এ বার নতুন লড়াইয়ে।
ফুটবল মাঠে নেমে বিপক্ষের জালে বল জড়িয়ে দিয়ে বহু বার তারিফ কুড়িয়েছেন। এ বার রাজনীতির ময়দানে তাঁর পারফর্ম্যান্স দেখতে মুখিয়ে থাকল বসিরহাটের মানুষ।
মানুষটি দীপেন্দু বিশ্বাস। কলকাতার ময়দানে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান-সহ একাধিক বড় দলের হয়ে তাঁকে খেলতে দেখতে অভ্যস্থ মানুষ। বসিরহাটের এই ভূমিপুত্রের বদরতলায় একটি ফুটবল কোচিং ক্যাম্পও আছে। এলাকার জনপ্রিয় এই তরুণকে সামনে রেখেই এ বার তৃণমূল লড়বে বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের উপনির্বাচনে। রবিবারই সে কথা ঘোষণা হয়েছে তৃণমূল ভবন থেকে।
নতুন দায়িত্ব পেয়ে কেমন লাগছে? প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় স্বভাবতই টেলিফোনের ও প্রান্তে উচ্ছ্বসিত শোনাল তিরিশোর্ধ্ব দীপেন্দুকে। টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমির প্রাক্তন কৃতী ছাত্রটি বললেন, “ফুটবলটা দাপিয়ে খেলছি বহু দিন ধরে। তবে রাজনীতি তো কখনও করিনি। তবে রাজনীতির হাত ধরে মানুষের সেবা করতে পারব। সেটা বাড়তি আনন্দের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার উপরে এত বড় দায়িত্ব দিয়েছেন, এটা খুবই সম্মানের।” দু’এক দিনের মধ্যেই প্রচারে নেমে পড়বেন বলে জানালেন দীপেন্দু।
দীপেন্দুর বাবা দিলীপ বিশ্বাস সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন। মা লীলাদেবী ঘর-সংসার সামলান। দু’জনেই ছেলের এই খবরে খুশি, জানালেন দীপেন্দু নিজেই। তিনি বলেন, “পনেরো বছর ধরে ফুটবল খেললেও প্রতি শনি-রবিবার বাড়িতে ফিরি। মানুষ আমাকে চাইলে আগে পানীয় জল-রাস্তার উন্নতি করব।”
দীপেন্দুর ‘সবর্জনগ্রাহ্য ভাবমূতি’ এবং ফুটবলার হিসাবে জনপ্রিয়তার কথা মাথা রেখে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের বড় অংশই দলনেত্রীর সিদ্ধান্তে খুশি। যদিও অন্য এক অংশের মতে, সরাসরি রাজনীতির কাউকে এনে ভোটে লড়লেই হয় তো ভাল ছিল। দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “নেত্রী সব দিক বিবেচনা করেই প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। আমরা একজোট হয়ে প্রার্থীর জন্য গা ঘামাব।”
বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের আট বারের সিপিএম বিধায়ক নারায়ণ মুখোপাধ্যায় মারা যান ১০ এপ্রিল। তাঁর মৃত্যুতে এই কেন্দ্রের উপনির্বাচন হবে। ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের আগে এই উপনির্বাচনকে ঘিরে কৌতুহল আছে সব মহলে। বিশেষ করে, গত লোকসভা ভোটের নিরিখে এই কেন্দ্রে প্রায় ৩০ হাজার ভোটে এগিয়ে আছে বিজেপি। রাজ্য জুড়ে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যায় এ বার লোকসভা ভোটে তাদের অভাবনীয় ফলে চাঙ্গা গৈরিক শিবির। ফলে এই কেন্দ্রটিকে পাখির চোখ করে এগোতে চাইছে তারা। তৃণমূলকে এই কেন্দ্রে আটকে দেওয়া গেলে তা যে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে ঘর গোছানোর সেরা উপায় হবে, তা বিলক্ষণ জানেন বিজেপি নেতৃত্ব।
এ দিনই বসিরহাটে এক সভায় এসে দলের সর্বভারতীয় সম্পাদক তথা রাজ্যের পর্য়বেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ বলেন, “বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভায় জয় দিয়ে শুরু করে আগামী ২০১৬ সালে এ রাজ্যে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী হবে।’’ এ দিনই বসিরহাটে অন্য এক অনুষ্ঠানে এসে জ্যোতিপ্রিয়বাবু আবার বলেন, “বিজেপি আমাদের কাছে কোনও বিষয়ই নয়।’’ ২০১৬ সালে কেন, বিজেপি আগামী একশো বছরেও এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে পারবে না বলেও কটাক্ষ করেন জ্যোতিপ্রিয়।
কিন্তু প্রার্থী হিসাবে এই কেন্দ্রে কাকে সামনে রাখছে বিজেপি?
সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া বসিরহাটের ছেলে তথা প্রাক্তন ফুটবলার মিহির বসুর নাম ঘুরে ফিরে উঠে আসছে। বিশেষ করে তৃণমূলের তরফে এক জন ফুটবলারের নাম এই কেন্দ্রে ঘোষণা হওয়ায় সেই দাবি আরও জোরদার হয়েছে। অন্য দিকে, বসিরহাট কেন্দ্রে লোকসভা ভোটে বিজেপির টিকিটে লড়ে যিনি লিড নিয়েছিলেন, সেই শমীক ভট্টাচার্যকেও চাইছেন দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একটা বড় অংশ।
এক সময়ে বসিরহাটের এই এলাকায় কংগ্রেসের দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু সে দিন গিয়েছে। লোকসভা ভোটে চতুর্থ স্থানে ছিলেন দলের প্রার্থী আব্দুল রহিম দিলু। উপনির্বাচন ঘিরে তারাও ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে উঠে আসছে অসিত মজুমদারের নাম। সিপিএমের অন্দরেও বেশ কিছু নাম ঘোরাফেরা করছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy