরহাট সীমান্ত এলাকা হওয়ায় এখানে অধিকাংশ ব্যবসা লাভজনক। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের একটা বড় অংশ বাংলাদেশে যাচ্ছে। বাংলাদেশে জমি-বাড়ি বিক্রি করে প্রচুর পরিমাণে মানুষ এ দিকে আসছে। এ পারে তাদের একটা বড় অংশের হাতেই দেদার টাকা। সে কারণে জায়গা-জমির দাম আরও বাড়ছে। একবার একটা জমি কিনে বিক্রি করতে পারলে বেশ কয়েক বছর বসে খাওয়ার মতো ব্যবসা হাত ছাড়া করতে চাইছে না এলাকার দালাল, প্রমোটাররা। জমির কারবারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এলাকায় কালো টাকা উড়ছে বাতাসে। জমির দামও বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।

বসিরহাটের দালালপাড়ার বাসিন্দা অশীতিপর শিক্ষিকা লতিকা দে সম্প্রতি খুন হন। তারপরে জমি কেনাবেচা নিয়ে নানা তথ্য সামনে এসেছে। শিক্ষিকাকে খুনে গ্রেফতার করা হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শঙ্কর বিশ্বাস-সহ কয়েক জনকে। বৃদ্ধা তাঁর শরিকি জমি বিক্রিতে নারাজ হওয়াতেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছে পুলিশ। জমি-সংক্রান্ত বিষয়ে ক’দিন আগেও সাঁইপালায় খুন হয়েছেন এক জন। এ ছাড়াও জমি কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে খুনের সংখ্যা নেহাত কম নয়। পুলিশের পরিসংখ্যান মতো, গত পাঁচ-ছবছরে লতিকাদেবী-সহ জমি বিবাদ এবং বখরা নিয়ে বসিরহাটে খুন হয়েছেন অন্তত ১০-১২ জন। এক পুলিশ অফিসারের কথায়, তদন্তে বেরিয়ে মৃত শিক্ষিকার প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, এক দল দুষ্কৃতীর দাপটে জমি ফাঁকা রাখার উপায় নেই। কোমরে রিভালবার গুঁজে তারা হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ায় জমির জন্য। আইনি জটিলতায় আটকে থাকা জমির কদর আরও বেশি। ওই জমি অনেক কম টাকায় পাওয়া যায়। তারপর নানা কারসাজি করে সেই জমিই বহু গুণ বেশি দামে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে বললেন, “যে ভাবে জমি নিয়ে হুমকি, মারামারি-খুনোখুনি ঘটছে, তাতে একটা সময়ে মানুষ সম্মিলিত ভাবে প্রতিবাদ করবেন॥

লতিকাদেবীর জমির কী দাম পেত প্রমোটাররা? এক পুলিশ অফিসার বলেন, “যা জানা গিয়েছে, দালালপাড়ায় তেমন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় না হলেও আট শরিকের ২০ কাঠা জমির মধ্যে মাত্র সাড়ে ১৭ কাঠা জমি প্রমোটাররা কিনেছিল ৪২ লক্ষ টাকায়। মামলা চলা সত্ত্বেও ওই জমির ৮ কাঠা তারা বিক্রি করে ৩২ লক্ষ টাকায়। বৃদ্ধার থেকে তাঁর ভাগের আড়াই কাঠা জমি পেলে কোটি টাকার উপরে বিক্রি করতে পারত প্রমোটাররা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

southbengal basirhat nirmal basu crime land
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE