Advertisement
০৭ মে ২০২৪

বদলি হলেন বনগাঁর এসডিপিও, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে তবু উদ্বিগ্ন মানুষ

কখনও ভরসন্ধ্যায় যশোহর রোডে গুলি চালিয়ে খুন। কখনও সন্ধ্যায় প্রকাশ্য বাজার এলাকায় দোকানের মধ্যে ঢুকে দুষ্কৃতীদের গুলি-অস্ত্রের কোপে প্রাণহানি। সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে আপাতনিরীহ ব্যক্তিও খুন হয়েছেন গুলিতে। বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতীরা ঢুকে আরপিএফ জওয়ানকে কুপিয়ে পালিয়ে গিয়েছে, এমন উদাহরণও আছে। তালিকাটা দীর্ঘ। ২০১৪ সালে নানা সময়ে এ ভাবেই রক্তাক্ত হয়েছে বনগাঁ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বনগাঁ শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৪৯
Share: Save:

কখনও ভরসন্ধ্যায় যশোহর রোডে গুলি চালিয়ে খুন। কখনও সন্ধ্যায় প্রকাশ্য বাজার এলাকায় দোকানের মধ্যে ঢুকে দুষ্কৃতীদের গুলি-অস্ত্রের কোপে প্রাণহানি। সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে আপাতনিরীহ ব্যক্তিও খুন হয়েছেন গুলিতে। বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতীরা ঢুকে আরপিএফ জওয়ানকে কুপিয়ে পালিয়ে গিয়েছে, এমন উদাহরণও আছে। তালিকাটা দীর্ঘ। ২০১৪ সালে নানা সময়ে এ ভাবেই রক্তাক্ত হয়েছে বনগাঁ। এ ছাড়াও ডাকাতি, গুলি করে খুনের চেষ্টা, ছিনতাই, কেপমারির মতো ঘটনাও ঘটেছে অসংখ্য। এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতাকে সঙ্গী করেই বছরটা শেষ করলেন বনগাঁবাসী। জনপ্রতিনিধিরাও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার প্রশ্নে পুলিশের উপরে ততটা চাপ সৃষ্টি করেন না বলেও অভিযোগ স্থানীয় মানুষের।

এ হেন বনগাঁয় গত ২৪ ডিসেম্বর বদলি করা হয়েছে এসডিপিও মীর সাহিদুল আলিকে। ২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বনগাঁয় কাজে যোগ দেন তিনি। এত অল্প সময়ের মধ্যে কেন তাঁকে বদলি করা হল, তা নিয়ে পুলিশ কর্তারা মুখ খুলতে চাননি। তবে এটা ঠিক যে বনগাঁয় অপরাধ বেড়েই চলেছিল। ২৪ ডিসেম্বর নতুন এসডিপিও হিসাবে কাজে যোগ দিয়েছেন বিশ্বজিত্‌ মাহাতো। তিনি ক্যানিংয়ের এসডিপিও ছিলেন।

অতীতে দেখা গিয়েছে, নতুন কেউ এসডিপিও হয়ে কাজে যোগ দিলে পুলিশি তত্‌পরতা বাড়ে। বাড়ে ধরপাকড়। কিন্তু গত সাত দিনে বাড়তি তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে না পড়ায় স্থানীয় মানুষ স্বস্তি পাচ্ছেন না।

বনগাঁ মহকুমার মধ্যে যশোহর রোডে, বনগাঁ-বাগদা রোডে বা বনগাঁ-চাকদহ সড়কে রাতে পলিশ খুঁজে পাওয়া যায় না। সারা রাত ধরেই মানুষ ওই সব পথ ধরে যাতায়াত করেন। চালক থেকে পথচারী সকলেই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। ১০ অক্টোবর স্থানীয় গাঁড়াপোতার বাসিন্দা সাত্তার মণ্ডলকে সন্ধ্যায় কলমবাগান বাজারে একটি দোকানের মধ্যে ঢুকে গুলি করে কুপিয়ে খুন দুষ্কৃতীরা। সাত্তারের বিরুদ্ধেও অবশ্য পুলিশের খাতায় বহু খুনের অভিযোগ ছিল। ২৭ জুলাই বনগাঁ শহরের বক্সিপল্লি এলাকায় সন্ধ্যায় স্থানীয় বাসিন্দা বিন্দু বক্সি বাড়ির কাছে যশোহর রোডের পাশে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁকেও গুলি করে খুন করে পালায় দুষ্কৃতীরা। ২৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় বাজার থেকে বাড়ি ফেরার সময়ে নিজের বাড়ির কাছে দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন গোপালনগরের খাবরাপোতা এলাকার বাসিন্দা ইউনুস মণ্ডল। ৯ মার্চ বনগাঁর দত্তপাড়ায় খুন হন হিমাংশু বৈরাগী। ১০ সেপ্টম্বর বাগদার ঘাটপাতিলা গ্রামে খুন হন সুরজিত্‌ বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তি। এ ছাড়াও, মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি দেহ উদ্ধার হয়েছে ২০১৪ সালে। যাদের পরিচয় জানা যায়নি এখনও।

বনগাঁ শহরের ব্যবসায়ীদের একাংশ জানিয়েছেন, ২০১২ সালের মে মাসে শহরের প্রাণ কেন্দ্র বাটারমোড় এলাকায় একটি সোনার দোকানে ভয়াবহ ডাকাতি হয়েছিল। দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমায় কয়েক জন পথচারী জখম হয়েছিলেন। তারপর থেকেই বেশি রাত পর্যন্ত দোকান খোলা রাখেন না ব্যবসায়ীরা। বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির বনগাঁ শাখার সহ সম্পাদক দিলীপ মজুমদার বলেন, “নতুন বছরে নতুন এসডিপিও-র কাছে আমরা ব্যবসায়ীরা আশা করব, যেন রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়িতে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারি।”

এমন নয় যে হঠাত্‌ করেই বনগাঁ মহকুমায় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গিয়েছে। অতীতেও বহু অপরাধের সাক্ষী বনগাঁ। তবে স্থানীয় মানুষ জানাচ্ছেন, ইদানীং দুষ্কৃতীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রকাশ্যে দিনের আলোয় কিংবা ভরসন্ধ্যায় জনবহুল এলাকাতেও অ্যাকশন চালাচ্ছে তারা। সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়া এ পারে কুকর্ম ঘটিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে তাদের। ৮ ডিসেম্বর স্কুলে যাওয়ার পথে যশোহর রোডে দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলিতে জখম হন স্কুল শিক্ষিকা অদিতি অধিকারী। হুজুর আলি নামে এক তৃণমূল নেতা ছিলেন দুষ্কৃতীদের টার্গেট। তাঁকে লক্ষ্য করেই গুলি ছুড়েছিল দুষ্কৃতীরা। লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে জখম হন অদিতি। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনায় দুষ্কৃতীরা এসেছিল বাংলাদেশ থেকে। তারা ফের বাংলাদেশেই পালিয়ে গিয়েছে। আবার ১৫ মে গাইঘাটার আংরাইলে বাড়ি থেকে মোবাইল চুরির প্রতিবাদ করে বাংলাদেশের দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হয়েছিলেন আরপিএফ জওয়ান নির্মল ঘোষ। গাইঘাটার সুটিয়া এলাকার যুব তৃণমূল নেতা পাঁচপোতা-গোবরডাঙা সড়ক ধরে যাওয়ার সময় দুষ্কৃতীরা তাঁকে অটো থেকে নামিয়ে গুলি করে খুনের চেষ্টা করে। ঠাকুরনগরের বড়া-কৃষ্ণনগর এলাকায় দুষ্কৃতীরা একটি বাড়িতে চড়াও হয়ে গুলি-বোমা নিয়ে তাণ্ডব চালালে জখম হন তিন জন।

কিছু কিছু ঘটনায় অবশ্য পুলিশ দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতে পেরেছে। বনগাঁ লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সমীর দাস অবশ্য জানিয়েছেন, কিছু খুনের ঘটনা ঘটেছে এটা ঠিক। তবে দুষ্কৃতীদের পুলিশ তত্‌পরতার সঙ্গে গ্রেফতারও করেছে। বাগদা ও গোপালনগর থানা এলাকায় অতীতের তুলনায় ডাকাতি অনেক কমেছে। বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিত্‌ দাসেরও দাবি, “অতীতের তুলনায় আইন-শৃঙ্খলার অনেকটাই উন্নতি হয়েছে।” জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “অপরাধমূলক কাজ কিছু ঘটেছে এটা ঠিক। তবে কোনও ঘটনা ঘটার পরে দুষ্কৃতীদের সনাক্ত করে তাদের গ্রেফতারও করা হয়েছে।”

এলাকার মানুষের বক্তব্য, “খুনের ঘটনার পরে দুষ্কৃতীদের ধরাটাই সব নয়। আগাম ব্যবস্থা নেওয়া হবে না?”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE