Advertisement
E-Paper

পথশিশুদের নিয়ে ভাইফোঁটার অনুষ্ঠান কাকদ্বীপে

নতুন জামা-প্যান্ট, মালা পরে ভাইফোঁটার নেওয়ার লাইনে বাবু হয়ে বসেছিল বাবুসোনা। অচেনা দিদি কপালে চন্দনের ফোঁটা, মাথায় ধান-দূর্বা ঠেকাতেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠল সে। শুধু বাবুসোনা নয়। তার বয়সী অনেকেই হেসে গড়িয়ে পড়ল একে অন্যের গায়ে। কেউ কেউ আবার অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল অচেনা দিদিদের দিকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৪৫
লাইন দিয়ে এক ঝাঁক ভাই ফোঁটা নিতে বসেছে। নিজস্ব চিত্র।

লাইন দিয়ে এক ঝাঁক ভাই ফোঁটা নিতে বসেছে। নিজস্ব চিত্র।

নতুন জামা-প্যান্ট, মালা পরে ভাইফোঁটার নেওয়ার লাইনে বাবু হয়ে বসেছিল বাবুসোনা। অচেনা দিদি কপালে চন্দনের ফোঁটা, মাথায় ধান-দূর্বা ঠেকাতেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠল সে। শুধু বাবুসোনা নয়। তার বয়সী অনেকেই হেসে গড়িয়ে পড়ল একে অন্যের গায়ে। কেউ কেউ আবার অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল অচেনা দিদিদের দিকে।

এরা সকলেই পথশিশু। অনেকেরই বোন বা দিদি নেই। কারও থাকলেও ভাইফোঁটার অনুষ্ঠান করার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই। এ ছাড়াও, সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে তলিয়ে যাওয়া মৎস্যজীবী পরিবারের কয়েক জন শিশুও ছিল। স্থানীয় এক চা বিক্রেতার উদ্যোগে শনিবার দুপুরে কাকদ্বীপ কলেজ মোড়ে পথশিশুদের নিয়ে ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার অনুষ্ঠান হল।

কলেজ মোড়ের পাশে ছোট একটি মাঠে ওই দিন সকাল থেকে ৫-১২ বছর বয়সী কচিকাঁচাদের অনেকে বাবা-মায়ের হাত ধরেই দিদির ফোঁটা নিতে হাজির হয়। কাকদ্বীপের উকিলেরহাট, গঙ্গাধরপুর, গাজিরমহল, শ্রীনগর, সূর্যনগর, নিশ্চিন্তপুর-সহ ১০-১৫টি গ্রাম থেকে আসা সকলের জন্য ব্যবস্থা ছিল নতুন জামা-প্যান্টের। সদ্য কিশোরী দিদিরাও নতুন কাপড় পরে, পিতলের থালায় চন্দন-ধান-দূর্বা নিয়ে ফোঁটা দেওয়ার অপেক্ষায় আগে ভাগেই তৈরি ছিল। একে একে কচি কচি ভাইয়েরা হাজির হয়ে নতুন জামা-প্যান্ট পরে, মাঠে লম্বা করে পাতা সাদা কাপড়ের উপর বসে পড়ল।

দিদিদের দলে কারও হাতে চন্দনের থালা। কারও হাতে শাঁখ। একে একে ভাইদের কপালে ফোঁটা, মাথায় দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদের পর্ব চলল। বাতাসে ভাসছে শঙ্খধ্বনি। প্রায় ঘণ্টা খানেক ধরে অনুষ্ঠান চলে। এরপরেই কাগজের থালায় করে খাবারের তোড়জোড়। মেনুতে ছিল লুচি, পরোটা, ছোলার ডাল, মিষ্টি ও ফলমূল। কচি হাতে দিদিরাই সবাইকে পরিবেশনের দায়িত্ব অনায়াসে সামলাল।

নৈহাটিতে বোনের কাছে ফোঁটা নিতে এসেছিলেন গায়ক
রাঘব চট্টোপাধ্যায়। ছবিটি তুলেছেন সজল চট্টোপাধ্যায়।

দিদিদের মধ্যে প্রিয়াঙ্কা পাহাড়ি, পূজা পাইকরা বলল, “আমাদের ভাই নেই। তাই কোনও বছর ভাইফোঁটা দিতে পারি না। তা ছাড়া, পাশের বাড়িতে যখন ভাইফোঁটার শাঁখের আওয়াজ কানে আসে, আমাদের খুব মন খারাপ করে। এ বার থেকে একটা নয়, অনেক ভাইকে ফোঁটা দেওয়ার সুযোগ পেলাম।” আর কচিকচি ভাইদের কথায়, “দিদি, আসছে বছর আবার হবে তো!” পর পর তিন বছর হল এই অনুষ্ঠান।

উদ্যোক্তা সুধাংশু পাইক বললেন, “এদের অনেকের দিদি আছে ভাই নেই। বা ভাই আছে দিদি নেই। এমনকী, ভাই-বোন থাকলেও হত দরিদ্র পরিবারে ভাইফোঁটা করার ইচ্ছে থাকলেও সম্ভব হয় না। ভাইফোঁটার কিছু দিন আগে গ্রামে গ্রামে গিয়ে এমনই দুঃস্থ পরিবারদের নিমন্ত্রণ করে আসি। এ বারে প্রায় ২৫০ জন বাচ্চাকে হাজির করতে পেরেছি।” কিন্তু অনুষ্ঠানে খরচ তো ভালই। সুধাংশুবাবু জানান, সারা বছর ধরে কিছু কিছু করে টাকা জমাতে থাকেন। তা ছাড়া, এমন উদ্যোগের কথা শুনে এলাকার অনেকেই স্বেচ্ছায় পাশে এসে দাঁড়ান।

Kakdwip street child bhai phota
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy