রবিবার সকাল সাড়ে ৮টা। ডায়মন্ড হারবার পুরনো কেল্লার মাঠের পিকনিক স্পটে কলকাতার মানিকতলা থেকে আসা মলয় কর্মকার, তাঁর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হাজির। মাঠে গাড়ি রেখে, কিছুটা এগিয়ে হুগলি নদী লাগোয়া প্রায় নিশ্চিহ্ন পুরনো কেল্লার পাশের ফাঁকা জমিতে পৌঁছলেন ওঁরা। দুপুরে রান্না বসাতে গিয়েই উঠল জলের কথা। কিন্তু কোথায় জল? খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, পিকনিক স্পটে ঢোকার মুখে রয়েছে পানীয় জলের ব্যবস্থা। আবার মিনিট দশেক হেঁটে সকলে ছুটলেন জলের সন্ধানে।
এই ছবি শুধু ডায়মন্ড হারবারের পিকনিক স্পটের নয়। পানীয় জল ও শৌচাগারের আরও চরম সমস্যা চোখে পড়ল রায়চক ও ফলতার পিকনিক স্পটে গিয়ে।
সমস্যার কথা শুনে ফলতা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মঞ্জু নস্কর অবশ্য আকাশ থেকে পড়লেন। তাঁর বক্তব্য, “সে কি! পিকনিক স্পটের এমন অবস্থা আমি জানতামই না। আমি ভিড়ভাট্টা পছন্দ করি না। তাই কখনও যাওয়া হয়নি।”
ডায়মন্ড হারবার মহকুমায় হুগলি নদীর তীরে গড়ে ওঠা এই পিকনিক স্পটটি বহু বছরের পুরনো। পর্যটকদের আনাগোনা প্রায় সারা বছর লেগে থাকলেও পরিষেবা দেওয়ার মতো পরিকাঠামো নেই সেখানে। কাছাকাছি পানীয় জল, শৌচাগার, রোদ-বৃষ্টি থেকে বাঁচতে নেই কোনও শেডের ব্যবস্থা। সমস্যা চরমে পৌঁছয় বিশেষ ছুটির দিনগুলিতে। ২৫ ডিসেম্বর, ১ জানুয়ারি, ২৬ জানুয়ারি ছাড়াও অন্য ছুটির দিনে প্রায় ২৫-৩০ হাজার পর্যটক পিকনিক করতে কলকাতার হাতের নাগালে এই কেল্লার মাঠে আসেন। স্পটে ঢোকার আগে গাড়ি বাবদ ২০ টাকা ও সদস্য পিছু ৫ টাকা কর দিয়েই পুরসভা পরিচালিত ওই পিকনিকের মাঠে পর্যটকেরা প্রবেশ করেন। অথচ স্পটে ঢোকার মুখে শুধু জেলা পরিষদের তৈরি কয়েকটি বাংলো ছাড়া এত পর্যটকের উপযুক্ত পরিষেবার ব্যবস্থাই নেই।
এ তো গেল ডায়মন্ড হারবারের পিকনিক স্পট। ফলতার কেল্লার মাঠ পিকনিক স্পট আরও বেহাল। ফলতার ৮৩ বাস স্ট্যান্ডে নেমে মিনিট দশেকের হাঁটা রাস্তা। মাটির এবড়ো খেবড়ো সরু রাস্তা দিয়ে চার চাকার গাড়ি ঢোকার কোনও ব্যবস্থা নেই। পিকনিক স্পটেরও প্রায় কোনও পরিকাঠামো নেই বললেই চলে। ২০-৩০ বছর আগে, হুগলি নদীর চরে গড়ে ওঠা এই পিকনিক স্পট ছিল প্রায় ১ কিলোমিটার লম্বা, একশো মিটার চওড়া। নদীর ভাঙনে তা প্রায় মুছে যেতে চলেছে।
পিকনিক স্পটে অমিল পানীয় জল, নেই কোনও শৌচাগার। আলোর বা যাত্রীশেডেরও ব্যবস্থা নেই। বাধ্য হয়ে রান্নার জন্য জল সংগ্রহ করতে ১০-১৫ মিনিট হেঁটে গ্রামের নলকূপই ভরসা। অথবা চড়া দামে জল কিনতে হবে। স্থায়ী শৌচাগার না থাকায় পর্যটকদের ছুটতে হয় এলাকায় কারও বাড়িতে বা ভাড়া দেওয়া শৌচাগারে।
একই অবস্থা রামনগরের রায়চক পিকনিক স্পটটিরও। এই স্পটটিও হুগলি নদী লাগোয়া নদী বাঁধের পাশেই। পোর্ট ট্রাস্টের প্রায় কয়েকশো একর ফাঁকা জমিতে শ’য়ে শ’য়ে মানুষ শীতের মরসুমে বেড়াতে আসেন। সারা দিন চড়ুইভাতির পরে সন্ধেয় ফিরে যান। এখানেও নেই পানীয় জল, শৌচাগার, আলো বা কোনও যাত্রী শেডের ব্যবস্থা। পানীয় জল সংগ্রহ করতে হলে প্রায় দেড় থেকে দু’কিলোমিটার দূরে রায়চক মোড়ের কাছের নলকূপ অবধি যেতে হয়। না হলে অতিরিক্ত দাম দিয়ে জল সংগ্রহ করতে হয়। নলকূপ থেকে প্লাস্টিকের ছোট ছোট ড্রামে নলকূপ থেকে পানীয় জল ভরে ভ্যানে নিয়ে গিয়ে পর্যটকদের কাছে জল বিক্রি করেন স্থানীয় মানুষ। কুড়ি লিটার জলের দাম ৩০-৪০ টাকা। জল বিক্রেতা মলিনা মণ্ডল বললেন, অবস্থা অনুযায়ী জলের দাম বাড়ে কমে।” তবে ওই পিকনিক স্পটে প্রতি বছর ব্যক্তিগত উদ্যোগে অস্থায়ী শৌচাগার হলেও এই রবিবার দুপুরে তার চিহ্ন দেখা গেল না।
এই পিকনিক স্পটগুলিতে আসা পর্যটকদের অভিযোগ, কলকাতা থেকে ডায়মন্ড হারবার, ফলতা বা রায়চকের দূরত্ব কম। ফলে পিকনিকের মরসুমে মূলত এই স্পটগুলিতেই কলকাতা বা কাছাকাছি জেলার পর্যটকেরা চলে আসেন। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে পিকনিক স্পটগুলির পরিকাঠামোর সমস্যা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন সংস্কারের উদ্যোগ করে না। প্রতি বছরই হয়রান হন অনেকে।
তবে একেবারে দায় না এড়িয়ে শেষে যদিও মঞ্জুদেবী বললেন, “কেউ সমস্যার কথা কোনও দিন বলেওনি। আমি চেষ্টা করব, অন্তত পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে একটা নলকূপের ব্যবস্থা যাতে করা যায়। নদী বাঁধের সংস্কারের জন্য সেচ দফতরের সঙ্গে কথা বলব।”
পিকনিক স্পট প্রসঙ্গে পুরপ্রধান মীরা হালদার বলেন, “অতিরিক্ত ভিড়ের দিনে অস্থায়ী শৌচাগারের ব্যবস্থা করা হয়। তবে পানীয় জল ও অন্যান্য কিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলি সমাধানের চেষ্টা চলছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy