Advertisement
০৪ মে ২০২৪

পরিত্যক্ত ঘরে বাড়ছে অপরাধ, রক্ষিহীন হাসপাতাল

মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালই হোক, বা রাজ্যের সাধারণ হাসপাতাল, মফস্বলের হাসপাতালের নিরাপত্তার ছবিটা বেআব্রু হল আবারও। সরকারি হাসপাতালের ফাঁকা জায়গায় জুয়ার ঠেক, সাট্টার আড্ডা, ভবঘুরেদের আস্তানা এমনকি বেআইনি দোকান বসিয়ে রাতের অন্ধকারে নেশার দ্রব্য বিক্রির ঘটনা বিরল নয়। কিন্তু দিন কয়েক আগে ভাটপাড়ার সরকারি হাসপাতালের পরিত্যক্ত ঘরে স্ত্রীকে নিয়ে গিয়ে শ্বাসরোধ করে খুনের ঘটনায় চিন্তায় পড়েছে স্বাস্থ্য দফতর এবং স্থানীয় প্রশাসন।

নেতাজি সুভাষ টিবি স্যানিটোরিয়মের পরিত্যক্ত ভবন ঘিরে আগাছার জঙ্গল।

নেতাজি সুভাষ টিবি স্যানিটোরিয়মের পরিত্যক্ত ভবন ঘিরে আগাছার জঙ্গল।

বিতান ভট্টাচার্য
ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৪ ০২:০২
Share: Save:

মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালই হোক, বা রাজ্যের সাধারণ হাসপাতাল, মফস্বলের হাসপাতালের নিরাপত্তার ছবিটা বেআব্রু হল আবারও।

সরকারি হাসপাতালের ফাঁকা জায়গায় জুয়ার ঠেক, সাট্টার আড্ডা, ভবঘুরেদের আস্তানা এমনকি বেআইনি দোকান বসিয়ে রাতের অন্ধকারে নেশার দ্রব্য বিক্রির ঘটনা বিরল নয়। কিন্তু দিন কয়েক আগে ভাটপাড়ার সরকারি হাসপাতালের পরিত্যক্ত ঘরে স্ত্রীকে নিয়ে গিয়ে শ্বাসরোধ করে খুনের ঘটনায় চিন্তায় পড়েছে স্বাস্থ্য দফতর এবং স্থানীয় প্রশাসন।

সোমবার সকালে ভাটপাড়া সরকারি হাসপাতালের পিছনে পরিত্যক্ত ঘরে এক বধূর ঝুলন্ত দেহ মেলে। পরে পুলিশ জানতে পারে, আগের রাতে সঙ্গীতা পাসোয়ান গুপ্তা নামে ওই বধূকে পরিত্যক্ত ঘরটিতে নিয়ে গিয়ে খুন করেছিল তার স্বামী। সোমবার বিকেলেই প্রকাশ গুপ্তা নামে ওই বধূর স্বামীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জেরায় সে স্বীকার করে, সঙ্গীতাকে হাসপাতালের পিছনে ওই ফাঁকা ঘরটিতে নিয়ে যাওয়ার সময় হাসপাতাল চত্বরে লোকজন ছিল। কিন্তু কেউ আপত্তি করেননি। স্ত্রীকে খুনের পরে সকলের সামনে দিয়ে হাসপাতালের মূল ফটক দিয়েই হেঁটে বাড়ি ফিরে যায় প্রকাশ।

তার তিন দিন আগে শুক্রবার রাতেও আম গাছ বেয়ে কল্যাণীর গাঁধী হাসপাতালের নার্সিং ট্রেনিং স্কুলের আবাসনের ছাদে উঠে নাচানাচি করে বহিরাগত মদ্যপ ছেলেরা। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে সুপারকে ঘেরাও করেন ছাত্রীরা। গাঁধী মেমোরিয়াল হাসপাতালের সুপার নিরুপম বিশ্বাস বলেন, ‘‘অনেকটা জায়গা জুড়ে হাসপাতাল। তার উপর জনবসতিও কম। নিরাপত্তা-কর্মীরা থাকলেও বহিরাগতেরা কখন ঢুকছে না ঢুকছে সব সময় খেয়াল রাখা যায় না। তবে ছাত্রীনিবাসের মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। পুলিশি নিরাপত্তার বিষয়েও বলা হয়েছে।’’

দেখা যাচ্ছে, ব্যারাকপুর-কল্যাণী শিল্পাঞ্চলের বেশিরভাগ সরকারি হাসপাতালেই অনেকটা জায়গা ঝোপ-জঙ্গলে ভরা থাকছে। চিকিৎকদের আবাসন থাকলেও সেখানে অনেকেই থাকেন না। আবাসন থেকে আগাছা গজাচ্ছে। ঘরের মধ্যে উই, পোকা-মাকড়, সাপের বাসা। যে কেউ কোনও রকম নজরদারির তোয়াক্কা না করে ঢুকে পড়তে পারেন হাসপাতালে। যাতায়াতের সময় কমাতে অনেকেই হাসপাতালের ভিতর দিয়ে যাতায়াত করেন। আর পরিত্যক্ত ঘর থাকলে সামান্য দু’চার পয়সা আয়ের লোভে ঘরের দরজা, জানলার পাল্লা, লোহার শিক, ইলেকট্রিকের তারও চুরি হচ্ছে। ইটও উঠে নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে।

ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের পিছনের পরিত্যক্ত ঘরটিতে সঙ্গীতার দেহ পাওয়া গিয়েছিল, সেই ঘরে এক সময় যক্ষ্মার চিকিৎসা হত বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। এই হাসপাতালের দু’টি ফটক। যাতায়াতের সুবিধার জন্য শর্টকাট রীতি এখানেও আছে। হাসপাতালের কর্মীরা জানান, ভবঘুরেদের আড্ডা তো আছেই। মাঝে মধ্যে নেশাড়ুরা ভিড় জমায় গাছের নীচে বা পরিত্যক্ত ঘরগুলিতে। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশকে বললেও পাকাপাকি সুরাহা হয় না।

রক্ষীহীন নৈহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতাল।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসপাতালগুলির নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত রক্ষী নেই এখনও। হাসপাতালের মূল ভবন সামলাতেই ব্যস্ত হাতে গোনা কয়েক জন নিরাপত্তাকর্মী। স্বাস্থ্যপ্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, কী করে সরকারি হাসপাতালের চত্বরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা যায় ও পরিত্যক্ত ঘর ও অবৈধ ঠেকগুলো ভাঙা যায়, তা নিয়ে দ্রুত সংশ্লিষ্ট সব দফতরের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

চন্দ্রিমাদেবী বলেন, ‘‘ভাটপাড়া হাসপাতাল চত্বরে পরিত্যক্ত ঘরে খুনের ঘটনার পর আমাদের বিষয়টি ভাবাচ্ছে। বাম সরকার হাসপাতালগুলির ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ না করাতেই দুষ্কৃতীরা হাসপাতালগুলির পরিত্যক্ত ঘরকে কাজে লাগাচ্ছে। সেগুলি ভেঙে ফেলে বা রেখেই অন্য কাজে ব্যবহার করা যায় কিনা, তা আমরা দেখছি। নিরাপত্তার বিষয়টিও আমরা অবিলম্বে দেখছি।”

গাঁধী মেমোরিয়াল হাসপাতালের মতোই কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বা নেতাজি সুভাষ স্যানিটোরিয়ামে বহিরাগতদের অবাধ আনাগোনা। যক্ষ্মা চিকিৎসার এই হাসপাতালের বহু ঘরই পরিত্যক্ত। জঙ্গলে ঢাকা পড়েছে হাসপাতালের একটা অংশ, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসন। কোনও রকম পাঁচিলও নেই হাসপাতালকে ঘিরে। এক এক করে উধাও হচ্ছে পরিত্যক্ত ঘরগুলির জিনিসপত্র, লোহা, ইট, কাঠ। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দাপ্রধান সি সুধাকর বলেন, ‘‘শুধুমাত্র হাসপাতালেই ২৪ ঘণ্টা নজরদারি করার মতো পর্যাপ্ত পুলিশ নেই। তবে পুলিশি সহায়তার জন্য আমরা সব সময়ে প্রস্তুত।’’ স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী অবশ্য জানিয়েছেন, সরকারি হাসপাতালগুলিতে সবসময়ের জন্য নিরাপত্তা জোরদার করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে এ-ও বলেন, “গোটা রাজ্যের এতগুলি হাসপাতালে তা কার্যকর করতে একটুু সময় লাগবে। তবে বহু হাসপাতালেই ইতিমধ্যে বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থাকে দিয়ে নজরদারি ও নিরাপত্তার কাজ করানো শুরু হয়েছে।”

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE