Advertisement
E-Paper

বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় চোখের জলে শেষ বিদায় পুরপ্রধানকে

আকস্মিক ভাবেই মারা গেলেন হাবরা পুরসভার চেয়ারম্যান সুবীন ঘোষ (৪৯)। গত আট দিন ধরে কলকাতার বাইপাসের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে সঙ্কটজনক অবস্থায় ভর্তি ছিলেন তিনি। গত ২৪ ডিসেম্বর সেরিব্র্যাল অ্যাটাক হয়েছিল তাঁর। বৃহস্পতিবার চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, দুপুর ২টো ৪০ মিনিট নাগাদ মারা গিয়েছেন তিনি। হাসপাতালে পৌঁছন বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার, হাবরার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, হাবরা পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও বিধায়ক তপতী দত্ত, কাউন্সিলর তারক দাস-সহ দলের বহু নেতা-কর্মী-কাউন্সিলর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:১৬
পুরপ্রধান হিসাবে সে দিনই শপথ নিয়েছিলেন সুবীন ঘোষ।

পুরপ্রধান হিসাবে সে দিনই শপথ নিয়েছিলেন সুবীন ঘোষ।

আকস্মিক ভাবেই মারা গেলেন হাবরা পুরসভার চেয়ারম্যান সুবীন ঘোষ (৪৯)। গত আট দিন ধরে কলকাতার বাইপাসের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে সঙ্কটজনক অবস্থায় ভর্তি ছিলেন তিনি। গত ২৪ ডিসেম্বর সেরিব্র্যাল অ্যাটাক হয়েছিল তাঁর। বৃহস্পতিবার চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, দুপুর ২টো ৪০ মিনিট নাগাদ মারা গিয়েছেন তিনি। হাসপাতালে পৌঁছন বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার, হাবরার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, হাবরা পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও বিধায়ক তপতী দত্ত, কাউন্সিলর তারক দাস-সহ দলের বহু নেতা-কর্মী-কাউন্সিলর।

জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “সুবীনের মৃত্যু আমাদের কাছে অপূরণীয় ক্ষতি। সুবীন ছিলেন তৃণমূলের প্রথম দিনের সৈনিক। ওঁর মতো ভাল নেতা ও কর্মী আর হয় তো হাবরায় আমরা পাব না।” মন্ত্রীর আরও সংযোজন, “দলের মিটিং-মিছিলে সুবীন প্রচুর লোক নিয়ে আসতেন। কোনও দিন দলের লাইনের বিরুদ্ধে গিয়ে কথা বলেননি।”

২০১৩ সালে ২২ অক্টোবর চেয়ারম্যান হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন সুবীনবাবু। সে সময়ে দলের ভিতরে চেয়ারম্যান হওয়ার দাবিদার ছিলেন অনেকেই। যার প্রথমসারিতে ছিলেন পুরসভার দু’বারের চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন বিধায়ক তপতী দত্ত। এ ছাড়া, কাউন্সিলর তারক দাস, ভাইস চেয়ারম্যান নীলিমেশ দাসও ছিলেন দৌড়ে। সকলকে টেক্কা দিয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চেয়ারম্যান পদে বসেন জ্যোতিপ্রিয়বাবুর খুবই ঘনিষ্ঠ সুবীন। দলের মধ্যে অনেকেরই ধারণা ছিল, জ্যোতিপ্রিয়বাবুর ইচ্ছাতেই তিনি চেয়ারম্যান হতে পেরেছিলেন। তপতীদেবীকে সরিয়ে সুবীনবাবুকে চেয়ারম্যান করায় স্থানীয় নেতা-কর্মীদের অনেকে তা মেনে নিতে পারেননি। যা নিয়ে হাবরার তৃণমূলের একাংশ ও শহরবাসীর মধ্যে তীব্র আড়োলন ছড়িয়েছিল। তার কারণ, চেয়ারম্যান হওয়ার সময়েও সুবীনবাবু শারীরিক ভাবে পুরো সুস্থ ছিলেন না।

সুবীনবাবুর মৃত্যুতে হাবরা পুরসভায় ক্ষমতার বিন্যাসে কোনও প্রভাব না পড়লেও পরবর্তী চেয়ারম্যান কে হবেন, তা নিয়ে ফের জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে দলেরই একাংশ মনে করছেন। তবে দলের জেলা সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়বাবু যে এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছেন, তা-ও মনে করছে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের একাংশ। তবে সামনেই বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন ও জেলার ২৫টি পুরসভার ভোট। তার আগে হাবরার চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে যাতে দলীয় ঐক্যে ফাটল দেখা না দেয়, তা নিশ্চিত করার দায় আছে তৃণমূল নেতৃত্বের।

২০১৩ সালের পুরসভার নির্বাচনে ২৪টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছিল ১৬টি, কংগ্রেস পায় ১টি আসন। সিপিএম পেয়েছিল ৭টি আসন। পরে কংগ্রেসের কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। চেয়ারম্যান পদে শপথ নিয়ে সুবীনবাবু বলেছিলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর আদর্শকে সামনে রেখে হাবরা শহরের উন্নয়নই হবে নতুন পুরবোর্ডের লক্ষ্য।” তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, শহরে হকার্স মার্কেট করে যানজট সমস্যা মেটাবেন। বাস টার্মিনাস তৈরি করবেন। নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়ন করবেন। পাশাপাশি বিধায়ক ও সাংসদের পরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়িত করবেন বলেও আশ্বাস দেন। সব কাজ তিনি শেষ করে যেতে না পারলেও প্রতিশ্রুতি পালনে উদ্যোগী হয়েছিলেন বলে এলাকার মানুষ সংখ্যাগরিষ্ঠ মনে করেন। যে কোনও সমস্যা নিয়ে মানুষ তাঁর কাছে যেতে পারতেন। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন সুবীন। নিজে খেতে ও খাওয়াতে ভালবাসতেন। সন্ধ্যার পরে পুরসভায় কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে না খাইয়ে ছাড়তেন না। এ দিন রাত পৌনে ৮টা নাগাদ সুবীনবাবুর দেহ পৌঁছয় হাবরায়। বৃষ্টি মাথায় কাতারে কাতারে মানুষ ছাতা নিয়ে হাজির হন। অনেকের চোখেই ছিল জল। রাতে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় নিমতলায়।

দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে, সুবীনবাবুর উচ্চমাত্রায় সুগার ছিল। কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। নিয়মিত ডায়ালিসিস করাতে হত। ২৪ ডিসেম্বর সেরিব্রাল অ্যাটাক হয় তাঁর। ওই দিন থেকেই তাকে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। তাতেও শেষরক্ষা হল না।

স্থানীয় হাটথুবা আদর্শ বিদ্যাপীঠ থেকে মাধ্যমিক পাশ করে সুবীন ভর্তি হয়েছিলেন অশোকনগরের কল্যাণগড় বিদ্যামন্দির স্কুলে। সেখান থেকে উচ্চমাধ্যামিক পাশ করেন। তারপরে ভর্তি হন হাবরার শ্রীচৈতন্য কলেজে। সেখানে পড়াকালীনই ছাত্র রাজনীতিতে হাতেখড়ি তাঁর। তখন অবশ্য সুবীন ছাত্র পরিষদ করতেন। স্থানীয় কংগ্রেস নেতা বিমান দত্তের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। ওই কলেজ থেকেই তিনি স্নাতক হন। তৃণমূল তৈরি হলে সুবীনবাবু সেখানে যোগ দেন। ১৯৯৮ ও ২০০৩ সালে পর পর দু’বার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ সালে সিপিএমের দাপুটে নেতা তথা লোকাল কমিটির সম্পাদক বাবুল দেবের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সুবীনবাবুর জয়ে বিস্মিত হয়েছিলেন হাবরাবাসী।

২০০৮ সালে তাঁর ওয়ার্ডটি সংরক্ষিত হওয়ায় স্ত্রী কাকলিদেবী ভোটে দাঁড়িয়ে জিতে যান। ২০১৩ সালে সুবীনবাবু ফের নিজের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে দাঁড়িয়ে জয়লাভ করেন ও চেয়ারম্যান হন। সুবীনবাবুর বাড়ি কামারথুবা এলাকায়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষ তাঁর বাড়িতে ভিড় করতেন। কখনও বিরক্ত হতেন না সুবীন। বাসিন্দারা জানালেন, অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি হকার্স মার্কেট তৈরি করেছিলেন। হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা ও পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দেন। যানজট সমস্যা মেটাতেও নানা পরিকল্পনা করেছিলেন।

সিপিএমের পুরসভার বিরোধী দলনেতা ঋজিনন্দন বিশ্বাস বলেন, “আমাদের সঙ্গে ব্যবহার খুবই ভাল ছিল। হাবরার উন্নয়নে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শারীরিক সমস্যায় ভুগতেন।”

south bengal municipality chairman habra subin ghosh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy