কলকাতার এক হাসপাতালে ভর্তি পাথরপ্রতিমার রামগঙ্গা গ্রামের এক বৃদ্ধা জরিনা বেওয়া। মাকে দেখতে যাবেন বলে কালাম মোল্লা বাড়ি থেকে বিকেল পৌনে ৪টে নাগাদ রামগঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে হাজির হলেন। কিন্তু তত ক্ষণে কলকাতা যাওয়ার ভূতল পরিবহণ নিগমের শেষ বাসটি বেরিয়ে গিয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে একটি বেসরকারি মিনিবাসে চেপে লক্ষ্মীকান্তপুর স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে কলকাতায় পৌঁছতে হল তাঁকে। এমন দুর্ভোগ প্রতি নিয়তই সহ্য করতে হয় পাথরপ্রতিমা এলাকার হাজার হাজার মানুষকে।
১৯৯৪ সালে বাম আমলে রামগঙ্গা থেকে ভূতল পরিবহণ নিগমের বাস চলাচল শুরু হয়েছিল। তখন সারা দিনে ১০-১৫টি বাস চলত। যাত্রী সংখ্যার অনুপাতে হয় তো মোটামুটি কাজ চলে যেত। কিন্তু দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে। এখনও পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে বাড়ানো হয়নি বাস। উল্টে দিনের পর দিন বাসসংখ্যা কমছে। এখন রোজ ৮-১০টি বাস যাতায়াত করে।
এই ব্লকে রয়েছে ১৩টি পঞ্চায়েত। জনসংখ্যা ২ লক্ষেরও বেশি। ফলে মানুষের দুর্ভোগের একশেষ। ভূতল পরিবহণের বাস চালু হওয়ার কয়েক মাস পর থেকেই রামগঙ্গা মোড় থেকে কুলপি, ডায়মন্ড হারবার হয়ে রামনগরের নুরপুর পর্যন্ত এসডি ১১/১ মিনি বাস চালু হয়েছিল। সেই মিনি বাস প্রথমে ৩২টি চললেও এখন ১৫টিতে এসে ঠেকেছে। বাসিন্দাদের সমস্যা আরও বেড়েছে বলাইবাহুল্য।
এই ব্লক থেকে মূলত অচিন্ত্যনগর, বনশ্যামনগর, রামগঙ্গা, দিগম্বপুর, দক্ষিণরায়পুর, শ্রীনারায়ণপুর, পূর্ণচন্দ্রপুর, লক্ষ্মীজনার্দনপুর, হেড়ম্বগোপালপুর, শ্রীধরনগর পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা যাতায়াত করেন। কিন্তু বাস চলাচল কমে যাওয়ায় বর্তমানে এই সমস্ত বাসিন্দাদের মৃদঙ্গভাঙা নদী পার হয়ে যেতে হয় পাথরপ্রতিমা বাজারের দিকে। তারপর ওই বাজারের মোড় থেকে এসডি ৫০ বা এসডি ১৯ বাস ধরে কাকদ্বীপ বা ডায়মন্ড হারবারে পৌঁছে কলকাতার ট্রেন ধরতে হয়। এ ক্ষেত্রে সময় ও টাকা দু’টোই বেশি খরচ হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সারা দিনে যা সরকারি এবং বেসরকারি বাস যাতায়াত করে তা যাত্রীদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তাই বাধ্য হয়ে ছোট গাড়িগুলিতে ঝুলতে ঝুলতে লক্ষ্মীকান্তপুর স্টেশন, এবং সেখান থেকে ট্রেনে কলকাতায় যেতে হয়।
স্থানীয় এক বাসিন্দা অরিন্দম মাইতি কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বললেন, “সোনারপুরে ভাড়া বাড়িতে থাকি। শনিবার করে বাড়ি ফেরার সময়ে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। ট্রেনে এত ভীড় হয় যে ওঠা যায় না। ফলে মিনিবাসে প্রচণ্ড ভিড়ে গুঁতোগুঁতি করে যেতে হয়।” এই অবস্থায় যাতায়াত করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন বহু বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও শিশু।
প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয় না কেন?
এ বিষয়ে পাথরপ্রতিমা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শেখ আব্দুল রাজ্জাক বলেন, “সরকারি বাস বাড়ানোর জন্য একাধিকবার ভূতল পরিবহণ সংস্থাকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তারা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে যাত্রীদের ক্ষোভের মুখে মাঝে-মধ্যে আমাদেরও পড়তে হয়।” ভূতল পরিবহণ দফতর অবশ্য এ ব্যাপারে তেমন খোঁজ-খবরই রাখে না বলে বোঝা গেল। দফতরের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নিরঞ্জন সান্ডিল্য বলেন, “এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।”
ওই একই রুটের এসডি ১১/১ বাস কমে যাওয়া প্রসঙ্গে নুরপুর-রামগঙ্গা বাস মালিক ইউনিয়নের সম্পাদক রফিকুল মোল্লা বলেন, “ওই রুটে ছোট গাড়ি চলাচলের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় আমাদের লোকসানের মাত্রাও বেড়ে যাচ্ছিল। এ ছাড়া, তেলের দাম বাড়ার ফলেও অনেক বাস মালিক বাস তুলে নিয়েছেন।”
আপাতত কোনও পক্ষই কোনও সুরাহা দেখাতে না পারায় পাথরপ্রতিমার বাসিন্দাদের ভোগান্তি শেষ হওয়ার কোনও লক্ষণই নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy