বাঁ দিকে, নিহত শিক্ষিকা। ডান দিকে, ধৃত বাপি। নিজস্ব চিত্র।
অবশেষে হিঙ্গলগঞ্জের শিক্ষিকা ফুলরেণু সরকার খুনের ঘটনায় ধরা পড়ল এক জন। বিশ্বজিৎ মণ্ডল ওরফে বাপি নামে ওই যুবককে সোমবার রাতে কণেকনগরে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের পরে হিঙ্গলগঞ্জের ওসি মনিরুল ইসলাম জানান, জেরায় খুনের কথা কবুল করেছে ওই যুবক। ধৃতকে জেরা করে খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরও দু’জনের খোঁজ চলছে। মঙ্গলবার বাপিকে বসিরহাটের এসিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে ৮ দিনের পুলিশ হেফাজাতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
হিঙ্গলগঞ্জের কণেকনগর গ্রামে একটি দোতলা বাড়িতে থাকতেন ফুলরেণুদেবী। স্বামী দীনবন্ধু সরকার বেলুড় বিদ্যামন্দির হস্টেলের কর্মী। কর্মসূত্রে থাকতেন সেখানেই। একমাত্র ছেলে শঙ্কর কলকাতায় পড়াশোনা করেন। বাড়ির কাছেই সান্ডেলেরবিল শ্রীরামকৃষ্ণ সেবা মিশনের গদাধর পাটশালার শিক্ষিকা ছিলেন ফুলরেণু। পাশাপাশি এক নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে একটি অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। গত ১৩ জুলাই রাতে বাড়িতে একাই ছিলেন ফুলরেণু। তাঁকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে নৃশংস ভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়।
মিশন স্কুলে শিক্ষকতার সুবাদে ফুলরেণুদেবীর এলাকায় ভাল পরিচিতি ছিল। তা ছাড়াও তিনি সমাজসেবার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গ্রামের মানুষ তাঁকে পছন্দ করতেন। ফলে প্রথম দিকে খুনিরা কেউ ধরা না পড়ায় এক দিকে যেমন আতঙ্ক ছড়ায় গ্রামে, তেমনই পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভও দানা বাঁধে। পুলিশকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভও দেখায় জনতা। অবরোধ তুলতে গেলে উত্তেজিত জনতার ক্ষোভের মুখে পড়ে মার খেতে হয় পুলিশকর্মীদের। হিঙ্গলগঞ্জ থানার ওসি এবং বিডিওকে দীর্ঘ ক্ষণ ঘেরাও করে রাখা হয়। পুলিশের দাবি, ঘটনাটিকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে জনতাকে উত্তেজিত করে পুলিশের উপরে আক্রমণের পরিকল্পনা করে বাপি নিজেই। কিন্তু তখনও তার বিরুদ্ধে সমস্ত প্রমাণ একত্রিত করতে না পারায় সব জেনেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
কিন্তু খুনের পিছনে কারণ কী?
পুলিশ জানিয়েছে, ফুলরেণুদেবীকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিল বাপি। তাতে রাজি ছিলেন না ওই শিক্ষিকা। সেই আক্রোশ থেকে খুন হতে পারে। খুনের পিছনে আরও একটি কারণ ইন্ধন জুগিয়েছিল বলে মনে করছেন পুলিশ কর্তারা। ফুলরেণুদেবী ও তাঁর এক আত্মীয় বেশ কিছু গ্রাহকের কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা তুলে লগ্নিসংস্থায় জমা করেছিলেন। কিন্তু আর্থিক ডামাডোল চলছিল সংস্থায়। ফলে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছিলেন না ফুলরেণু ও তাঁর ওই আত্মীয়। ফুলরেণুকে সরিয়ে দিতে পারলে গ্রাহকদের টাকার দায় তাঁর ঘাড়েই চাপানো যাবে বলে ফন্দি আঁটে তাঁর ওই আত্মীয়। পুলিশের দাবি, ফুলরেণুকে খুনের ঘটনায় টাকার বিনিময়ে আরও এক জন যোগ দিয়েছিল বাপিদের সঙ্গে।
কী ভাবে ধরা পড়ল ওই যুবক? পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার দিন দুই সাগরেদকে নিয়ে ফুলরেণুর বাড়িতে হাজির হয় বাপি। ফুলরেণু কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বাপির মাথায় রাগ চড়ে যায়। ফুলরেণু চিৎকার করে লোক জড়ো করার হুমকি দিলে তাঁর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে তিন জন। ওই শিক্ষিকা একটি টর্চ দিয়ে বাপির মাথায় ঘা মারেন। তারপরেই কুপিয়ে খুন করা হয় ফুলরেণুকে। এলাকা ছেড়ে কিছু দিনের মতো বেপাত্তা হয় তিন জন।
পুলিশ জানায়, টর্চের ঘা খেয়ে বাপি বারাসাতে এক চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিল। পরে গ্রামে ফিরে আসে। পুলিশ গ্রামের কারও উপরে সন্দেহ করছে না দেখে খানিকটা নিশ্চিন্তই ছিল সে। কিন্তু ফরেন্সিক রিপোর্ট, হাতের ছাপের রিপোর্ট-সহ আরও কিছু জিনিসের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন তদন্তকারী অফিসারেরা। সব প্রমাণ হাতে আসার পরে সোমবার রাতে বাপিকে গ্রেফতার করা হয়। তবে তার আত্মীয়দের দাবি, পুলিশ বাপিকে ফাঁসিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy